রাতে মহানন্দা ট্রেনে প্রকাশ্যে বসছে মাদকের হাট


তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

রাত্রিকালীন মহানন্দা এক্সপ্রসে ট্রেনে প্রকাশ্যে বসছে মাদকের হাট। অনেকটা হাঁক-ডাক করেই কেউ বিক্রি করছে গাঁজা, কেউবা ফেনসিডিল ও ইয়াবা। এসব মাদক হাতের কাছেই সহজে কিনে তা সেবন করছে মাদকসেবীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেসরকারি মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রহনপুর হতে প্রতিদিনি ভোর ৬টায় খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আবার রাত ৯টার দিকে রাজশাহী হতে কাকনহাট হয়ে ভোর সাড়ে ৩টার দিকে রহনপুর স্টেশনে পৌঁছে।

প্রত্যাক্ষদর্শী একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতে রাজশাহী হতে ট্রেনটি ছাড়ার পরেই শুরু হয় মাদকের কারবার। পুলিশ ডিউটিতে থাকলেও তাদের দিকে নজর পড়ে না। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই ট্রেনের যাত্রীরা।

মাদক ব্যবসায়ীরা ট্রেনটিকে নিরাপদ ব্যবসার স্থান হিসেবে বেছে নিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের ব্যবসা। ট্রেনের মধ্যে মাদক সেবন করে চিৎকার দিয়ে নোংরামি করে ও অশালীন গান ধরে।

তারা এতটাই বেপরোয়া হয় যে, ট্রেনে থাকা নারী যাত্রীদেরও হয়রানি করে থাকে। এসবের প্রতিবাদ করলে কপালে জোটে মারধর অথবা অশ্লিল গালি। মারধর ও গালির ভয়ে কিউ প্রতিবাদ করা সাহস পায় না।

কাকনহাট পৌর এলাকার বাউপুর গ্রামের সিফাতুর রহমান নামে এক মাদকসেবী জানান, আমরা রাজশাহী শহরে রিকশা চালায়। প্রতিদিন ৩০-৪০ জন রাত করে বাসায় ফিরি। সারাদিনের ক্লান্তি কাটাতে একটু খানি ছাইপাঁশ খেয়ে দেহের ক্লান্তি সারি।

একই কথা বলেন তার সহযোগি আব্বাস উদ্দীন। তিনি বলেন, সারাদিন কাজ করার পরে একটি বাবা (ইয়াবা) খেলে ক্লান্তি দূর হয়। সে জন্যই ভাগযোগে টাকা দিয়ে ইয়াবা সেবন করি।

আমনুরার বাদামওয়ালা দুলাল জানান, কিছু করার নেই, এরা সংখ্যায় অনেক; ওদের সাথে পেরে উঠি না। তারা দলবদ্ধভাবে কোর্ট থেকে ট্রেনে উঠে আর নানা ধরনের নেশা করে এমন মাতলামি করে। এদের বিরুদ্ধে লেগে কিছু হবেনা।

এদিকে নাচোল বাজারের এক কাপড় ব্যবসায়ী ট্রেনের যাত্রী মুখে কাপড় বেধে (গাঁজার গন্ধ থেকে বাঁচতে) জানান, আমি মাঝে মাঝে এই ট্রেনে যাতায়াত করি, আর এমন দৃশ্য প্রতিবারই দেখি। প্রতিবাদ করে কোন লাভ হয়নি। উল্টো হয়রানিতে পড়তে হয়েছে।

মহানন্দা ট্রেনের টিকিট চেকার নিলফামারীর নুরুন্নবী জানান, ট্রেনের মধ্যে মাদক বিক্রি ও সেবনের চিত্র প্রতিদিনেরই। যাদের দেখার কথা তারা (পুলিশ) দেখে না। আমরা কী করবো?

জানতে চাইলে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সুপারেনটেন্ডেন্ট আবদুল করিম কোন মন্তব্য না করে রাজশাহী জিআরপি পুলিশের ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এদিকে বক্তব্য জানতে রাজশাহী জিআরপি থানা পুলিশের ওসি সাইদ ইকবালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ট্রেনে মাদক সেবন ও বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, অভিযোগ পেয়ে আমরা বৃহস্পতিবার রাত হতেই অভিযান শুরু করেছি। আশা করি- দ্রুত সময়ের মধ্যেই ট্রেনে মাদকের কারবার বন্ধ হয়ে যাবে।


শর্টলিংকঃ