রাজশাহীর হরিজন পল্লীর বাসিন্দাদের খবর রাখে না কেউ


মেহেদী হাসান:

রাজশাহীতে বাড়ির ছাঁদে আতশবাজি, পটকা, সাউন্ডবক্সে ডিজে গানের মাধ্যমে বরণ করা হয়েছে ইংরেজী নববর্ষ ২০২০। আনন্দের ঘটতি হয়নি দরিদ্র দলিত, হরিজন, বেদে পল্লিতেও। সবার কথা একটাই- ‘আনন্দ করে নতুন বছর শুরু করতে চাই’।

নতুন বছরে রাজশাহীর রেলগেট হরিজন পল্লিতে শিশুদের খাবার বিতরণ
নতুন বছরে রাজশাহীর রেলগেট হরিজন পল্লিতে শিশুদের খাবার বিতরণ

আজ রাত ১২টা ১মিনিটে রাজশাহী রেলগেটের হরিজন পল্লিতে আড়ম্বর আয়োজন দেখা যায়। পল্লির ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ সবাই যেন মেতেছে নতুন বছরের আগমন উল্লাসে। এখানকার বাসিন্দারা নতুন বছরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি করে বসেন।

হরিজন পল্লির বাসিন্দা সুরেন্দ্র বাস্প বলেন, রেল লাইনের ধারে আমরা রেলওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা (হরিজন সম্প্রদায়) এখানে বসবাস করি। রাজশাহীর মাননীয় মেয়রের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছুই পাই। শহরে আমরা যখন চলাফেরা করি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পায়। নির্দ্বিধায় চলতে পারি, কোন সমস্যা হয়না। শহরের সব জায়গাতেই উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। আমরা শহরবাসী হিসেবে অনেক কিছুই পেয়েছি।

তিনি আরোও বলেন, হরিজন পল্লির অনেকে অসুস্থ হন, বাজার হাট করে নিয়ে আসতে পারি না, যখন বৃষ্টি হয় তখন রাস্তাঘাট সব ডুবে যায়। চলাচল করতে পারা যায়না এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাই, ভারী জিনিসপত্র নিয়ে আসতে সমস্যা হয়। এই ছোট্ট জায়গাতে একটি রাস্তা যদি করে দিতেন ভ্যান বা রিকশা ঢোকার জন্য এবং একটা ডেনের ব্যাবস্থা করে দিলে মেয়রের কাছে আমাদের কিছুই চাওয়ার থাকবে না।

হরিজন পল্লির সুমন আহমেদ বলেন, আমরা পূজা-অর্চনা করি এই মন্দিরে কিন্তু অবস্থা ভালো নাই। এই মন্দিরটা যদি একটু সংস্কার করে দিতেন, ধর্মীয় উপাসনালয়ে উপযুক্ত পরিবেশ দিতেন, তাহলে আমাদের ধর্মীয় কাজকর্ম করতে অনেক সুবিধা হতো।

হরিজন সম্প্রদায়ের শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তার কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন,আমাদের চিকিৎসার কোন ত্রুটি হয়না। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ভাতা হিসাবে ৫০০ টাকা করে পাই। অন্যান্য কোন বৃত্তি আমরা পাইনা। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য যে সুযোগ-সুবিধার কথা বলেছে আমরা কিন্তু তার কোনটাই পাই না।
তারা অভিযোগ তুলে বলেন, যারা শুধুমাত্র পড়াশোনা করে সেসব বাচ্চাদের ৫০০ টাকা করে দেয় কিন্তু যারা করে না তাদের কোনো সাহায্য-সহযোগিতা সরকার থেকে আসেনা। আসলেও পাইনা। বিভিন্ন কাজকর্ম শেখানো, কম্পিউটার শেখানো, হাতের কাজ এসব শেখানো এসব কোনদিন সুযোগ আসেনি।

১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলকে উদ্দেশ করে তারা বলেন, আমাদের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১০ বছর ধরে রয়েছেন। কাউন্সিলর থাকার মধ্যে উনি যে বিশেষ কিছু করেছেন তা বলা যাবে না। কারণ উনি একটা ড্রেন করে দিয়েছেন কিন্তু ড্রেনের পরিষ্কারের ব্যবস্থা নাই। ময়লায় বন্ধ হয়ে গেছে। যেই করা অবস্থা সেই। ডেঙ্গুর এতবড় প্রকোপ গেল। আমাদের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তিনি কখনো দেখতেও আসেননি। কোন ওষুধ ছিঁটানো হয়নি বা কোনো পরিষ্কার করা হয়নি। নির্বাচনের পর থেকে তিনি একবারও দেখতে আসেননি। আবারো ৩০ ডিসেম্বর চলে গেল এক বছরের মধ্যে তিনি খোঁজ-খবর নেননি।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আব্দুস সোবাহান বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের রেলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ওখানে থাকে। তাদের ওখানে স্থায়ী কোনো স্থাপনা রাস্তা বা অন্য কিছু করার নিয়ম নেই। হরিজন পল্লীর জন্য রেলের একটি ভবন করা হয়েছে। সেই ভবনে ওনারা থাকবেন এবং সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। সিটি কর্পোরেশনের কাজ হল মশক নিধন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা প্রদান করা। স্থায়ী ভাবে রাস্তা ওখানে দেওয়া যাবে না ওটা রেল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।

হরিজন পল্লীর আবেদন অনুযায়ী মন্দির সংস্কারের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, হেতেম খাঁ হরিজন পল্লীর একটি সমিতি রয়েছে। সেই সমিতির মাধ্যমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন। তাদের সভাপতি-সেক্রেটারি রয়েছেন তাদের মাধ্যমে আবেদন করলে আমরা সেটার ব্যবস্থা করে দেব। এককভাবে এটার কিছু করা যাবেনা। আবেদন করলে এটা আমরা বিবেচনা করে দেখব।

উল্লেখ্য , রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার দলিত, হরিজন, বেদেসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করেছেন। রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামন লিটন তাদের শিক্ষা প্রসারের জন্য বিভিন্ন সময়ে নগদ অর্থ এবং চেক প্রদান করে থাকেন। এছাড়াও ৩১ আগষ্ট এক অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। রাজশাহী সিটিতে যে কোন ধরনের সমস্যার জন্য তারা যোগাযোগ করলে সহযোগীতা প্রদান করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।


শর্টলিংকঃ