কর রেয়াত পেতে কত পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হয়


‘আয়কর আইন ২০২৩’য়ে একজন ব্যক্তি করদাতা কত টাকা কর রেয়াত সুবিধা পাবেন তা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কত টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ ভাতা হিসেবে দেখানো যাবে তা উল্লেখ নেই।

এই বিষয়ে কর পরামর্শক, প্রশিক্ষক ও ‘ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপারেশন: কমপ্লিট গাইড ২০২৩’ বইয়ের লেখক জসীম উদ্দিন রাসেল বলেন, “বিনিয়োগ ভাতা একজন ব্যক্তি করদাতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন ব্যক্তি করদাতা সারা বছর ধরে যে আয় করেন তা থেকে অব্যাহতি বাদ দিয়ে যে করযোগ্য আয় বের হয় তার ওপর কর দিয়ে থাকেন। এবং এই করদায় কমানোর অন্যতম উপায় হল কর রেয়াত।”

কোনো করদাতা যদি এই কর রেয়াত সুবিধা ভোগ করে করদায় কমাতে চান তাহলে তাকে আয়কর আইনে উল্লেখিত খাতে বিনিয়োগ বা দান করতে হয়। এই বিনিয়োগ বা দান যদি আয়কর আইন অনুযায়ী হয় তাহলে তা বিনিয়োগ ভাতার আওতায় পড়ে। এবং এই বিনিয়োগ ভাতার ওপরেই একজন ব্যক্তি করদাতা কর রেয়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন।

তাই একজন ব্যক্তি করদাতা সারা বছর ধরে আয়ের পাশাপাশি অল্প অল্প করে উল্লেখিত খাতে বিনিয়োগ বা দান করতে থাকেন। এতে বছর শেষে চাপ পড়ে না। এজন্য বছরের শুরুতেই যদি বিনিয়োগ ভাতার পরিমাণ জানা যায় তাহলে করদাতা বছরের শুরতেই পরিকল্পনা করে বিনিয়োগ বা দান করতে পারেন।

এখন প্রশ্ন হল কত বিনিয়োগ বা দান করা যায়?

রাসেল বলেন, “আয়কর আইন ২০২৩’য়ে বিনিয়োগ ভাতা কত তা উল্লেখ নেই। পূর্বের আয়কর অধ্যাদেশ-এ প্রথমে বিনিয়োগ ভাতার পরিমাণ কীভাবে বের করতে হবে তা বলা ছিল। আর বিনিয়োগ ভাতা পাওয়ার পর কর রেয়াত হার ব্যবহার করে কর রেয়াত বের করতে হত।”

“কিন্তু আয়কর আইন ২০২৩’য়ে একজন ব্যক্তি করদাতা কর রেয়াত কত পাবেন তা উল্লেখ রয়েছে। তাই প্রথমে কর রেয়াত বের করুন। তারপর বিনিয়োগ ভাতা বের করুন।”

এ সম্পর্কে রাসেল উদাহরণ দেন এভাবে-

তাহলে প্রথমেই চলুন, আয়কর আইন ২০২৩’য়ে কর রেয়াত সম্পর্কে কী বলা আছে তা জেনে নেই। নিচের তিনটি অংকের মধ্যে যে অংকটি ছোট হবে তাই হবে একজন ব্যক্তি করদাতার কর রেয়াত:

১। করযোগ্য আয়ের ৩%; অথবা

২। প্রকৃত বিনিয়োগের ১৫%; অথবা

৩। দশ লাখ টাকা।

তাহলে জানা গেল ওপরে উল্লেখিত তিনটি অংকের মধ্যে যে অংকটি ছোট হবে তাই হবে আপনার কর রেয়াত। এবার আমরা বের করব কত বিনিয়োগ করতে পারবেন।

উপরে ২ নম্বর সিরিয়ালে দেখুন বলা আছে আপনার প্রকৃত বিনিয়োগের ১৫% কর রেয়াত পাওয়া যাবে। তাই প্রথমে আপনি আপনার করযোগ্য আয়ের ৩% বের করুন। ধরুন, আপনার করযোগ্য আয় ১০,০০,০০০ টাকা। তাহলে এই করযোগ্য আয়ের ৩% হলো ৩০,০০০ টাকা। অর্থাৎ, আপনি এই টাকা কর রেয়াত পাবেন।

যেহেতু ২ নম্বর সিরিয়ালে বিনিয়োগের ওপর ১৫% কর রেয়াত পাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে তাই এবার আপনি কর রেয়াত ৩০,০০০ টাকাকে ১৫% বা ০.১৫ দিয়ে ভাগ করুন। ভাগ করলে আসবে ২,০০,০০০ টাকা। এই ২,০০,০০০ টাকাই হল আপনার বিনিয়োগ ভাতা।

আপনি কীভাবে বিনিয়োগ ভাতা বের করতে হয় তা জেনে গেলেন। এবার আপনি আপনার পছন্দ মতো আয়কর আইন ২০২৩’য়ে উল্লেখিত খাতে বিনিয়োগ বা দান করুন।

উল্লেখ্য, আয়কর আইন ২০২৩’য়ে একজন করদাতা কোথায় বিনিয়োগ বা দান করতে পারবেন এবং সর্বোচ্চ কত বিনিয়োগ করতে পারবেন সে সম্পর্কে কিছু পরিবর্তন এসেছে।

এই পরিবর্তনগুলো জেনে তারপর বিনিয়োগ করুন তাহলে সম্পূর্ণ কর রেয়াত সুবিধা পেয়ে আপনার করদায় হ্রাস করতে পারবেন।


শর্টলিংকঃ