গরিব মানুষের ঈদ নাই


ইউএনভি ডেস্ক: 

জ্যৈষ্ঠ মাসের সকালের কড়া রোদে মুখ, চোখ, শরীর ঘামে ভিজে গেছে মো. আব্দুর সাত্তারের। যাত্রী নামিয়ে বসেছেন রিকশার উপর। মিনিট দুয়েক পরে ফের যাত্রী নিয়ে ছুট।

আজ ঈদ। সবাই যখন পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছেন। নামাজ পড়াসহ নানা কাজ সারছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জনে নেমেছেন আব্দুর সাত্তার। মনটা পড়ে আছে গ্রামের বাড়ি রংপুরে পরিবারের কাছে।

রাজধানীর উত্তরার ১২ নং কবরস্থানের সামনে আলাপকালে প্রায় ৪৫ বছর বয়সী আব্দুর সাত্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরিব মানুষ। প্যাডেল ঘুরলেই কেবল আয় হয়। সেই আয় দিয়েই পরিবার নিয়ে চলতে হয়। ঈদ বা যে কোনো উৎসব আনন্দে মেতে উঠার চেয়ে জরুরি হচ্ছে পেটের ক্ষুধা মেটানো। ঈদের বাজার করতে টাকা পাঠিয়েছি। পরিবার ভালো থাকলেই আমার ভালো থাকা।

শুধু আব্দুর সাত্তার নন তার মতো শত শত রিকশাচালক ঈদের দিনেও প্যাডেল ঘুরিয়ে উপার্জন করছেন। অনেকেই মনে করেন, ঈদ উপলক্ষে তাদের আয় ভালো হয়। তাই বুকে কষ্ট চাপা দিয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামেন তারা।

রাজধানীর উত্তরাসহ বিভিন্ন সড়কে দেখা যায়, রিকশাচালকদের ব্যস্ততা। কেউ যাত্রী নিয়ে ছুটছেন। কেউ বা যাত্রীর অপেক্ষায় আছেন। অনেকে গাছের ছায়ায় একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। এসব রিকশাচালকদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরে থেকে আসা। প্রায় সবাই এই রিকশা চালিয়ে পরিবার পরিচালনা করেন।

রোদের হাত থেকে বাঁচতে মাথায় মাথাল দিয়ে রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে যাচ্ছিলেন বগুড়া থেকে আসা রিকশাচালক আবুল কাশেম । আলাপকালে এ প্রতিবেদকে তিনি জানান, অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছেন তিনি। অভাবের বেড়াজালে টিতে থাকতে এ পেশা বেছে নিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। গরিব মানুষের ঈদ নাই। পরিবার ছাড়া বাইরে ঈদ করার অভ্যাস একেবারেই নেই। সবসময় চেষ্টা করি পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে। কিন্তু এবার আর হলো না। অভাবের সঙ্গে সংগ্রাম করতে গিয়ে এবার ঢাকাতেই একা ঈদ করতে হচ্ছে।

সংসারের হাল ধরে রাখতে কংক্রিটের শহরেই লড়াই করে যেতে হচ্ছে তাদের। ঈদের দিনে মনটা বাড়িতে পড়ে থাকলেও থেমে নেই তাদের সংগ্রাম। অনেকেই মনে করেন, কষ্ট করে ঢাকায় থেকে যদি ভালো আয় হয় তাহলে পরিবার সুখে থাকবে। তাই উৎসবে আনন্দে মেতে ওঠার থেকে বেঁচে থাকার উপায় খোঁজতে ব্যস্ত থাকেন তারা।


শর্টলিংকঃ