আটকে আছে দেশের প্রথম শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণকাজ


বিশেষ প্রতিবেদক :

সংসদ সদস্য যে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলেন সেটি ছিল ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন খাতের। তাই শহীদ মিনার নির্মাণে তা ছাড় দেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ফলে শহীদ মিনার নির্মাণকাজ আটকে যায়। নিয়ম অনুযায়ী, শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

 প্রথম শহীদ মিনারের স্থানেই ২০০৯ সালে শ্রদ্ধা স্মারক নির্মাণ করেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন                      -ফাইল ছবি

তিন বছর ধরে আটকে আছে  দেশের প্রথম শহীদ মিনারের পুনঃনির্মাণকাজ। টাকা বরাদ্দ না পাওয়ায় শুরু করা যায় নি নির্মাণকাজ। রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাস চত্বরে প্রথম শহীদ মিনারের স্থানেই  নতুন মডেলে এটি নির্মিত হওয়ার কথা। ৫২ ফিট উচ্চতার নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের কথা ছিল রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক)।  এজন্য ৫০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তবে শেষ পর্যন্ত অর্থ ছাড় না পাওয়ায় স্মৃতির মিনার নির্মাণে হাত দিতে পারে নি রাসিক।

এবিষয়ে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, সংসদ সদস্য যে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলেন সেটি ছিল ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন খাতের। ফলে শহীদ মিনার নির্মাণে তা ছাড় দেয় নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

রি-মডেল শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা               – ফাইল ছবি

একই ভাষ্য রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমানেরও। সংসদ সদস্য এখনও এটি নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ আনার চেষ্টা করছেন। তিনি বলছেন, শহীদ মিনার নির্মাণের দায়িত্ব সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। সে চেষ্টা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই বিষয়টি সুরাহা হবে।

সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা জানান, ভাষা আন্দোলনের প্রতি অকৃত্রিম, গভীর শ্রদ্ধা থেকেই ওই স্থানে প্রথম শহীদ মিনারের আদলে দৃষ্টিনন্দন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলনের অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই এ উদ্যোগ। এখনও তিনি এ কাজের অর্থ বরাদ্দের চেষ্টা করছেন।

কী ভাষা আন্দোলন, কী মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালির সব গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে জড়িয়ে আছে রাজশাহী কলেজের নাম। ইতিহাস বলছে, বায়ান্নের আগে থেকেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। ঢাকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে তাল রেখে রাজশাহীর ভাষা আন্দোলন পরিচালিত হতো বৃহৎবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এ কলেজ থেকেই।

ভাষাসৈনিক মোশারফ হোসেন আখুঞ্জি জানান, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর ঢাকায় গুলি হলে খবরটি ওইদিন সন্ধ্যায় রাজশাহীতে আসে। রাজশাহীর মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের টেলিফোনে খবরটি আসার পর তা দ্রুত শহরময় ছড়িয়ে পড়ে। ভাষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের বুকে গুলি চালানোর খবরে সোচ্চার হয়ে ওঠেন রাজশাহীর ছাত্র-জনতা।

 দেশের প্রথম শহীদ মিনার             -ফাইল ছবি

ওই রাতেই রাজশাহী কলেজের এ ব্লক ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী গোলাম আরিফ টিপুর কক্ষে সভা হয়। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয় শহীদদের সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের। কিন্তু তখনকার দিনে শহীদ মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না কারও। তারপরও রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হলো নির্মাণকাজ। পাশেই ছিল হোস্টেল নির্মাণের জন্য ইটকাঠ। সেই ইটকাঠের সঙ্গে কাদামাটি মিশিয়ে রাত ১২টার মধ্যে নির্মিত হলো দেশের প্রথম শহীদ মিনার। মাটিতে কালি দিয়ে দিয়ে লিখে দেয়া হলো ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের প্রধান ফটকের পাশে দেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে সেটি তৎকালীন পুলিশ বাহিনী গুঁড়িয়ে দেয়। এটিই বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার যা ঐতিহাসিকভাবে সত্য বলে তাঁর দাবি।

এভাবেই রচিত হয়েছিল দেশের মহান ভাষা শহীদদের সম্মানে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের ইতিহাস। এর স্বীকৃতির জন্য রাজশাহীর মানুষ আন্দোলন করেছেন দীর্ঘদিন।

রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওলিউর রহমান বলেন, ভাষার দাবি আদায় হয়েছে বহু আগেই। বায়ান্নর পথ ধরে এসেছে একাত্তর। এরই মধ্যে পেরিয়েছে স্বাধীনতার দীর্ঘ সময়। তবুও আজো স্বীকৃতি পায়নি রাজশাহী কলেজে নির্মিত দেশের প্রথম এ শহীদ মিনার। কোনো রকমে এতদিন ধরে রাখা হয়েছে এ স্মৃতিস্তম্ভ। এটির পুনর্নির্মাণ ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি রাজশাহীর মানুষের প্রাণের দাবি।


শর্টলিংকঃ