মৌসুম শেষ হওয়ার পর গম সংগ্রহে খাদ্য অধিদপ্তর


মাহবুব হোসেন, নাটোর:

কৃষকরা যাতে উৎপাদিত গমের ন্যায্য মূল্য পায়, সেই লক্ষ্যে সরকার গত ১ এপ্রিল থেকে গম সংগ্রহ করার ঘোষণা দেয়। অথচ নাটোরে এখনও শুরুই হয়নি গম সংগ্রহ কার্যক্রম শুরুই হয়নি। সরকার ঘোষিত সময়ের ২৯ দিন পেরিয়ে গেলেও  ঠিক কবে থেকে জেলায় গম সংগ্রহ শুরু হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছরই কৃষকদের নামে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা খাদ্য গোডাউনে গম দেওয়ার কারনে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয় না।

যার কারনে এবারও কৃষি বিভাগ তাদের দপ্তর থেকে গম চাষীদের তালিকা তৈরী করতে অনিহা প্রকাশ করেছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর জেলায় ২১ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়। বাম্পার ফলন হওয়ায় উৎপাদন হয়েছে ৭৯হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর সরকার ২৮ টাকা কেজি দরে সারা দেশের কৃষকদের কাছ থেকে অন্তত ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করবে। ১ এপ্রিল থেকে এই গম সংগ্রহ করার জন্য সারা দেশের খাদ্য বিভাগগুলো চিঠি এবং ওয়েব সাইডে প্রকাশ করে তারা।

আর গম সংগ্রহের শেষ সময়মীসা শেষ হবে ৩০জুন। তবে চিঠিতে  জেলা এবং উপজেলা খাদ্য বিভাগ কে সংগ্রহ নীতিমালা ২০১৭ ‘ক’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংগ্রহ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার সাতটি উপজেলায় এবার গম সংগ্রহ করা হবে মোট ২ হাজার ৬৫৫ মেট্রিকটন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৩৩৭ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গায় ১০৪ মেট্রিকটন, সিংড়ায় ১১৬ মেট্রিকটন, গুরুদাসপুরে ২৩ মেট্রিকটন, বড়াইগ্রামে ৫৫৫ মেট্রিকটন, লালপুরে ৮৪৩ মেট্রিকটন এবং বাগাতিপাড়ায় ৪৬৫ মেট্রিকটন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশির ভাগ কৃষক বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মন দরে গম বিক্রি করে দিয়েছেন। যার কারণে কৃষকের ঘরে খুব একটা গম মজুদ থাকার কথা নয় -এমনটি বলছে কৃষি বিভাগ। তারপরও সরকারি আদেশ পালনের জন তারা তালিকা তৈরীর কাজ করছে।

সরেজমিনে জেলার বাগাতিপাড়া এবং সিংড়া খাদ্য গোডাউন গিয়ে দেখা যায়, শুনশান নিরবতা চলছে খাদ্য গোডাউন গুলোতে। যেখানে এই সময় শ্রমিকদের হাক-ডাকে মুখরিত তাকে খাদ্য গোডাউন গুলো সেখানে শুনশান নিরবতা।এসময় কথা হয় সিংড়া খাদ্য গোডাউন কর্মকর্তা প্রদ্যুৎ কুমার এর সাথে।

তিনি বলেন, গম সংগ্রহের সভা এখনও হয়নি। আমরা উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দের চিঠি দেরিতে পেয়ছি, যার কারণে গম সংগ্রহ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

জাতীয় কৃষক সমিতির জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল করিম বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে সময়মত গম সংগ্রহ শুরু হয়নি। যার কারনে এই সুযোগ নেয় ব্যবসায়ীরা। ফলে সরকারের উদ্দ্যেশেও বাস্তবায়ন হয় না।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার বানু বলেন, কৃষি বিভাগএখনও তালিকা শেষ করতে পারেনি। তবে প্রকৃত গম চাষীরা যাতে গমের মূল্য পায়, সেজন্য প্রতি বছর সরকার গম সংগ্রহ করে। এবারও নাটোরে গম সংগ্রহ করা হবে।

জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটির মিটিং এবং তালিকা তৈরী না হওয়ার কারণ গম সংগ্রহ করতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে খুব শিঘ্রই সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে।

জেলা খাদ্য সংগ্রহ ও ক্রয় কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শাহরিয়াজ বলেন, গম সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে জেলা কমিটির সভা করা হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রতিটি উপজেলায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তালিকা খাদ্য বিভাগে গেলেই গম সংগ্রহ শুরু হয়ে যাবে।


শর্টলিংকঃ