মান্দায় ল্যাম্পিস্কিনে আক্রান্ত দুই সহস্রাধিক গরু


মেহেদী হাসান,

নওগাঁর মান্দায় ল্যাম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আক্রান্ত গরুর গায়ের মাংস খসে পড়া, পা ফুলে উঠা, গায়ের বিভিন্নস্থানে ফোসকার মতো গুটি, গলায় পানি জমে যাওয়াসহ এ পর্যন্ত ২ হাজার তিনশ ৫৭ টি অসুস্থ এবং ৩-৪ টি মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে খামারি এবং গরুপালনকারীরা আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

ছবি: ল্যাম্পিস্কিনে আক্রান্ত একটি গরু

এক গরু পালনকারী জানান, গায়ের চামড়ার নিচে তিন-চারদিন আগে গুটি দেখা দিয়েছিল। কিন্তু বুঝতে পারিনি। মাংস খসে পড়ার পর বুঝতে পেরেছি।

কালিকাপুর ইউনিয়নের সাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তারসহ অন্য মানুষেরা কবিরাজী চিকিৎসা দিচ্ছে এবং হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা কোনো ইনজেকশনের নাম এবং দাম জানিনা। ডাক্তাররা ২ থেকে ৪ হাজার টাকা গরুপ্রতি আদায় করে নিচ্ছে। উপজেলা পরিষদ থেকে আমাদের কোন সাহায্য বা পরামর্শ দেওয়ার জন্য কেউ আসেনি।

এছাড়াও, একাধিক খামারি ও গরুপালনকারীরা জানান, রোগের শুরুতেই গরু চলাফেরা এবং খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। পা ফুলে উঠেছে, গলার কাছে পানি জমছে এবং সারাগায়ে গুটি গুটি দাগ দেখা গেছে। সেইসাথে পায়ে পচন ধরে মাংস খসে খসে পড়ে যাচ্ছে। বিক্রি করতে গেলে কেউ গরু কিনতে চাচ্ছে না।

চিকিৎসার কথা বললে তারা বলেন, বালি গরম করে আক্রান্ত স্থানে সেঁক দিতে হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য সরকারী ডাক্তার আসেনি। স্থানীয়ভাবে যেসব ডাক্তারের দেখা পাচ্ছি তাদের দিয়ে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। অল্পদামের ওষুধ বেশি দামে বিক্রি করছে। মানুষের ডাক্তাররা পশুর চিকিৎসা করছে। প্রতিটি গরুর পেছনে ২ হাজার থেকে ৪ কিংবা ৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আমরা খুব বিপদে আছি।

স্থানীয় পশু ডাক্তার বুলবুল ইসলাম বলেন, ল্যাস্পি স্কিন ডিজিজের স্থায়ী কোন চিকিৎসা নেই। আমরা ব্যাথানাশক ওষুধ খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। গরুর গায়ে মশা- মাছি যেন না পড়তে পারে সেজন্য বলছি। আক্রান্ত স্থানে বালি- লবনের সেঁক দিতে বলছি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিমাণ্য চন্দ্র বলেন, এ পর্যন্ত ২৩৫৭ টি গরু অসুস্থ এবং ৩টি গরু মারা গেছে। যে তিনটি গরু মারা গেছে সেগুলো এই রোগে যায়নি। অন্য কোন রোগ ছিল। তাছাড়া এ রোগে গরু মারা যায় না।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, আমি উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাকে সরজমিনে নির্দেশ দিয়েছি এ বিষয়টি দেখার জন্য। গরুর এ সমস্যা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। তাকে বলেছি আপনি দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে জেলা পর্যায়ে যোগাযোগ করে এটা একটি সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। তাকে নির্দেশ দিয়েছি খুব তাড়াতাড়ি একটা ফলাফল দেবার জন্য।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, গরুর লাম্পিস্কিন ডিজিজ একটি ভাইরাল ডিজিজ। মানুষের যেমন পক্স হয় গরুর এটি একটি রোগ। এটি সাধারণত আমাদের দেশে সর্বপ্রথম এসেছে। ছোঁয়াছে রোগ হিসাবে এটি ছড়াচ্ছে। কিংবা চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত একটি সিরিঞ্জ আরেকটি গরুকে ব্যবহার করলে ছড়াতে পারে। এ রোগে গরু মারা যাবার চিন্তার কোন কারণ নেই। প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যাথার ট্যাবলেট খাওয়ালেই এবং যত্ন নিলেই গরু সুস্থ হয়ে উঠবে।


শর্টলিংকঃ