রানীনগরে আবাদি জমি থেকে মাটি কাটার ধুম


রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি :

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রায় ১০টি ইট ভাটার মালিকরা ফসলি জমি থেকে অবাদে মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করছে। নির্বিচারে আবাদী জমি থেকে মাটি কাটার ধূম পড়লেও যেন দেখার কেউ নেই। যে যেখান থেকে পারছে স্কেভেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। ফলে তিন ফসলের কৃষি জমি জলাশয়ে পরিণত হয়ে ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।

নষ্ট হচ্ছে মাঠে মাঠে জমির উর্বর শক্তি আর জীববৈচিত্র। বর্ষাকালে উম্মুক্ত ধানী জমিগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলেও সেখানে রোপা-আমন ও উচু জমিতে ইরি-বোরো ধান হয় বছর জুড়ে। নিম্মঞ্চলের জলরাশিতে পাওয়া যেতো দেশি প্রজাতির নানা রকমের সুস্বাদু মাছ। এই জনপদের মৎস্যজীবিরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। মাাছের লোভে নানা প্রজাতির পাখি এসে বিচরণ করতো। ইট ভাটার মালিকদের ফসলী জমি থেকে মাটি কাটার আগ্রাসী মনোভাবের কারণে পরিবেশ বিপর্ন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

রাণীনগর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। শ্রেণী ভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারা বছর কোন না কোন ধরণের ফসল চাষ করে কৃষকরা। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষিজাত পূণ্যের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় স্থাণীয় এক শ্রেণীর কৃষকরা ভাটা মালিকদের লোভনীয় অফারে কোন কিছু খরচ ছাড়াই প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টার) মাটি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রয় করায় এক ফিট গর্ত করে প্রতি বিঘায় প্রায় ১৮ হাজার টাকার মাটি বিক্রয় করছে কৃষকরা। ফলে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নির্বিচারে আবাদী কৃষি জমি থেকে মাটি খনন করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলী জমি অন্য দিকে উর্বর শক্তি কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন হ্রাস পাওয়াসহ সৃষ্ট হচ্ছে ছোট-বড় স্থায়ী জলবদ্ধতা।

প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা অবদি প্রায় ২ শতাধিক ট্রাক্টার, মিনি ট্রাক মাটি কেটে ভাটায় পৌঁছে দেওয়ার কাজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে উপজেলার আতাইকুলা ২নং স্লুইজগেট, কাশিমপুর, মিরাট, ধনপাড়া, নগর বালুর ঠিকি, রামরায়পুর, মন্ডলেরপুল, খট্টেশ্বর হাদিপাড়া এলাকায় কৃষি জমি থেকে অবাদে মাটি কেটে ইট ভাটার মালিকরা ইট তৈরি কাজে ব্যবহার করছে। মাটি কাটার প্রভাবে আগামী ইরি-বোর্ োমৌসুমে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হলেও শুধু ইট ভাটায় কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রয় করার কারণে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় ৪শ’ হেক্টর জমিতে ইরি ধান চাষ কম হবে বলে এমনটাই বলছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান, ফসলী জমি থেকে অবাদে মাটি কেটে গর্ত করার ফলে ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। উর্বর শক্তি কমে যাওয়ার ফলে এই জমিতে আর আশানুরুপ ফলন হবে না। এক পর্যায়ে এই জমিগুলোতে ফসল কম হওয়ার কারণে চাষিদেরর আগ্রহ কমে যাবে তাই যত তারাতারি সম্ভব এই ধরণের কর্মকান্ড বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে সার্বিক উৎপাদনে মারাত্নক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আল-মামুন জানান, ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ আমাকে কেহ দেয়নি। সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলো তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শর্টলিংকঃ