লিটনের নাম ব্যবহার ছিলো নির্বাচনী কৌশল: দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীর


নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রচারণায় আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নাম ব্যবহার ছিল নির্বাচনী কৌশল। রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবি করেছেন রাজশাহী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান এজেন্ট ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। বৃহস্পতিবার রাজশাহীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এমন দাবি করেন।

লিটনের নাম ব্যবহার ছিলো নির্বাচনী কৌশল: দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলনে

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, সিটি করপোরেশনের সব কাউন্সিলররা আমাদের সঙ্গে আছে। উনি (এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন) মহানগর আওয়ামী লীগেরও সদস্য। উনি আমাদের সঙ্গে আছে। এটার অর্থ এই নয় খায়রুজ্জামান লিটন নির্বাচনী জনসভা করেছে? কোন মিছিল করেছে? আপনারা দেখেছেন গত যে ৪ তারিখের মিছিলে অসংখ্য লোক।

এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী কাঁচির পক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন আছে নির্বাচনের সময় এমন প্রচারণা চালালেও সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই বিষয়টি পুরো অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ১৪ দলের মিটিং হয় যা সিদ্ধান্তহীনভাবে শেষ হয়। সেরকম নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে আমরা বলতেই পারি। তবে এটা তার (লিটনের) বক্তব্য নয়। এখানকার যিনি সমন্বয়ক তিনি (লিটন) বলেছিলেন, আমু ভাই হলেন কেন্দ্রের সমন্বয়ক। তাকে আমাদের সভার সিদ্ধান্ত জানাবো। তবে কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। লিটন জোর দিয়ে নৌকার জন্য ভোট করতে বলেছিলেন। কিন্তু আমরা যারা উপস্থিত ছিলাম, তারা বলেছি এটা জোটের ভোট না। এটা কেন্দ্র ঠিক করবে।

রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা পরাজিত হন। তার এই পরাজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে দায়ী করে সম্প্রতি ঢাকার পত্রিকায় ফজলে হোসেন বাদশার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। তারই প্রতিক্রিয়ায় এই সংবাদ সম্মেলন করেন নগর আওয়ামী লীগের লিটন অনুসারী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাতে রাজশাহী-২ সদর আসনের স্বতন্ত্র এমপি শফিকুর রহমান বাদশাও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের পরাজিত প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন তার প্রতিবাদ জানাতে সংবাদ সম্মেলন। তাতে বলা হয়, রাজশাহী-২ (সদর) স্বতন্ত্র প্রার্থী (কাঁচি প্রতীক) অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা একজন সাবেক ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং রাজশাহীর একজন অত্যন্ত পরিচিত রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত করায় রাজশাহীবাসীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে পরাজিত প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচনকে বির্তকিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন। ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে লিখিত অভিযোগ করে এবং গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, ‘নির্বাচনের দিনে ভোটারদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করা হয়েছে। যা উদ্দেশ্যমূলক, ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি আওয়ামী লীগ কর্মীদের তার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে দোষারোপ করেছেন, যা অনাকাঙ্খিত।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত ২৫ ডিসেম্বর এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের রাণীবাজারস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের সভায় ফজলে হোসেন বাদশার উপস্থিতিতে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রকাশ্যে তাকে সমর্থন প্রদান করেন। সভায় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমি নৌকার পক্ষে। আমি ফজলে হোসেন বাদশা ভাইয়ের পক্ষে।’ অথচ রাজশাহীতে ১৪ দলের জোটভুক্ত জাসদের আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় রাজশাহী ১৪ দল ফজলে হোসেন বাদশাকে সমর্থন দিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। জোটের ওয়াকার্স পার্টি ব্যতিত অপরাপর শরীক দল ফজলে হোসেন বাদশাকে সমর্থন প্রদানে অপরাগতা প্রকাশ করেন। কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার পক্ষে রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষসহ অধিকাংশ নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ, এমনকি দলীয় নিষেধাজ্ঞা না থাকায় আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাঁচি প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনে কর্মকাণ্ডে যুক্ত হোন।


শর্টলিংকঃ