মোদিকে ‘এক্সপায়ারি বাবু’ বললেন মমতা


সারাদুনিয়া ডেস্ক:

পশ্চিমবঙ্গের দুই জেলায় বুধবার (৩ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন শিলিগুড়ি এবং কলকাতায় জনসমাবেশ মাতালেন। অপরদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় তার ভাষণে উচ্ছ্বসিত হলেন কোচবিহারবাসী।

তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বক্তব্যের প্রথমেই বলেন, ‘আমি আরও একঘণ্টা আগে এখানে আসতে পারতাম। কিন্তু শিলিগুড়িতে মোদি ভাষণ শেষ করে যতক্ষণ না কলকাতায় আসছে ততক্ষণ আমার প্লেন আকাশেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। ওনার (মোদি) নিরাপত্তা দরকার বাকি আর কারও নিরাপত্তার দরকার নেই। তাদের কোনো সময়েরও দাম নেই। উনি আরও নিরাপত্তা নিক। নিরাপত্তার সাথে ঘর সংসার করুক। তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলে নিরাপত্তা নেওয়ার মানে কি?’

তিনি বলেন, ‘রাজ্যে এসে এক্সপায়ারি বাবু মিথ্যা কথা বলেছে। বলে রাখি, আজ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আমি এক্সপায়ারি বাবু বলেই ডাকবো। আমি মোদি বাবুকেই এক্সপায়ারি বাবু বলছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি তার এক্সপায়ারি চাই না। কিন্তু তার সরকারের এবারেই এক্সপায়ারি হয়ে গেছে। সেজন্য আমি ওনাকে এক্সপায়ারি বাবু বলে ডাকবো। উনি আজকে রাজ্যে এসে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নাকি গরিবদের জন্য কিছুই করে না। রাজ্যের কোনো খবর রাখেন না উনি (মোদি)। এদিকে নিজেকে দেশের চৌকিদার বলে। এই চৌকিদার বড় মিথ্যাবাদী। ৫৬ ইঞ্চি ছাতি নিয়ে প্রতিদিন ৫৬০টা মিথ্যা কথা বলে।’

এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দিনহাটায় এর আগেও এসেছি। এটা বাংলাদেশ বর্ডার। এর আগে দুই দেশের জ্বলন্ত সমস্যা ছিল ছিটমহল। আমি ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কথা বলে এই ছিটমহল সমস্যা সমাধান করেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গে ছিটমহলবাসীদের জন্য জমি দিয়েছিলাম। ছিটমহল শব্দটি নিঃশেষ করেছিলাম। ওই খাতে এগারোশো কোটি রুপি ব্যয় করেছিলাম। আজ আর কেউ ছিটমহলবাসী বলবে না। আজ ছিটমহলবাসী, পশ্চিমবঙ্গবাসীতে পরিণত হয়েছেন।’

এছাড়া মমতা বলেন, ‘বাম আমলে কোচবিহারে চিকিৎসার ব্যবস্থা উন্নত ছিল না। আমি আসার পর এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। কোচবিহার জেলার মানুষ তারা, তাদের জেলাতে বসেই বিনা ব্যয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন। বিনা পয়সায় এখানকার মানুষদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু করেছি। এমনকি তাদের হাসপাতালের বেড ভাড়াও লাগে না। জেলাগুলোর হসপিটালে প্রায় ৭০ শতাংশ ওষুধে ছাড় দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘রাজ্যে তাকে সহযোগিতা করছে সিপিআইএম-এর লোকেরা। বিনা পয়সায় চিকিৎসা ছাড়া আমি রাজ্যে ২রুপি কেজি চাল ৯৮ শতাংশ গরিব মানুষকে দিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ভাই-বোনেরা উন্নত হওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বিভিন্ন রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলোয় পশ্চিমবঙ্গবাসী যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছে। তাই এবারে একটি ভোটে বিজেপিকে দেবেন না। আপনাদের একটি ভোট যেন না পায় এবং এবার দিল্লি বদলে দিন।’

মমতা বলেন’ ‘আপনি কাশ্মীরের পুলওয়ামা সমস্ত ঘটনায় জানতেন। সমস্ত তথ্যই ছিল আপনার কাছে। তা সত্ত্বেও আপনি কোনো অ্যাকশন নেননি। আপনি নিজেকে দেশপ্রেমিক বলেন, আর আমরা দেশপ্রেমিক নই। দেশপ্রেম শিখতে হবে আপনার কাছ থেকে? আমরা রবীন্দ্র নজরুল গান্ধীজীকে শ্রদ্ধা করি। কারা মেরেছিল গান্ধীজীকে? লজ্জা করে দেশপ্রেমিক বলতে। আপনি যা করবেন দেশপ্রেম আর আমরা, আপনার বিরোধিতা করলেই দেশকে ভালোবাসি না?’

তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘আপনি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছেন। এয়ার স্ট্রাইক করেছেন। কিন্তু জনগণের ভোট স্ট্রাইক দেখেননি। এবার ভোট স্ট্রাইক দেখতে পাবেন। তৈরি হন। জনসমাবেশে মমতা স্লোগান দিয়ে বলেন, এবার জোড়া ফুলে ভোট দিন, বিজেপি-কে পাল্টে দিন। এই দেশটা আমাদের সবার। আপনার ব্যক্তিগত নয়। কাউকে অসম্মান করা এক্সপেরি বাবু আপনার উচিত নয়। ক্ষমতায় এলে নাকি বাংলায় এনআরসি করবেন? ক্ষমতা থাকলে করে দেখান। এটা আসাম নয়, এটা পশ্চিমবাংলা। এখানে এত সহজে পার পাবেন না।’

মমতার এদিনের দিনহাটার সভায় প্রথম থেকে শেষ অবধি মোদিই ছিল টার্গেট। তার বাইরে একটা কথাও বলেননি। এমনকি তার অপর বিরোধী রাহুল গান্ধীকে নিয়েও একটি বাক্য ব্যয় করেন নি তিনি।


শর্টলিংকঃ