বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বাধা দিলে বিমানে চড়া বন্ধ: প্রধানমন্ত্রী


ইউএনভি ডেস্ক:

বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে ভিআইপি এবং ভিভিআইপিসহ সব বিমানযাত্রীকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যদি কেউ এ ক্ষেত্রে বাধা দেন তাহলে ভবিষ্যতে তার বিমান চড়াই বন্ধ হয়ে যাবে।’

বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বাধা দিলে বিমানে চড়া বন্ধ: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপত্তার যে নিয়মাবলী রয়েছে, আমাদের সব যাত্রীকে সেটা মেনে নিতে হবে।’শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দিন বিমানবন্দরের যাত্রী পরিবহন এবং মালপত্র আনা-নেয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুল প্রতীক্ষিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।তিনি একই সঙ্গে বিমানের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ড্রিমলাইনার ‘সোনার তরী’ এবং ‘অচিন পাখি’র উদ্বোধন করেন এবং বিশ্বের সব স্থান থেকে বিমানের টিকিট ক্রয়ের সুবিধা সংবলিত একটি মোবাইল অ্যাপসও অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে আমি স্পষ্ট বলতে চাই, এখানে আমাদের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, বাহিনী প্রধানগণ বা অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রয়েছেন- আপনারা যখন বিদেশে যান তখন যেভাবে নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা হয়, ঠিক সেইভাবে আমাদের বিমানবন্দরে করতে হবে এবং সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে। সেখানে কেউ কোনো বাধা দিতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন- সারা দিন আমি দেশের কাজই করি। কোথায় টুকটাক কি হয় না হয় সে খবরটা নেয়ার চেষ্টা করি। কাজেই কেউ সেখানে কোনোরকম অনিয়ম বা ব্যত্যয় ঘটালে সঙ্গে সঙ্গেই আমার কাছে খবরটা চলে আসে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী নজরদারিটা বাড়াতে হবে।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোতকাদির চৌধুরী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো ও জাইকার বাংলাদেশ অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হিতোসি হিরোকা বক্তৃতা করেন।

সিভি এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন এবং বিমানের সিইও মুকাব্বির হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে বিমানের নির্মাণাধীন ৩য় টার্মিনাল এবং সিভিল এভিয়েশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা প্রদর্শিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিনবাহিনী প্রধানগণ, সরকারের উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশি কূটনিতিকবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ভাষণে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনরায় উল্লেখ করে বলেন, ‘আজকে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। যেই দুর্নীতি করবে তাকে কিন্তু ছাড়া হবে না। সে যেই হোক না কেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিন-রাত পরিশ্রম করব দেশের উন্নয়নের জন্য, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করবে আর দেশের উন্নয়নের কাজ সঠিকভাবে হবে না। সেখান থেকে কেউ অসাধু উপায়ে নিজের ভাগ্য গড়তে যাবে। সেটা কখনও সম্ভব হবে না। এটা আমরা কখনও বরদাস্ত করব না।শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এবং মাদকমুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই।’

তিনি সময় মতো বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনালের কাজ শেষ করারও তাগিদ দেন।’৯৬ সালে সরকার গঠনের পরই বিমানের আধুনিকায়ন এবং সম্প্রসারণে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার উদ্যোগ তুলে ধরেন।তিনি বলেন,‘অনেকগুলো বেসরকারি সংস্থা এখন বিমান চালাচ্ছে, হেলিকপ্টারকেও বেসরকারি খাতে আওয়ামী লীগ সরকার সুযোগ করে দিয়েছে। পাশাপাশি আমরা চাই বিমানেরও নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হলে একদম বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়, তাহলে সকালে এক রকম বিকালে অন্য রকম তারা করতে পারে।’আরও ৩টি বিমান আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কানাডা থেকে নিয়ে আসা ওই তিনটি বিমানের সঙ্গে আরও কিছু বিমান যুক্ত করা হবে যাতে দেশের সব বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।’

কক্সবাজার বিমানবন্দরকেও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাতে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে এবং পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে যত বিমান যাতায়াত করে তাদের একটা ‘হাব’ হতে পারে কক্সবাজার। সেখানে রিফ্যুয়েলিংসহ কয়েকদিন যাতে কেউ প্রয়োজনে বিশ্রাম নিতে পারে। পর্যটন ছাড়াও আরও অনেকভাবে এই কক্সবাজারকে যেন ব্যবহার করতে পারি। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।ড্রিমলাইনার দুটি নিজস্ব অর্থে এবং রিজার্ভের টাকাতেই ক্রয় করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অর্থাৎ এগুলো ক্রয় করার মতো সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানে অনেক সমস্যা ছিল। এগুলো ধীরে ধীরে খুঁজে বের করতে হয়েছে এবং সমাধান করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব কোনো কার্গো বিমান না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাজেই কার্গো বিমান আমাদের প্রয়োজন। ওই ৩য় টার্মিনালের সঙ্গে অত্যাধুনিক কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে। যাতে আমাদের মালামাল প্রেরণ বা আমদানি-রফতানি ব্যবসার সুবিধা হয় এবং এগুলো আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে কার্গো ভিলেজের সঙ্গে আমরা দুটি কার্গো বিমানও ক্রয় করব। কারণ কার্গো বিমান ছাড়া বিমান লাভজনক হবে না।’ এ সময় তিনি বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে গুরুত্বারোপ করে বিমানবন্দরে বিদেশিসহ প্রবাস ফেরত বাংলাদেশিদের আগমনের সময়কার নানা হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেও সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী বিমান নিয়ে অতীতের নানা সমস্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘সিট খালি অথচ টিকিট নাই বা এ রকম বহু কিছু হতো।’বিমানে চোরাচালানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এক সময় ‘বিমানকে স্বর্ণ প্রসবা’ আখ্যায়িত করেও এর অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে এগুলোও বন্ধ করার নির্দেশ দেন। যাতে করে বিমানের সেবা আন্তর্জাতিকভাবে বৃদ্ধি পায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে আমরা বিমানের যাত্রীসেবা আরও অন্যান্য দেশে বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমরা সে ক্ষেত্রে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কোর্ট শেয়ারিংয়ের মধ্যমে অনেকগুলো গন্তব্যে আমাদের যাত্রী পাঠাতে পারি। সেটাও আমরা ভবিষ্যতে করব। শুধু বিমান ক্রয় নয়, এটা যেন যথাযথভাবে চলে এবং বিমানের যাত্রীসেবা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদেরও তিনি যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘যাত্রীদেরকেও মনে রাখতে হবে যেই বিমানটা আমাদের নিজেদের, নিজস্ব অর্থে কেনা কাজেই তার রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’প্রধানমন্ত্রী ৩য় টার্মিনাল নির্মাণ হলে দেশের বিমানের যাত্রী পরিবহন পরিসর আরও বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে একে আমাদের ‘অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের একটি সূচক’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যে শিশুটা জন্মগ্রহণ করবে সেও যেন তার ভবিষ্যৎটা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।’তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি কিন্তু এখানেই থেমে থাকব না। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ।’


শর্টলিংকঃ