অনলাইনের ফাঁদে উগ্রবাদে জড়াচ্ছে উঠতি তরুণরা


ইউএনভি ডেস্ক:

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সম্প্র্রতি নব্য জেএমবির ‘এফজেড ফোর্স’ নামে যে স্লিপার সেলের সন্ধান পেয়েছে, ওই গ্রুপের প্রায় সব সদস্যই সদ্য কৈশোর পার হওয়া উঠতি তরুণ। ওই সেলে থাকা সাত থেকে আট সদস্যের মধ্যে একজন কিশোর। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ূয়া ওই কিশোর এরই মধ্যে উগ্রবাদে জড়িয়ে জঙ্গি গ্রুপের স্লিপার সেলে ঢুকে পড়েছে!

এই সেল মূলত নানা হামলায় অংশ নিয়ে থাকে। গত সোমবার রাতে নব্য জেএমবির ‘এফজেড ফোর্সের’ দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে এসব তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

এর আগে ২০১৬ সালে নব্য জেএমবির অন্যতম সমন্বয়ক তানভীর কাদেরীর পুরো পরিবারের সঙ্গে তার কিশোর দুই ছেলেও জঙ্গিবাদে জড়িয়েছিল। পুলিশের পৃথক অভিযানে তানভীর কাদেরী ও তার এক কিশোর ছেলে নিহত হলেও স্ত্রী ও অন্য কিশোর ছেলে আফিফ কাদেরী গ্রেপ্তার হয়। জঙ্গিবাদের অন্ধকার পথ থেকে ফিরে বর্তমানে ওই কিশোর স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। চার বছরের মাথায় আরেক কিশোরের জঙ্গিবাদে জড়ানোর তথ্য মিলল।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নব্য জেএমবির নতুন এই স্লিপার সেলে থাকা ওই কিশোরের বিষয়ে তথ্য পেলেও এখনই বিস্তারিত প্রকাশ করছে না। তবে গ্রুপটিতে থাকা সদ্য কৈশোর পেরোনো অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।

জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, নব্য জেএমবির কথিত ‘এফজেড ফোর্স’ নামে নতুন স্লিপার সেলে থাকা প্রায় সবার বয়সই কম। গত সোমবার সেলটির গ্রেপ্তার হওয়া সাফফাত ইসলাম ও ইয়াসির আরাফাতও সদ্য কৈশোর পার হওয়া তরুণ। গ্রুপটিতে এক কিশোর রয়েছে বলেও তারা জানতে পেরেছেন। পলাতকদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

কীভাবে উগ্রবাদে জড়াল তারা : জঙ্গি কার্যক্রম নজরদারি করেন- পুলিশের এমন কর্মকর্তারা বলছেন অনলাইনের মাধ্যমে ভুল পথে পা দিয়েছে নতুন গ্রুপটি। অনলাইনে ফাঁদ পেতে থাকা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, অস্ত্র চালানো আর উত্তেজনাকর ইভেন্টগুলো ক্লিক করতে গিয়ে উঠতি তরুণরা না বুঝেই উগ্রবাদে জড়িয়ে গেছে। দেশে উগ্রবাদে জড়ানোদের নিয়ে নানা গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, এ দেশের তরুণদের বড় অংশই অনলাইনের নানা ইভেন্ট থেকে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলছেন, এই স্লিপার সেলটির অধিকাংশ সদস্য অনলাইনের ‘ফ্যান্টাসি’ থেকে উগ্রবাদে জড়িয়েছে।
অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালের জুলাইতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলার পর দেশে জঙ্গিবিরোধী টানা অভিযান চলছে।

এতে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা যেমন নিহত হয়েছে, তেমনি গ্রেপ্তারও হয়েছে। এ জন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাধারণ যে তৎপরতা ছিল, তা আর হচ্ছে না। সাংগঠনিকভাবে একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে বাইরে থাকা কেউ কেউ নানা ছদ্মনামে দেশ-বিদেশ থেকে অনলাইনে সক্রিয়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ছদ্মনামে থাকা জঙ্গি রিক্রুটাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ধর্মীয় নানা তথ্য দেয়। এরপর নজরদারি করতে থাকে এসবে আগ্রহী কারা। এরপর টার্গেট করা তরুণদের ধীরে ধীরে ধর্মীয় কথাবার্তা দিয়ে ‘মগজ ধোলাই’ করে। একপর্যায়ে টার্গেট করা তরুণ চলে এলে ধর্মের কঠোর দিকগুলো খণ্ডিত আকারে বা বিকৃত করে মাথায় ঢুকিয়ে উত্তেজিত করা হয়। এভাবেই দলে ভিড়িয়ে বিচ্ছিন্ন গ্রুপ তৈরি করে দেশে মাঝে মধ্যে ছোটখাটো নাশকতার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য অভিভাবকদের নজরদারি করতে হবে- তাদের সন্তান অনলাইনে আসলে কী করছে।

পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকা সাফফাত ও ইয়াসিরকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ওই দু’জন জানিয়েছে- অনলাইনের মাধ্যমেই তারা না বুঝে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে। তারা অনলাইনে নানা অস্ত্র চালনা করে যুদ্ধ গেমস খেলত। এ থেকে বাস্তবেও অস্ত্র চালনা শেখার আগ্রহ বাড়ে তাদের। তা জানিয়ে ফেসবুকে নিজেদের আইডি থেকে পোস্টও দেয়। এরপর থেকে ‘একে-৪৭’ নামে একটি অপরিচিত গ্রুপের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। অনলাইনে ঘনিষ্ঠতার ফাঁকে
গ্রুপটির লোকজন অস্ত্র চালনার লোভ দেখিয়ে তাদের নানাভাবে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে ফেলে।

জঙ্গি কার্যক্রমের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাফফাত রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছিল। তার বাসাও ওই এলাকাতে। কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা ইয়াসির আরাফাতের আজিমপুরের একটি কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা গত ৪ জুলাই একই দিন বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। জঙ্গিদের ভাষায় যা ‘হিজরত’ হিসেবে পরিচিত।

অর্থাৎ নিজের বাসা ছেড়ে জঙ্গি ডেরায় চলে যায় তারা। ওই দুই উঠতি তরুণ নিখোঁজের পর স্বজনরা সংশ্নিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন। প্রায় দেড় মাস পর গ্রেপ্তার হলে অভিভাবকেরা জানতে পারেন, দু’জনই জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে।

 


শর্টলিংকঃ