সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি:
গেল সপ্তাহে প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করে নাটোরের সিংড়ার সুরজিনা খাতুন (১৯)। তবে সম্ভব হয়ে উঠছিলো না টাকার অভাবে। বাড়ি থেকে স্বর্ণের কিছু নিয়ে বের হতে বলে প্রেমিক। যা কোনোভাবেই যোগাড় করতে পারছিলো না সুরজিনা। অবশেষে বৃহস্পতিবার (০৯ মে) তার চোখ পড়ে- মামাতো বোন জুঁইয়ের নাক ও কানে থাকা স্বর্ণের নাকফুল ও দুলের দিকে। সুযোগ বুঝে গোবর কুড়ানোর নাম করে বাড়ির পাশের বাকাই বিলে নিয়ে যায় জুঁইকে। সেখানে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে ছিনিয়ে নেয় দুল ও নাকফুল।
সিংড়া উপজেলার ছাতারদিঘী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে বৃহস্পতিবার (০৯ মে) সকালের দিকে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে। ঘটনা জানাজানি হলে ওইদিন বিকেলে সুরজিনা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে সিংড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে স্থানীয়রা তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এভাবে শিশু জুঁইকে হত্যার বর্ণনা দেয় সুরজিনা।
শুক্রবার (১০ মে) দুপুরে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সিংড়া থানা পুলিশ তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। গ্রেফতার সুরজিনা রামনগর গ্রামের মজিবুর রহমানের মেয়ে। আর সুরজিনার কথিত প্রেমিকের কোনো পরিচয় কেউ বলতে পারছেন না। প্রেমিকের সন্ধান করতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার জুঁই ঘাতক সুরজিনার আপন মামা হারেজ আলীর মেয়ে। সে পাচুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী ছিল। পুলিশ শিশুটির লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।
জুঁইয়ের পরিবারের সদস্যরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে জুঁইকে ‘ভুলিয়ে-ভালিয়ে’ গোবর কুড়াতে নিয়ে যায় প্রতিবেশী ফুফাতো বোন সুরজিনা। দুপুরে জুঁইয়ের বাবা বাড়িতে এসে মেয়ের খোঁজ করে। তাকে না পেয়ে সুরজিনা বাড়িতে এসেছে কিনা খোঁজ নেন তিনি।
জানতে পারেন অনেক আগেই সুরজিনা বাড়িতে এসেছেন। জুঁইয়ের ব্যাপারে সুরজিনাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, জুঁই তার সঙ্গে ফেরেনি। কিছুক্ষণ পরই সুরজিনা ভ্যানে করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিংড়া শহরের দিকে চলে যায়।
পরে নিহতের বাবাসহ প্রতিবেশীরা বাকাই বিলে খোঁজ করতে গিয়ে বিলের পাড়ে মেয়ের গামছা দেখতে পান। বিলের পাড়ে পানি-কাঁদার মধ্যে জুঁইয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।
সিংড়া থানার এসআই পলাশ হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেছে সুরজিনা। এতে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার টাকা যোগাড় করতে হত্যা করে সোনার দুল ও নাকফুল নেওয়অর কথা জানিয়েছে। আদালতে তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হবে।
