রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণে নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকায় রয়েছেন।
রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়কে ২৪টি কালভার্টের মধ্যে বর্তমানে বেশ কয়েকটি কালভার্টের কাজ চলছে। নিমার্ণাধীন কালভার্টের ঢালাইয়ে হরেক রকমের সিমেন্টসহ নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করার বিষয়টি আঁড়াল করতে দিনের বেলায় দায়সাড়া টুুকটাক কাজ করলেও রাতের আধারে চুপিসারে পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে ঢালায়ের কাজ।
নির্মাণ কাজে অনিয়মের ব্যাপারে স্থানীয়রা সরেজমিনে গিয়ে দ্বায়িত্বরতদের নিষেধ করলেও প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনরা নিম্মমান সামগ্রী দিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন বলে এলাকাবাসি জানান।
জানা গেছে, নওগাঁর সড়ক ও জনপদের আওতায় রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ সড়কে চলাচলরত যাত্রী-সাধারণ ও নির্বিঘ্নে সব ধরণের ভারী যান চলাচলের লক্ষ্যে পুরাতন সেতু সংলগ্ন নতুন করে ৪টি সেতু ও ২৪ টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।
দরপত্র আহবানের পর এসব সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কাজের যৌথ দ্বায়িত্ব পেয়েছেন, নাটোর জেলার ঠিকাদার মীর হাবিবুর আলম, এমএ মিজান ও ইউনুস এ্যান্ড বাদ্রার্স নামক প্রতিষ্ঠান। ৪টি সেতুর নির্মাণ ব্যয় ২৮ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা।
২৪ টি কালভার্টের নির্মাণ ব্যয় এখনো হিসাব করা হয়নি বলে দিতে পারেননি নওগাঁর সড়ক ও জনপদের উপ-সহকারি প্রকৌশলী ও উক্ত কাজের তদারকি কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম স্বপন। রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়কে বর্তমানে ৩টি সেতু ও বেশ কয়েকটি কালভার্ট এর কাজ চলমান রয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার আমগ্রাম সংলগ্ন সড়কে কালভার্ট নিমার্ণের ঢালায়ের কাজ চলছে। নির্মাণ শ্রমিকরা বলছেন, এখানে বসুন্ধরা ব্যান্ডের সিমেন্ট ব্যবহার করার কথা থাকলেও ওই সিমেন্ট না পাওয়ায় ‘মক্কা’ ‘কিং ব্যান্ড’সহ বিভিন্ন নামের সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতি হপার মসলার সাথে ২ শ ৫০ গ্রাম এ্যাডমিক্সার দেওয়ার কথা থাকলেও ৪/৫ হপার পর পর ২শ থেকে ২শ ৫০ গ্রাম করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান।
তবে দরপত্রে কোন ব্যান্ডের ও কোন গ্রেডের রড ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে? কত মিলিমিটার ডায়া ও কয় ইঞ্চি পর পর এবং দেওয়া হচ্ছে কত ইঞ্চি দূরত্বে? কত শক্তি সম্পূর্ণ কংক্রিট ব্যবহার করার কথা এবং তা বুয়েটে টেষ্ট করা হয়েছে কি না? এমন সব প্রশ্নের সদুত্তর না দিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তদারকি কর্মকর্তা মুনছুর আলীসহ সুপারভাইজার ও ম্যানেজার একজন আরেক জনের নিকট থেকে তথ্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এড়িয়ে যান।
তবে নওগাঁর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে এই দুই কর্মকর্তার দেখা না মিললেও অফিস সহকারিদের নিকট তথ্য চাইলে তারা সাফ জানিয়ে দেন, ‘মুনছুর স্যারের কাছে এই সব তথ্য আছে, স্যার ছাড়া এই সব তথ্য আমরা কেউ দিতে পারবো না’! স্যারের সাথে যোগাযোগ করুন’।
এর আগে নির্মাণাধীন ৩টি ব্রীজের খাম্বার ভারবহন সক্ষমতা পরীক্ষা (পাইল লোড টেষ্ট) ছাড়াই ঝটপট সেড়ে নিয়েছে পাইল ক্যাপ, বেজ ঢালাই সহ ওয়াল নিমার্ণ কাজ। এছাড়াও নওগাঁর সড়ক ও জনপদের আওতায় নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের রাণীনগর অংশে নিমার্ণ করা হচ্ছে বেশ কয়েকটি কালভার্ট ও একটি সেতু। এর মধ্যে সদ্য নির্মিত একটি কালভার্টের দুই দিকের সংযোগ সড়কে মাটি ভরাট করতে গিয়ে সামান্য মাটির চাপেই দুই ধারের উইং ওয়ালে ফাটল ধরেছে।
রাতের বেলায় পাইল নির্মাণ, সন্ধ্যা বেলায় পাইল ক্যাপ, দিন-রাত মিলে বেজ ঢালাই ও ইউং ওয়ালে ফাটল সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকাসহ অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়। সেতু ও কালভার্ট নিমার্ণে অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসি।
স্থানীয় আনোয়ার হোসেন, তাইজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলামসহ অনেকই জানান, নিমার্ণাধীন কালভার্টের ঢালায়ে নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করার বিষয়টি আঁড়াল করতে দিনের বেলায় দায়সাড়া টুুকটাক কাজ করলেও রাতের আধারে চুপিসারে পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে ঢালায়ের কাজ। নির্মাণ কাজে অনিয়মের ব্যাপারে আমরা সরেজমিনে গিয়ে সাইট ইঞ্জিনিয়ার ও দ্বায়িত্বরতদের নিষেধ করলেও প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনরা নিম্মমান সামগ্রী দিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন।
এব্যাপারে নাটোর জেলার ঠিকাদার মীর হাবিবুর আলমের মোবাইল নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন রিসিভ না করায় ঢালায়ে নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে নওগাঁর সড়ক ও জনপদের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল মুনছুর আহমেদ এর কাছে ফোন করে উপরোক্ত বিষয় সংক্রান্ত জানতে চাইলে তিনি রাগান্বিত হয়ে সাংবাদিককে বলেন, সেতু-কালভার্ট ভেঙ্গে গেলে আপনার কি হবে? কার জেল জরিমানা হবে? আমার চাকুরি যাবে? খেলা পাইছেন এটা? সব দায়ভার আমাদের, কারণ সরকার সড়ক ও জনপদ বিভাগকে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন। বিষয়গুলো আমরাই দেখবো!
নির্মানাধীন সেতু ও কালভার্টের কাজে কোন প্রকার অনিয়ম হচ্ছে না। নওগাঁর সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হামিদুল হক এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, রাণীনগরে নির্মানাধীন সেতু-কালভার্ট গুলোর অনেক ভাল মানের কাজ করা হচ্ছে। আমার দপ্তরের সুপারভিশন কর্মকর্তা সব সময় এসব কাজের দেখা শুনা করছেন। চলমান কাজে কোন প্রকারের অনিয়ম হচ্ছে না।