রাজশাহীতে অভিজাত হোটেলে প্রেমিকযুগল খুনের চার্জশিট আজ


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনালে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের তিন বছর পর রোববার (২৮ এপ্রিল) আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে যাচ্ছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত দল। আদালতে দাখিলের জন্য প্রস্তুতকৃত চার্জশিটে ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলাম।

হোটেল নাইসে খুন হওয়া দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর এই মামলায় আদালতে পৃথকভাবে দু’টি চার্জশিট দাখিল করা হবে। এর মধ্যে একটি হবে সুমাইয়াকে ধর্ষণের পর বালিশচাপা দিয়ে হত্যা এবং দ্বিতীয়টি হবে মিজানুরকে হত্যা। দু’টি চার্জশিটেই ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযুক্তরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাহাত মাহমুদ (২১), রাজশাহী কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বোরহান কবীর উৎস (২২), একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আল-আমিন (২০) ও তৎকালীন সময়ে  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপ্রার্থী আহসান হাবিব  রনি (২০) ও নাইস হোটেলের বয় নয়ন (৩২) এবং বখতিয়ার (৩২)।

এদের মধ্যে আহসান হাবিব,  বোরহান ও নয়ন গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তবে প্রস্তুতকৃত চার্জশিটে অভিযুক্ত সব আসামি বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে নেওয়া জামিনে রয়েছেন।

জানা যায়, ২০১৬ সারের ২১ এপ্রিল দিবাগত রাতে রাজশাহী নগরীর অভিজাত হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনালের ৩০৩ নম্বর কক্ষে মিজানুর রহমান ও সুমাইয়া নাসরিনকে হত্যা করা হয়।

মিজানুর রাবির ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও সুমাইয়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর সুমাইয়ার বাবা এসআই আব্দুল করিম নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছয় আসামির মধ্যে মূলহোতা চার বন্ধু

পিবিআই সূত্র জানায়, ঘটনার পরদিন ২২ এপ্রিল সকালে হোটেল কক্ষ থেকে মিজানুরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত মরদেহ (হাত পেছনে বাধা ছিল) এবং সুমাইয়ার মুখের ওপর বালিশ চাপা দেওয়া ছিল। ওই মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ।

তদন্ত শেষে তাদের দেওয়া চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছিল- সুমাইয়াকে খুন করে প্রেমিক মিজানুর আত্মহত্যা করেছেন। আর সুমাইয়ার শরীরে শুধু মিজানুরের ডিএনএ পাওয়া গেছে। যা ছিল তদন্তে গাফিলতি করে তৈরি করা একটি ‘নামসর্বস্ব’ প্রতিবেদন।

ওই প্রতিবেদনে ত্রুটি স্পষ্ট থাকায় আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআইকে। পরে ঘটনার দেড় বছর পর পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। নিহত যুবক মিজানুর ও খুনি আহসান হাবিব রনির একটি ফোন কলের সূত্র ধরে পিবিআই শনাক্ত করে চারজনকে। তাদেরকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক খুনের বর্ণনা।

গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী চার্জশিটে বলা হয়েছে, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রতিশোধ নিতে চার বন্ধু মিলে ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর তাকে ও তার প্রেমিককে হত্যা করে।

হোটেলের ওই কক্ষে মিজানুরকে প্রথমে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর  সুমাইয়াকে গণধর্ষণ করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে কৌশলে কক্ষে তালা দিয়ে কক্ষের চোরা রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যায় খুনিরা।


শর্টলিংকঃ