বিশেষ প্রতিবেদক :
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অস্থায়ী ৮৫১ জন গেটকিপার ৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বকেয়া বেতন কবে মিলবে বলতে পারছেন না কেউই। ফলে করোনা পরিস্থিতিতে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। এ নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে তাদের পরিবারগুলোতে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্প পরিচালক ঢাকায় বদলী হয়ে যাওয়ায় এই জটিলতা হয়েছে। ঝুলে গেছে গেট কিপারদের বেতন।
জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলের লেভেল ক্রসিংসমূহের মানোন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গেটকিপার পদে অস্থায়ীভিত্তিতে চাকরি করেন ৮৫১জন। ২০১৬ সালে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে তারা পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্বে নিয়োজিত। এতোদিন প্রকল্প পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরে তাদের বেতন দেয়া হতো। কিন্তু অন্তত আট মাস আগে রাজশাহী থেকে ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ হিসেবে বদলী হয়ে চলে গেছেন তিনি। এ কারণে তাদের বেতনও বন্ধ।
এ বিষয়ে গেট কিপার রুহুল আমিন সবুজ ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে জানান, এর আগে ৬মাসের বেতন-বোনাস বন্ধ ছিল। ঢাকায় গিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও প্রকল্প পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে সমস্যার কথা তুলে ধরেন গেটকিপাররা। নানা চেষ্টা তদবিরের পর ওই টাকা পান তারা। কিন্তু এবার জানুয়ারি থেকে আবার বেতন বকেয়া পড়েছে। করোনায় সাড়ে ৮শ’ গেট কিপার পরিবারের খরচ যোগাতে পারছেন না। খুব অসহায় জীবনযাপন করছে।
গেট কিপাররা ৩মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় নিজের ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের বিভাগীয় এস্টেট অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুজ্জামান। তিনি লিখেছেন, ‘নিম্ন আয়ের লোকগুলো সেই জানুয়ারি মাস থেকে ৩/৪ মাস না খেয়ে পরিবার নিয়ে কিভাবে দিন পার করছেন আমরা কি একটু ভেবে দেখতে পারি না? আমরা যারা মাস গেলেই নির্ধারিত তারিখে বেতন পাই, তারা এসব দুর্ভাগা ফ্যামিলীগুলোর কথা ভাবতে কেন ভুলে যাই?
এ বিষয়ে পশ্চিম অঞ্চলের চীফ ইঞ্জিনিয়ার আল ফাত্তাহ জানালেন, ফান্ড ছাড় করা আছে ‘অস্থায়ী গেট কীপার প্রকল্পের’ পিডি ও ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ জনাব মোস্তাফিজুর রহমান এর অনুকুলে। উনার কথা মত ই-মেইলে মাস্টার রোলের বিল পেলেই যদি কর্মচারীদের বেতন দেয়া যায়, তাহলে এতদিন অপেক্ষার কি কারণ ছিল, সেটা বোধগম্য নয়। অনেক কর্মচারী ফেসবুক সহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের কস্টের কথা প্রকাশ করেছেন’।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূরুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘পাকশী ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার-২ জনাব আব্দুর রহীম জানিয়েছেন, তিনি সর্বোচ্চ চেস্টা করছেন; দ্রুতই এটা সমাধান হবে। চীফ ইঞ্জিনিয়ার মহোদয় এটা সমন্বয় করে দ্রুত সমাধান করবেন বলে আমাকে বলেছেন। কিন্তু এটা ত শুধু করোনার প্রব্লেম নয়, বাকী ২/৩ মাসে কি এটা সমাধান করা গেল না?। একই প্রকল্পভুক্ত পুর্ব অঞ্চলের কর্মচারীগন যদি সময়মত বেতন পান, তাহলে পশ্চিম অঞ্চলের এসব বিপদাপন্ন মানুষগুলো কেন পাবেন না?’
তবে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী আল ফাত্তাহ মোঃ মাসউদুর রহমান ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, প্রকল্প পরিচালক বদলী হয়ে যায় বেতন প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। তা সমাধানের জন্য এই মুহূর্তে ঢাকাও যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। তাই বেতন পেতে দেরি হচ্ছে। তবে চেষ্টা চলছে সমাধানের।