প্রথম অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধ কেন এখনো তাৎপর্যপূর্ণ


অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধ

১৮৩৮ সালের ১ অক্টোবর ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল জর্জ ইডেন (লর্ড অকল্যান্ড) সিমলা মেনিফেস্টো ঘোষণার মাধ্যমে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আক্রমণের কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল ভারতীয় ভূখণ্ডকে আফগানিস্তান ও তার মিত্রদের থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু ব্রিটিশরা কাবুলের শাসক দোস্ত মোহাম্মদ খান ও তার সহযোগীদের সরাতে চেয়েছিল।

আরো পরিষ্কার করে বললে প্রাক্তন আফগান বাদশাহ শাহ শুজা দুররানি এবং দেশটির প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শাহ দুররানির নাতিকে কাবুলের শাসনভার দিতে চেয়েছিল ব্রিটিশরা। ১৮০৯ সাল থেকে শাহ শুজা কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন।

যেহেতু প্রথম অ্যাংলো-আফগানিস্তান যুদ্ধ ও তার ঘটনাপ্রবাহ এবং কালানুক্রমিক বিষয়ে খুব বিস্তারিতভাবে লেখা হয়েছে, তাই এ লেখায় আমি সেসব বিষয়েই গুরুত্ব দেব, যে বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়েছে এ যুদ্ধ সম্পর্কিত অন্যান্য দলিলে যুদ্ধকালীন দিকগুলো এবং তাদের সুদূরপ্রসারী পরিণতি নিয়ে, যা আফগানদের এখনো প্রভাবিত করে। অনেক কারণেই প্রথম অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধকে (১৮৩৮-১৮৪২) আফগানিস্তানের দীর্ঘ ইতিহাসের একটি অশ্রুসিক্ত অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তত্কালীন ব্রিটিশ বৈশ্বিক আধিপত্যের বিপরীতে ১৮৩৮ সালে আফগানিস্তান ছিল বেশ ভঙ্গুর একটি রাষ্ট্র এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব গৃহযুদ্ধের পূর্ববর্তী দশকগুলোয় লোপ পেয়েছিল। দোস্ত মোহাম্মদ খানের কর্তৃত্ব কাবুল, গজনী এবং জালালাবাদেই সীমাবদ্ধ ছিল। উত্তর দিকে হিন্দু কুশ এবং আমু দরিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলগুলো ছিল স্থানীয় শাসকদের হাতে, যারা স্বায়ত্তশাসন চালাতেন। পশ্চিমে হেরাত শাসন করতেন ইয়ার মোহাম্মদ খান আলোকোজাই। দক্ষিণে কান্দাহার শাসন করতেন দোস্ত মোহাম্মদ খাঁর ভাই-বোনদের সম্মিলিত নেতৃত্ব। পূর্বদিকে পেশোয়ার (আফগান দুররানি সাম্রাজ্যের একসময়ের শীতকালীন রাজধানী) ১৮২০ সাল থেকেই ছিল শিখদের কর্তৃত্বে।

কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা মজবুত না হওয়ায় বিদেশী আক্রমণ প্রতিরোধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি বলে ১৮৩৯ সালের আগস্টে আফগানিস্তান দখল এবং পরবর্তী সময় শাহ শুজাকে কাবুল সিংহাসনে বসানোর ক্ষেত্রে ব্রিটিশদের কোনো ধরনের সম্মুখ প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়নি। আফগানদের প্রতিরোধ করতে না পারার এ ব্যর্থতা এক কথায় ব্রিটিশদের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েক গুণ। কিন্তু তাদের ধারণা ছিল না এ প্রতিরোধ করতে না পারা আফগানরাই দুই বছর পর ব্রিটিশদের সক্ষমতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

খুব সহজেই আফগান যুদ্ধে জয়ী ব্রিটিশরা এক ধরনের বায়বীয় আত্মবিশ্বাসে ভুগছিল। ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ আফগান নীতিনির্ধারকদের আফগানিস্তানের ভূ-রাজনীতি এবং সেখানকার নাগরিকদের সম্পর্কে কোনো বাস্তব ধারণা ছিল না। তারা এ সম্পর্কে জানার কোনো চেষ্টাও করেনি। ফলে তাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা জন্মেছিল এবং তারা ভেবেছিল ভারতের মতো আফগানিস্তানকেও তারা নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসবেন। ব্রিটিশদের এ ধারণা ছিল এক বিরাট ভুল।

১৮৩৮ সালে ব্রিটিশ আক্রমণ ছিল মেসিডোনিয়ার আলেকজান্ডারের আফগান আক্রমণের পর প্রথম কোনো বিদেশী শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্তের ঘটনা। পরবর্তী ২০০ বছরের আফগান ইতিহাসে এ রকম আক্রমণের নজির আছে আরো তিনটি। ১৮৭৮ সালে দ্বিতীয়বার ব্রিটিশ আক্রমণ, ১৯৭৯ সালে রাশিয়ার আক্রমণ এবং সর্বশেষ ২০০১ সালে আমেরিকান আক্রমণ। ইতিহাসের এ চারটি আক্রমণের ঘটনায় চারটি বিষয়ের মিল ছিল। প্রথমত আক্রমণকারী শাসক গোষ্ঠীর কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই আফগানিস্তান দখল, দ্বিতীয়ত দখল পরবর্তী সময়ে আফগানে একপ্রকার অচলাবস্থা তৈরি, তৃতীয়ত ধীরে ধীরে মুখ বাঁচানোর চেষ্টা বাতিল করা এবং সর্বশেষ দখলকারীর জন্য আফগানিস্তান একটি আর্থিক দায় হিসেবে আবির্ভূত হওয়া।

১৮৪১ সালে ব্রিটিশ দখলদারিত্বের দুই বছর পর আফগানরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু করে দখলদারদের বিতাড়িত করতে। তাত্ক্ষণিক সমাধান হিসেবে সামরিক পন্থা অবলম্বন করলেও আশানুরূপ ফলাফল অর্জিত হয়নি। পরে ব্রিটিশরা ষড়যন্ত্রের পথে পা বাড়ায় এবং আফগান জাতিগোষ্ঠীর ভেতরে ভাঙন তৈরির চেষ্টা করে। অনেক আফগান শাসক ও নেতাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়। এ পথেও তারা ব্যর্থ হয় এবং নিজেদের খুবই অনিরাপদ ও হতাশাজনক পরিস্থিতিতে আবিষ্কার করে। ১৮৪২ সালের জানুয়ারিতে কাবুল থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে কাবুলে দায়িত্বরত ১৬ হাজার ৫০০ ব্রিটিশ সেনার মধ্যে কয়েকশো সেনা কেবল ভারতে ফিরতে পেরেছিল।

ইতিহাসবিদদের মাঝে একটা সাধারণ ধারণা প্রচলিত আছে এবং তারা মনে করে প্রথম অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধে ব্রিটিশরা কৌশলগত পরাজয় বরণ করে, যা উনিশ শতকে এশিয়ায় এ ধরনের প্রথম ঘটনা। তবে ব্রিটিশরা এ কৌশলগত পরাজয়ের জন্য এ যুদ্ধ সম্পর্কিত অনেক তথ্য ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছিল। তারা বরং বলেছিল আফগান যোদ্ধারা ভারতে ফিরে আসার সময় কতটা নির্দয়ভাবে ব্রিটিশ সেনাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল। কিন্তু আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সেনাদের হত্যা, নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধের তথ্যটি কখনই উল্লেখ করা হয়নি। তাই বলা যেতেই পারে ব্রিটিশ লেখনি তাদের বন্দুকের থেকে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতি করেছে আফগানদের।

আফগানদের দৃষ্টিকোণ থেকে স্থানীয় মানুষ মনে করে কোনো ব্রিটিশ শান্তি মিশনের সদস্যদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালানো হয়নি। ব্রিটিশরা আফগানিস্তান দখল করেছিল এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। আসলে বেশির ভাগ নিহত সেনাই আফগানিস্তানে সক্রিয় যুদ্ধে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের সেনাপতিরা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে তারা আফগানদের হত্যা করেছিল। অধিকাংশ আফগান মনে করে যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশরা যে ভাগ্য বরণ করেছে সেটা তাদের অবৈধ ও অন্যায় ঔপনিবেশিকতার বিপরীতে ন্যায্য।

আফগানদের হাতে রাজনৈতিক কর্মকর্তা উইলিয়াম ম্যাকনাগটেন ও আলেকজান্ডার বার্নস হত্যার বিষয়ে ব্রিটিশ সমালোচনা উদ্দেশ্যমূলক কোনো তদন্তের পক্ষেও সমর্থন দেয় না। শাহ শুজাকে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করিয়ে বহু আফগান নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের দায় নিয়ে ম্যাকনাগটেন স্বর্গের পথে পা বাড়িয়েছেন। বার্নসের অপরাধগুলোও কোনো অংশে কম না। বার্নস অবশ্য ১৮৩০ সালের গোড়ায় আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন এবং পরবর্তী সময় ম্যাকনাগটেনের স্থলাভিষিক্ত হন সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে। তার অবশ্য আফগান সংস্কৃতির প্রতি কোনো টান ছিল না এবং কাবুলে বহু নারীর সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ আদতে যুদ্ধের ইতি টানতে পারেনি। ১৮৪২ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দুটি দল আগের শীতে তাদের চরম পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এবং তাদের চূর্ণ গৌরব ফিরিয়ে আনতে কাবুল আক্রমণ করে। একটি দল এসেছিল কান্দাহার এবং আরেকটি এসেছিল জালালাবাদ থেকে। চরম ঔপনিবেশিক আচরণ দেখিয়েছিলেন তারা। কাবুলের প্রায় অধিকাংশ এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনী, এমনকি তত্কালীন সময়ে এশিয়ার সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি চারছাট্টাও ধ্বংস করেছিল তারা। পরে তারা আরো দক্ষিণে ছারিকার ও ইস্তালিফের দিকে অগ্রসর হয়, যেখানে কাবুল থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছিল।

ইস্তালিফে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বৃহৎ গণহত্যা পরিচালনা করে। তারা প্রতিটি আফগান যুবককে হত্যা করেছিল। শত শত আফগান যুবতীকে ধর্ষণ করেছিল এবং পুরো যুদ্ধকালীন সে সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছিল। আর্নল্ড ফ্লেচার তার ১৯৬৫ সালের হিস্টরি অব আফগানিস্তান বইতে আরো স্পষ্ট করে তার উল্লেখ করেছেন। যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ধর্ষণকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ব্যবহার করেছিল বলা হলে মোটেই অন্যায় হবে না। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাবুল ধ্বংসের কথা অনেকে জানলেও ছারিকার এবং ইস্তালিফে ব্রিটিশ ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।

জানুয়ারিতে আফগান উপজাতিরা যারা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেছিল, তাদের সঙ্গে পরবর্তী সময় যে ব্রিটিশ সেনাদলটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের মধ্যে মিল খুঁজে বের করাটা বোকামি ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু সত্যটা ব্রিটিশদের কাছে খুব সামান্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আফগানিস্তানে আরেকটি শীতকাল কাটানো তাদের জন্য খুবই ব্যয়বহুল হওয়ায় তারা ১৮৪২ সালের অক্টোবরে খাইবার প্রণালি দিয়ে ভারত ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এভাবে প্রথম অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধ করুণ পরিণতি মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিশেষ করে আফগানদের জন্য।

ব্রিটেনের কৌশলগত পরাজয়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের শেষ হলেও তা আফগান ইতিহাসে ক্ষত তৈরি করে। এ যুদ্ধে ১০ হাজার প্রাণহানি হয় এবং আফগান বাজার ও ফসল ধ্বংস হয়ে যায়। এ যুদ্ধের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দশকের পর দশক সময় লেগেছিল আফগানদের। যুদ্ধের পর আফগানদের কিছু স্টেরোটাইপ উপাধি দেয়া হয়। যেমন বর্বর, অবিশ্বস্ত, উচ্ছৃঙ্খল ও নির্দয়। এমনকি যুদ্ধের শত বছর পরেও ব্রিটিশদের ছড়ানো মিথ্যাকেই আমেরিকানরা এখনো বিশ্বাস করে। তারা মনে করে আফগানরা বিদেশীদের ঘৃণা করে বিশেষ করে অমুসলিমদের।

আফগানিস্তান আক্রমণের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশরা আফগানদের চিরন্তন শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধের আগে ব্রিটিশরা আফগানিস্তানের মানুষের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিল বটে। যুদ্ধের আগে অসংখ্য ব্রিটিশ আফগানিস্তান ভ্রমণ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ মাউন্ট স্টুয়ার্ট এলফিনস্টোনের ১৮০৯ সালে দুররানি সাম্রাজ্যের শীতকালীন রাজধানী পেশোয়ারে শাহ শুজার দরবার ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য। সেখানে তাকে দুররানি সম্রাটের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। চার্লস ম্যাসন এবং আলেকজান্ডার বার্নস ছিলেন উল্লেখযোগ্য ব্রিটিশ কর্মকর্তা, যারা যুদ্ধের আগে আফগানিস্তান সফর করেছিলেন। যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের আফগানিস্তান ভ্রমণ এক প্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

পরবর্তী দশকে আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের খেলায় মেতে ওঠে ব্রিটেন ও রাশিয়া। ফলে আফগানিস্তান রাশিয়ানদের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেয়। অনেক ব্রিটিশ ও রাশিয়ান নাগরিক পরবর্তী সময় আফগানিস্তান ভ্রমণের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, কিন্তু তাদের গুপ্তচর সন্দেহে আফগানিস্তানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সার্বভৌমত্ব রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে আফগানরা ব্রিটিশ ও রাশিয়ানদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। ব্রিটিশদের বিষয়টি একপ্রকার অবশ্যম্ভাবী হয়ে গিয়েছিল, কেননা ১৮৩৮ থেকে ১৯১৯ সাল এ আশি বছর তারা তিনবার আফগানিস্তান আক্রমণ করেছিল।

আফগানরা ব্রিটিশদের সন্দেহের চোখে দেখলেও অন্য ইউরোপিয়ানদের বিশেষ করে জার্মান এবং অস্ট্রেলিয়ানদের অবাধে চলাফেরা করার সুযোগ ছিল। এক শতাব্দী আগে একজন ব্রিটিশ এজেন্ট জার্মান ও অস্ট্রেলিয়ানদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা প্রায় স্বাধীনভাবে বাজারে যেতে পারতেন, কাবুলে ব্রিটিশদের তুলনায় তাদের অনেক সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করা হতো। ব্রিটিশদের বরং দেখা হতো অপরাধী হিসেবে।’

ব্রিটিশদের পুতুল সরকার প্রধান ‘শাহ শুজা’ পরবর্তী সব বিদেশী সরকারের মনোনীত শাসকের পরিচয় হিসেবে ব্যবহূত হতো। ১৯৮০ দশকে সোভিয়েত মনোনীত বাবরাক কারমাল আফগানদের কাছে ‘শাহ শুজা দ্য সেকেন্ড’ নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তী সময় শতাব্দীর শুরুতে আমেরিকানরা আফগানিস্তান আক্রমণ করে তাদের মনোনীত হামিদ কারজাইকে ক্ষমতা প্রদান করে। হামিদ কারজাই পরিচিত ছিল ‘শাহ শুজা দ্য থার্ড’ নামে। কারজাই দরজার পেছনে আমেরিকানদের সঙ্গে কাজ করলেও জনসম্মুখে সবসময় আমেরিকানদের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। কারজাই আসলে কখনই চাননি ইতিহাস তাকে আরেকজন ‘শাহ শুজা’ হিসেবে স্মরণ করুক।

আফগানিস্তানে আজ পর্যন্ত কোনো বিদেশী নাগরিককে এতটা সন্দেহের চোখে দেখা হয় না, যেভাবে এখনো ব্রিটিশদের দেখা হয়। এমনকি সোভিয়েত এবং আমেরিকানরা দীর্ঘ ২৮ বছর তাদের শাসন করার পরও তাদের নাগরিককে তারা এতটা ঘৃণা করে না যতটা ব্রিটিশদের করা হয়। ব্রিটিশরা এখনো আফগানিস্তানের অপছন্দ ও অবিশ্বাসের তালিকায় সবার ওপরে অবস্থান করছে। এটি একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত এবং এভাবে অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধ আফগান-ব্রিটিশ সম্পর্কের ওপর দীর্ঘ কালোছায়া হিসেবে বিরাজ করছে।

 

আরউইন রাহি: স্বাধীন গবেষক ও লেখক; আফগানিস্তানের পারওয়ান গভর্নরের সাবেক উপদেষ্টা।

 

 


শর্টলিংকঃ