বাঘায় গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আমের কড়ালি


আমানুল হক আমান, বাঘা:

ক’দিন আগেও গাছের শাখা-প্রশাখায় ছিল আমের মুকুল। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা ছিল প্রকৃতি। গাছের চারপাশে মৌমাছির গুনগুন যেন নিমন্ত্রণ দিচ্ছিল আমের মৌসুমের। এক মাস ব্যবধানে গাছজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজ আমের কাঁচা কাঁচা কড়ালি(গুঁটি)।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার একটি গাছও মিলবে না, যে গাছে আমের কড়ি নেই। উপজেলার গ্রামে গিয়ে যায়, গ্রামে আমের বাগানই বেশি। রাস্তার চারপাশে যতদূর চোখ যায়, কেবলই মন জুড়ানো আমগাছ। এ উপজেলায় প্রতিবছর আমের ব্যাপক আবাদ হয়। মিষ্টি, স্বাদ, গুণ ও আকারে রাজশাহীর জেলার মধ্যে সেরা বাঘা উপজেলার আম।

উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গাছের শাখে শাখে এখন দানা বেঁধেছে গুটি। আর সেই গুটিতেই স্বপ্ন বাঁধতে শুরু করেছেন কৃষকরা। চলছে সাধ্য অনুযায়ী পরিচর্যা। চৈত্র-বৈশাখেই ফলবতী হয়ে উঠবে গাছ। জৈষ্ঠেই পরিপূর্ণ আমের দেখা মিলবে বাজারে। কৃষককূলে এখন চলছে তারই প্রস্তুতি।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- গাছ, পাতা, মুকুল, গুটি আর আম নিয়ে বাঁধা নানান স্বপ্নের কথা। রুস্তমপুর গ্রামের আম ব্যবসায়ী নুহু আলম সরকার জানান, গত বছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি কম হওয়ায় প্রচন্ড খরতাপে গাছেই অনেক আম ফেটে গিয়েছিল। এবারও প্রতিটি গাছে মুকুল থেকে গুটি ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন হবে।

আড়ানী গোচর গ্রামের আম চাষি শহিদুল ইসলম জানান, বাঘা-চারঘাটসহ রাজশাহীর আমের ব্যবসা সফল করতে এবার স্থানীয় এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন।

আড়ানী পাঁচপাড়া গ্রামের আম চাষি আবদুল মালেক জানান, বড় ধরনের কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে লাভের মুখ দেখবেন বাঘার আম চাষিরা। এবার ৯০ শতাংশ আমগাছে মুকুল এসেছিল। সেই মুকুল থেকে কড়ি বাঁধতেও শুরু করেছে। বর্তমানে আমের প্রায় আড়াইশ’ জাতের মধ্যে আগাম জাতের ও মধ্যম জাতের আমগাছে গুটি এসে গেছে। দেরিতে গুটি আসবে ফজলি, আশ্বিনাসহ বেশ কয়েকটি জাতের।

তিনি বলেন, আমবাগানে সারাবছর কোনো কাজ থাকে না। তবে মুকুল আসার আগে থেকে গাছের আম নামানো পর্যন্ত এর পরিচর্যা করতে হয়। ভালো ফলনের জন্য আমচাষিরা উঠে পড়ে লাগেন। তাছাড়া বাগান ইজারা নিয়েছেন এমন ব্যবসায়ীরা আরো বেশি মনোযোগী হন পরিচর্যায়।

উপজেলার আমচাষি বাদশা হোসেন জানান, আম চাষ এবং ব্যবসা উভয়ের সঙ্গেই তিনি সরাসরি যুক্ত। মূলত পাতা কেনা দিয়েই শুরু হয় আমের কেনা বেচা। বেশি পাতাওয়ালা গাছে ফলন ভালো হবে ধরে এ পাতা কেনা বেচা হয়। স্থান, ফলনের ইতিহাস আর সম্ভাব্য পরিমাণের ওপর অনুমান করে ব্যবসায়ীরা লোকজনের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ বছর চুক্তিতে গাছ কেনেন। তারপর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তিনি সেই গাছের মালিক। ফল হলেও তার, না হলেও তার।

তিনি জানান, গাছ প্রতি এজন্য ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় মালিককে। অবশ্য যুগ যুগ থেকে পাতা কেনার এ প্রথা চলে এলেও এখন অনেকেই ভিন্ন নীতিতে ব্যবসা করেন। আগাম পাতা কেনায় ক্ষতির শঙ্কা থাকে। তাই ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীর নিজেরাই বাগান গড়ে তুলেছেন। চাষও করছেন নিজে।

আড়ানীর আম ব্যবসায়ী নওশাদ আলী জানান, আগে আমের অন ইয়ার অফ ইয়ার থাকতো। অর্থাৎ এক বছর আম হলে অন্য বছর হতো না। কিন্তু ঋতু বৈচিত্রে ও চাষ পদ্ধতি পরিবর্তনে এখন প্রতি বছরই আমের ভালো ফলন পাওয়া যায়। এজন্য সারাবছরই আম গাছের পরিচর্যা করতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লা সুলতান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে ছত্রাকজনিত রোগে আমের কড়ি আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে কড়িতে (গুটি) রূপান্তর হওয়ার পর ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। উপজেলায় চলতি মৌসুমে আম চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে।

খোঁজ নিযে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘায় প্রায় আড়ইশ’ জাতের আম উৎপন্ন হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপলি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপুরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আম বেশি চাষ হয়েছে।


শর্টলিংকঃ