জিয়াউল গনি সেলিম :
মাত্র দেড় হাজার ব্যক্তির কাছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া পড়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের। আর ১০টি সরকারী প্রতিষ্ঠান কখনোই পরিশোধ করে নি এই ট্যাক্স। তবে টাকা আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দিয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলে নি। তাই অভিযুক্তদের সকল সেবা বন্ধ করে দিতে চায় নগর সংস্থা। প্রয়োজনে বাড়ির মালামাল ক্রোক করার কথাও ভাবছে তারা।
সিটি কর্পোরেশনের তথ্য বলছে, কোনো অর্থবছরেই হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্য পূরণ হয় না। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবচে’ বেশি বকেয়া পড়েছে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে, যা পৌনে দুই কোটিরও বেশি টাকা। আর সবচে’ কম বাকি হয়েছে প্রায় ৫লাখ টাকা। এটি ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে। শহরের ধনী শ্রেনীর নাগরিকদের মাঝেই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধে অনীহা বেশি। এরকম দেড় হাজার ব্যক্তির কাছেই বাকি পড়েছে ১৫ কোটি টাকা। এদের মধ্যে বেশির ভাগই চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যবসায়ীসহ বিত্তমান।
এদিকে, ব্যক্তি মালিকানা ছাড়াও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) কাছে এক কোটি ৪১ লাখ ৪০হাজার ৩৭২টাকা, শিল্পকলা একাডেমীর কাছে চার লাখ ৬৮ হাজার ২৩৯টাকা, রাইফেল ক্লাবের কাছে চার লাখ ১১হাজার ৫২২টাকা, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান (বিভাগীয়) স্টেডিয়ামের কাছে ৪৮ লাখ ২০ হাজার ৪০০টাকা, জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামের কাছে ৯৮লাখ ৯১হাজার ৬৯৮টাকা, রাজশাহী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের কাছে এক কোটি তিন লাখ ৮০হাজার ৬৯০টাকা, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে সাত লাখ ৪১হাজার ৬০০টাকা, জাফর ইমাম আন্তর্জাতিক টেনিস কমপ্লেক্সের কাছে ১৫লাখ ৩৮হাজার ৪৪৯টাকা, টেক্সটাইল মিলসের কাছে দুই কোটি ৩৬লাখ ২৭হাজার ৮৭৬টাকা এবং সার্ভে এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের কাছে ১৫লাখ সাত হাজার ৯২০টাকা বকেয়া পড়েছে। এই ১০টি প্রতিষ্ঠান হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করে নি কখনোই।
এবিষয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান বজলুর রহমান ইউনিভার্সাল২৪ নিউজ ডট কম-কে বলেন, ‘ট্যাক্স আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আইন নিয়ে খানিকটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তবে পরে জেনেছি, আরডিএ-ই তা পরিশোধ করবে। কিন্তু বকেয়ার পরিমাণ এতা বেশি যে তা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তবে আমার মেয়াদে যা বকেয়া পড়েছে তা সিটি কর্পোরেশন নিলে পরিশোধ করা হবে’।
আর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামের হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রাফিউস শামস প্যাডি জানান, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত কেউ হোল্ডিং ট্যাক্স দেয় নি। দেশের অন্য জেলার ক্রীড়া সংস্থাগুলো যদি তা পরিশোধ করে থাকে তাহলে তারাও তা-ই করবেন।
এবিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স রিভিউ কমিটির সভাপতি নিযাম উল আযীম বলছেন, মাত্র দেড় হাজার ব্যক্তির কাছে এই মোটা অংকের টাকা বকেয়া পড়েছে। এটি দুঃখজনক।ট্যাক্স পরিশোধে তাদের বার বার চিঠিও দেয়া হয়েছে। তাতেও কোনো সাড়া নেই। এ অবস্থায় খেলাপিদের সকল নাগরিকসেবা বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী তাদের বাড়ির মালামাল ক্রোক করারে কথাও ভাবা হচ্ছে।
নিযাম উল আযীম আরো বলছেন, ‘ট্যাক্সের টাকাতেই সিটি কর্পোরেশন নানা সেবা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে সড়কের বাতি ও বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা অপসারণে বিপুল টাকা খরচ হয়। কিন্তু ট্যাক্সের টাকা নগরবাসী পরিশোধ না করলে এধরনে সেবা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে’।
উল্লেখ্য, বিপুল টাকা বকেয়া পড়ায় করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে সিটি কর্পোরেশন ১৬এপ্রিল থেকে শুরু করেছে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় পক্ষ। চলবে ৩০এপ্রিল পর্যন্ত। রাজশাহী নগরীতে হোল্ডিং রয়েছে ৬০হাজার ১৪৬টি। আর বছরে আদায়যোগ্য ট্যাক্সের পরিমাণ ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।