বিনা চিকিৎসায় মরছে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের শ্রমিকরা


তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

দেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থল বন্দরে কাজ করতে গিয়ে গেল দেড় বছরে অন্তত ১৫ জন শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছেন।বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অসংখ্য। কেউ কেউ আবার পঙ্গু হয়ে গেছেন চিরদিনের জন্য। তাদের স্বাস্থ্যসেবা বা চিকিৎসার কোনো  সুব্যবস্থা নেই।

এ বন্দরটিতে সব মিলিয়ে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার।এসব শ্রমিকরা নিয়মিত বন্দর এলাকায় গাড়ি থেকে পণ্য লোড-আনলোডের কাজ করে।সোমবার (২৯ এপ্রিল) সোনামসজিদ বন্দরে গিয়ে কথা হয় শ্রমিক মহিম উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি জানান, কিছুদিন আগে বন্দরের ভেতরে ফলের গাড়ি আনলোড করার সময় হাতে ও পায়ে মারাত্মক জখম হন। পকেটে টাকা না থাকায় একদিন পরে কানসাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে আবারো এখানে কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি।

একই কথা জানালেন শ্রমিক বশির উদ্দীন। তিনি জানান, ভারতীয় গাড়ি থেকে টাইলস আনলোড করার সময় পা ভেঙে যায় তার। নিজ খরচে ও শ্রমিক সংগঠনের দেয়া সামান্য কিছু অর্থে প্রায় ১ বছর চিকিৎসা নিয়ে আবারো কাজে যোগ দেন তিনি। এছাড়া বাইতুলসহ আরও প্রায় অর্ধশত শ্রমিক বিভিন্নভাবে আহত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে আছেন।

আহত শ্রমিকদের দাবি- সরকারের পক্ষ থেকে বন্দর এলাকায় একটি মেডিকেল টিম নিয়োগ দেয়া হলে অনেক শ্রমিককে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ দিতে হবে না। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আহতরা অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসা পেলে মৃত্যুর মতো ঘটনা অনেকাংশেই কমে আসবে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর শ্রমিক সমন্বয় কমিটির যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক মো. লুতফর রহমান জানান, বর্তমান সময়ে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে শ্রমিকদের কাজ করতে হচ্ছে। গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অসুস্থ রোগীদের বন্দর এলাকাতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলে অনেকের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দর শ্রমিক সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মুখলেসুর রহমান সরদার ইউনিভার্সাল২৪নিউজ কে জানান, বন্দরে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মারা গেছে আবদুস সালাম, এনামুল হক ডাহুক, মুরশেদ আলম, আমিরুল ইসলামসহ প্রায় ১৫ জন শ্রমিক। আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে আরও অর্ধশত। তাদের কমিটির পক্ষ থেকে আহত ও নিহত শ্রমিকদের কিছু অর্থ দেয়া হয়। যা মোটেও সন্তোষজনক নয়। এক্ষেত্রে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, সরকারি হাসপাতাল শিবগঞ্জ বাজার থেকে বন্দর এলাকার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। কোনো শ্রমিক আহত হলে হাসপাতালে নিতে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে যেকোনো মুহূর্তে চিকিৎসার অভাবে অনেক শ্রমিক মারাও যায়। স্থানীয়ভাবে একটি মেডিকেল টিম নিয়োগ দিলে বন্দর এলাকা সংশ্লিষ্টদের চিকিৎসার সু-ব্যবস্থা হত।


শর্টলিংকঃ