এন ৯৫ মাস্ক কারা ও কিভাবে তৈরি করে ?


এম এ আমিন রিংকু:

বর্তমান সময়ে পৃথিবীজুড়ে করোনা ভাইরাসের পর যে বিষয়টি নিয়ে সবচাইতে বেশি আলোচনা হচ্ছে সেটি এন ৯৫ মাস্ক। আমরা সকলে এই মাস্কের নাম শুনলেও অনেকেই হয়ত জানি না কেন এই মাস্ক এত গুরুত্বপূর্ণ আর কিভাবে ও কারা তৈরি করে বর্তমান সময়ে মহামূল্যবান এই বস্তু।আজকেই এই মাস্কের বিস্তারিত জানব আমরা।

আসুন প্রথমেই জেনে নেই মাস্ক তৈরির ইতিহাস। কয়েক ধাপের বিবর্তনের পরে আজকে সেপে এসেছে প্রোটেকটিভ এই ইকুইপমেন্টটি।  শুরুটা ১৯১০ সালের বিউবোনিক প্লেগ আউট-ব্রেকের সময় চীনা বংশোদ্ভূত চিকিৎসক ও গবেষক লিয়েন তেউ’ র হাত ধরে। সে সময় বিশেষ ধরণের কাপড় দিয়ে তিনি তৈরি করেন মাস্ক। পরে ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সময় গুনগত মান কিছুটা উন্নত হয় । সে সময়ে চিকিৎসা কর্মীদের বেশ ভালই সুরক্ষা দিয়েছিল সেসব মাস্ক।

তবে কি হবে মাস্কের স্ট্যান্ডার্ড সে বিষয়ে কোন নীতিমালা ছিল না। ১৯৭০ সালে আমেরিকার ব্যুরো অফ মাইনস ও নিওশ এই মাস্কের নীতিমালা নির্ধারণ করে দেয়। থ্রি-এম নামের একটি কোম্পানি সর্বপ্রথম এন ৯৫ মাস্কের বর্তমান সেপের ডিজাইন তৈরি করে। এরপর ১৯৭২ সালে সেটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময় এই মাস্ক মূলত শিল্প কারখানায় ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হত।

ভিডিও দেখুন এখানে 

 

স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহারের জন্য টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার সাই প্রথমে এটির সাথে ভাইরাস-ব্লকিং প্রযুক্তি সংযুক্ত করেন। সে সময় মূলত আমেরিকাতে এই মাস্ক তৈরি হত। কিন্তু প্রতিযোগিতা মূলক বাজার তৈরি হলে ২০০০ সালের দিকে অনেক আমেরিকান কোম্পানি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে বেশ কিছু দেশে তৈরি হতে শুরু করল এন ৯৫ মাস্ক।

কেন এই মাস্ক এত স্পেশাল? এন ৯৫ মানে হচ্ছে এটি বাতাসে থাকা ৯৫ শতাংশ কণাকে ফিল্টার করতে পারে। এটি প্রায় দেড়শ ধরণের প্রক্রিয়া আর পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে তৈরি হয়। আর এতে বিশেষ ধরণের নন ওভেন পলিপ্রোপিলিন ফ্যাব্রিক ব্যবহৃত হয়।

এই মাস্কে ছয়টি স্তর থাকে যা মাইক্রো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে ফিল্টার করে, এবং ০.৩ মাইক্রন পর্যন্ত বায়ুবাহিত সূক্ষ্ম কণাকেও ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না। এছাড়া এই মাস্কে রয়েছে বিশেষ ধরণের এয়ার সিলিং ব্যবস্থা যার ফলে সর্বোচ্চ সুরক্ষা পাওয়া যায়। আর এতে বিশেষ ধরণের একটি ফিল্টার লাগানো থাকে যার ফলে খুব সহজেই শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া যায়।

অন্যান্য মাস্ক সাধারণত একবার ব্যাবহার করে ফেলে দিতে হয়। তবে সঠিক পদ্ধতিতে ব্যাবহার করেলেএই মাস্ক বেশকিছু সময়ধরে ব্যাবহার করা যায়।বিশ্বজুড়ে যতগুলি এন ৯৫ মাস্ক উৎপাদিত হয় তার অর্ধেক তৈরি হয় চায়নার ফ্যক্টেরি গুলোতে। কেননা এই মাস্ক তৈরির মূল কাঁচামাল তৈরি করে চায়না।আর এই মাস্ক তৈরির প্রতিটি ধাপে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যার কারণে পৃথিবীজুড়ে সকল হেলথ-কেয়ার প্রফেশনালদের কাছে এটি এত নির্ভরযোগ্য। তবে এই মাস্ক কিন্তু সাধারণ মানুষের ব্যাবহার করার জন্য নয়। এটি শুধুমাত্র হাসপাতাল বা গবেষণাগারে যেখানে সংক্রমণের উচ্চঝুকি থাকে সেখানকার কর্মীদের ব্যাবহার করার জন্য।

এই মুহূর্তে পৃথিবীজুড়ে সংকট চলছে এন ৯৫ মাস্কের। এর পরেও দুনিয়া-জুড়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন ডক্টর নার্স সহ স্বাস্থ্য কর্মীরা। আসুন আমরা আমাদের আশেপাশে থাকা এই বীর যোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান করি। ঘরে থাকুন, ভাল থাকুন সবাই।


শর্টলিংকঃ