‘শরীরে স্প্লিন্টারের ব্যথা নিয়ে আজও বেঁচে আছি’


ইউএনভি ডেস্ক:

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সেদিন গুরুতর আহত হয়েছিলেন ভৈরবের নাজিম উদ্দিন। ঘটনার পর ১৭ বছর ধরে শরীরে স্প্লিন্টারের ব্যথা নিয়ে আজও বেঁচে আছেন। এ ব্যথা সহ্য করার মতো নয়। রাতে ঘুমাতে পারেন না। শরীরে এখনও অসংখ্য স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। দুবার শরীরে অপারেশন হয়েছে। এখন টাকার অভাবে তৃতীয়বার অপারেশন করাতে পারছেন না তিনি।


‘সেদিনের ভয়াবহতার স্মৃতিকথা মনে হলে এখনও কেঁদে ওঠি। এসব দুঃসহ স্মৃতির কথা বলছিলেন নাজিম উদ্দিন।’ ভৈরব উপজেলার আকবরনগর গ্রামের মফিজ উদ্দিন মেম্বারের ছেলে আওয়ামী লীগের কর্মী নাজিম উদ্দিন। তিন সন্তান, স্ত্রী ও ভাইবোন নিয়ে তার পরিবার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সেদিন আইভি রহমানসহ কয়েকশ নেতাকর্মী আহত ও ২৪ জন নিহত হন।

সেদিনের ভয়াবহতার স্মৃতিকথা বলতে গিয়ে নাজিম উদ্দিন এই প্রতিনিধিকে বলেন, বিকাল ৩টায় আমি ঢাকায় আওয়ামী লীগের জনসভায় পৌঁছাই। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জিল্লুর রহমান ও তার সহধর্মিণী মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানের বাড়ি ভৈরবে।

জনসভা শুরু হলে জিল্লুর রহমান শেখ হাসিনার সঙ্গে ট্রাকের মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন। আইভি রহমান ট্রাকের সামনে নারীদের নিয়ে মাটিতে বসেছিলেন। আমি ছিলাম তার কাছে। আইভি রহমান আমাকে এক বোতল পানি আনতে বলেন। আমি পানি নিয়ে কাছে এলে হঠাৎ কয়েকটি বিকট শব্দে জনসভা মঞ্চ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

মানুষ দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন। মুহূর্তের মধ্য দেখলাম আইভি রহমানের পায়ে গ্রেনেড পড়ে তিনি রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছেন। এ সময় হঠাৎ করে আমিও গ্রেনেডে গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তার পর গভীর রাতে আমার জ্ঞান ফিরলে জানতে পারি আমি হাসপাতালে আছি।

তার পর আওয়ামী লীগ নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় আমাকেসহ আহত কয়েকজনকে ভারতের পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সেখানে আমার দুবার অপারেশন হয়েছে।

তার পর কিছুটা সুস্থ হলে চিকিৎসক বলেছিলেন– শরীরে থাকা আরও স্প্লিন্টার সরাতে আবারও অপারেশন করতে হবে। কিন্তু টাকার অভাবে আজও তৃতীয় অপারেশন করাতে পারেননি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক মাস আগে ঢাকার মিরপুরে আমাকে একটি বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দিয়েছেন এবং আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। সেই ফ্ল্যাটে বসবাস করছি। চিকিৎসার ব্যবস্থা ও ফ্ল্যাট দেয়ায় নাজিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ বলে জানান তিনি।

নাজিম উদ্দিন বললেন, আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের কঠোর বিচার হলেও আজও আদালতের রায় কার্যকরী হয়নি। শুনেছি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আমি চাই বিচারের রায় বহাল রেখে অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর হোক। বেঁচে থাকতে আমি বিচারের রায় দেখতে চাই বলে তিনি জানান।


শর্টলিংকঃ