ইউএনভি ডেস্ক:
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে ক্রমেই কমছে রাজস্ব আহরণ। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এ স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা কম হয়েছে। স্থলবন্দরসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবকাঠামো সুবিধার ঘাটতি আর অনিয়মের কারণে রাজস্ব আদায়ে এ ঘাটতি। তবে এটি শিগগিরই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী কাস্টমস কর্মকর্তারা।
বেনাপোল স্থলবন্দরে রাজস্ব শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৪২৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে ৫৫৩ কোটি ৮০ লাখ, আগস্টে ৫০৬ কোটি ২৯ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৪০৫ কোটি ১০ লাখ, অক্টোবরে ৪২৮ কোটি ৩১ লাখ ও নভেম্বরে ৫৩৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে গত পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ২৫২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ফলে প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব ঘাটতি থেকে গেছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এ স্থলবন্দরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা এবং এর আগের অর্থবছর রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়। সেই হিসেবেই স্থলবন্দরে ৫ হাজার কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা। পণ্য আমদানির বেলায় এ স্থলবন্দরে চলে নানা অনিয়ম। কখনো পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা, আবার ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য এনে সরকারের শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়। এতে শুল্ক আয় কমে যাচ্ছে। তবে বৈধভাবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করায় রাজস্ব ঘাটতির কারণ বলে মনে করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, দেশের ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১৩ বন্দরের অন্যতম বেনাপোল স্থলবন্দর। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পণ্য আমদানির জন্য দেশে যতগুলো বন্দর রয়েছে, তার মধ্যে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর হলো বেনাপোল। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের অন্য যেকোনো বন্দরের তুলনায় উন্নত। বেনাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। সে কারণে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ পণ্য এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, সব বন্দরে আমদানি পণ্যের ওপর রাজস্ব পরিশোধের নিয়ম এক হতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যে পণ্যের ওপর রাজস্ব ৪ ডলার, বেনাপোল বন্দরে ওই একই পণ্যের ওপর সাড়ে ৪ ডলার শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। অন্যদিকে স্থলবন্দরের ধারণক্ষমতা ৩৮ হাজার টন। কিন্তু এখানে সব সময় পণ্য থাকে কমপক্ষে দেড় লাখ টন। জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে। খোলা জায়গায় থেকে পড়ে থেকে মূল্যবান পণ্যসামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বৈধ সুবিধা পেলে এ স্থলবন্দর থেকে বর্তমানে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে, তখন তার দ্বিগুণ আয় হবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আবদুল জলিল বলেন, জায়গা সংকটে বর্তমানে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ ও উন্নয়নকাজ চলছে। কাজ শেষ হলে বেনাপোল স্থলবন্দর একটি আধুনিক স্থলবন্দরে রূপান্তরিত হবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, বেনাপোল বৃহৎ স্থলবন্দর হলেও এর কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না।
বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার বেলাল হুসাইন চৌধুরী এ ঘাটতি পূরণের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ স্থলবন্দরে কাস্টমস আইন এবং নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে প্রয়োগের কারণে কিছু আমদানিকারক এ স্থলবন্দর ছেড়ে চলে গেছেন। আবার উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্যে আমদানি কম হয়েছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বৈধ সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
