রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থতা স্বীকার জাতিসংঘের


ইউএনভি ডেস্ক:

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা ও নির্যাতন মোকাবেলায় ব্যর্থতা ছিল জাতিসংঘের। সংস্থাটির এক অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব নিয়োগকৃত গুয়েতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গের্ট রোসেনথাল সোমবার জমা দেয়া ৩৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেন। সেখানে বলা হয়, রাখাইন সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘের সমন্বিত কোনো কৌশল ছিল না। নিরাপত্তা পরিষদও এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করেনি।

২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মিয়ানমার নিয়ে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করতে সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চলতি বছরের শুরুর দিকে রোসেনথালকে নিয়োগ দেন। প্রতিবেদনে রোসেনথাল বলেন, সমন্বিত কর্মকৌশল না নিয়ে আলাদা আলাদা কৌশল নেয়ায় ভয়াবহ ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে ও সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। এর দায় সবার। অন্যভাবে বললে, একে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত ব্যর্থতা হিসেবে চিত্রিত করা যায়।

জাতিসংঘে গুয়েতেমালার সাবেক এ রাষ্ট্রদূত জানান, মাঠপর্যায় থেকে সদরদফতরে জাতিসংঘ কর্মীদের পাঠানো প্রতিবেদনগুলো ছিল পরস্পরবিরোধী।

এ কারণে নিউইয়র্কে থাকা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও মিয়ানমার বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে নাকি ধীরে চলো নীতি নেয়া হবে সে বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে মানবাধিকার লংঘনে সমালোচনার পাশাপাশি উন্নয়ন ও মানবিক ত্রাণ সাহায্যে সরকারকে সহযোগিতার বিষয়ে জাতিসংঘ ভারসাম্যমূলক কৌশল নিতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ- যারা জাতিসংঘের যৌথ নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করে তারাও এর জন্য অংশত দায়ী। তারা জাতিসংঘের সচিবালয়কে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করেনি। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের সহযোগিতা ও তার ধারাবাহিকতা জরুরি ছিল।

রাখাইনের সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যেই ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করলে কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।

জাতিসংঘের এক তদন্ত দলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গণহত্যার অভিপ্রায়ে’ চালানো ওই অভিযানে সেনাবাহিনী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে। মিয়ানমার সরকার শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনী ওই অভিযান চালায় বলেও ভাষ্য তাদের।

রোসেনথালের এ প্রতিবেদন সদস্য সব রাষ্ট্রকেই পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক। তিনি বলেন, মহাসচিব এ প্রতিবেদনের উপসংহার ও পর্যবেক্ষণ মেনে নিয়েছেন।

প্রতিবেদনের পরামর্শগুলো যেন কার্যকর হয় তা নিশ্চিতে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজও করবেন। রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপকতা বিবেচনায় দায়ী জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে হতাশা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।


শর্টলিংকঃ