সিটি স্ক্যান উদ্ভাবনে যেভাবে অবদান রেখেছিলেন অ্যালান করম্যাক


ইউএনভি ডেস্ক:

ছোটবেলা থেকেই আকাশের তারা নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া অ্যালান ম্যাকলড করম্যাকের, যিনি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন ‘সিটি স্ক্যান এক্স-রে’ প্রযুক্তির তাত্ত্বিক উদ্ভাবক।এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনের পেছনে অবদান রাখায় ১৯৭৯ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল অর্জন করেন করম্যাক।


‘সিটি’র পূর্ণরূপ হল ‘কম্পিউটেড টমোগ্রাফি’, যা ১৮৯৫ সালে উইলিয়াম কে. রনজেনের এক্স-রে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পর রেডিওলজি খাতের সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত। ১৯০১ সালে পদার্থবিদ্যায় অবদান রাখায় নোবেল জিতেছিলেন রনজেন।

জোহানেসবার্গে জন্ম নেওয়া করম্যাক পড়াশোনা করেছেন পদার্থবিদ্যা নিয়ে, আর তার লক্ষ্য ছিল জোতির্বিদ হওয়া। পরবর্তীতে জোতির্বিদ্যা ছেড়ে পারমাণবিক কণা নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন তিনি।

‘ইউনিভার্সিটি অফ কেপ টাউন’ থেকে স্নাতক পাস করা করম্যাক পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন কেমব্রিজে। এর পর, কেপ টাউনের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

সে সময় তিনি কেপ টাউনের একমাত্র পদার্থবিদ ছিলেন, যার পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা ও তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ নিয়ে কাজ করার প্রশিক্ষণ ছিল। ১৯৫৫ সালের শেষে শহরটির স্থানীয় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে খণ্ডকালীন চাকরি পান তিনি।

পরবর্তীতে করম্যাকের বক্তব্যে উঠে এসেছিল, ওই হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান রোগীর দেহের নির্দিষ্ট অংশে নির্ভুলভাবে এক্স-রে ডোজ দিতে উদ্বিগ্ন ছিলেন, যেখানে শরীরের বিভিন্ন অংশে কতটুকু এক্স-রে শক্তি প্রয়োজন, তা পরিমাপের উপায় খুঁজে বের করতে করম্যাককে অনুরোধ জানান তিনি।

এমনকি করম্যাক পরবর্তীতে স্বীকার করেন, এ পরিমাপ মূলত তার নির্বুদ্ধিতার ফলাফল ছিল। তবে, এর পর তিনি সমস্যাটি নিয়ে কাজ শুরু করেন, যেখানে এক্স-রে কতোটা অপরিশোধিত, সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। এর কারণ ছিল, তারা এক্স-রে’র মধ্য দিয়ে প্রবাহমান সবকিছুই রেকর্ড করেছিলেন। ফলে, ছবিতে এক্স-রে’র উৎস এলোমেলো, স্তরযুক্ত যৌগিক ছবি ফুটে ওঠে, যেখানে ফিল্ম প্লেটে হাড়, নরম টিস্যু এমনকি বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে কোনও দৃশ্যমান পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যেত না।

তবে, যেহেতু রনজেন নিজেই খুঁজে বের করেছেন যে, বিভিন্ন টিস্যু ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের উপকরণ কতটা এক্স-রে শক্তি শোষণ করে নেয়, তাই করম্যাক এক্স-রে’র শোষণ ব্যবস্থা বন্টনের তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া এমন এক এক্স-রে ব্যবস্থা তৈরির কথা বিবেচনায় নেন, যা দিয়ে পুরো শরীরের এক্স-রে মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব।

ওই মানচিত্রে দেখা যাবে, বিভিন্ন কোণ থেকে শরীরে এক্স-রে নিক্ষেপ করে কোন টিস্যু ও উপাদানগুলো ফুটে ওঠে। আর পরবর্তীতে একটি ত্রিভুজের মাধ্যমে তা শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত অংশের ‘হাই-ডেফিনিশন’ বা ‘এইচডি’ ছবি তৈরি করবে।

এর পরের কয়েক বছরের গবেষণায় তিনি এমন এক গাণিতিক সূত্র দেন, যেখানে শরীরের বিভিন্ন দিক দিয়ে প্রবাহিত এক্স-রে’র অগণিত রিডিং থেকে নির্ভুল ছবি তৈরি করা সম্ভব।

এ ছাড়া, ১৯৪৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সক্রিয় থাকা গবেষণাগার ‘হার্ভার্ড সাইক্লোট্রন’-এ একটি বিশ্রামকালীন বছর কাটানোর পাশাপাশি ১৯৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘টাফট্স’ ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

৬০’র দশকে করম্যাকের বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকাশ পায়, যেখানে তিনি বিভিন্ন অপরিশোধিত এক্স-রে মডেল ও ক্যালকুলেটর দিয়ে সফলভাবে নিজের কাজ পরীক্ষা ও পরিমার্জন করেছেন। আর তার বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রকাশ পাওয়ার পর বাকি কাজ প্রকৌশলীদের হাতে সপে দেন তিনি।

এর কয়েক বছর পর, বিশ্বের প্রথম সক্রিয় সিটি স্ক্যান মেশিনটি পেটেন্ট করেন নাইটহুড উপাধি পাওয়া ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার গডফ্রে নিউবোল্ড হোনাসফিল্ড।

১৯৭৯ সালে একসঙ্গে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন করম্যাক ও হোনাসফিল্ড। যদিও তাদের কখনও দেখা হয়নি। এমনকি কখনও একসঙ্গে কাজও করেননি তারা।১৯৯৭ সালের ৭ মে ৭৪ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর কারণ ছিল ক্যান্সার।


শর্টলিংকঃ