চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ থামাতে ‘অসহায়’ রেল কর্তৃপক্ষ


বিশেষ প্রতিবেদক :

কোনোভাবেই থামছে না চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। এধরনের নির্মম ঘটনার শিকার হচ্ছে ট্রেনের যাত্রীরা। নিহত হয়েছেন খোদ রেলেরই এক কর্মকর্তাসহ দু’জন। আর চলতি বছরেই পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ৫৫টি। গত পাঁচ বছরে ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় দুই হাজারের বেশি জানালা-দরজা ভেঙেছে। যা দেশে মেরামত সম্ভব নয়। এ অবস্থা ভাবিয়ে তুলেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।

পাথরে আহত শিশু জিসান   -সাম্প্রতিক ছবি

গত রোববার রাতে বাবার সাথে আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মায় চড়ে রাজশাহী থেকে ঢাকা যাচ্ছিল চার বছরের শিশু সালমান জাহান জিসান। সিরাজগঞ্জের জামতৈল ও মনসুর আলী স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। বুলেটের মতো শিশু জিসানের মাথায় আঘাত হানে পাথরটি। এতে রক্তাক্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। পরের স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে হাসপাতালে নেয়া হয় জিসানকে। এখনো তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার ব্রেনে রক্তজমাট বেঁধেছে। জিসানকে বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।

                  পাথরে নিহত প্রকৌশলী প্রীতি দাশ    – ফাইল ছবি

এর আগে এভাবে চলন্ত ট্রেনে ছোঁড়া পাথরের আঘাতে নিহত হয়েছেন রেলের টিকিট চেকার শিকদার বায়েজিদ ও প্রকৌশলী প্রীতি দাশের। ২০১৩ সালে চলন্ত ট্রেনে ছোড়া পাথরে  প্রকৌশলী প্রীতি দাশ নিহত হওয়ার পর রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির সদস্য রেলওয়ে কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, দুষ্কৃতকারীরা ইচ্ছা করে ট্রেনে পাথর ছুঁড়েছিল। ওই ঘটনায় দুই কিশোরকে গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ।

আরও পড়ুন- চলন্ত ট্রেনে ছোঁড়া পাথর আঘাত হানলো শিশুর মাথায়

এদিকে, চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এক বিবৃতিতে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে কিছু দুষ্কৃতকারী চলন্ত ট্রেনে পাথর মেরে নিরাপদ বাহনকে অনিরাপদ করে তুলছে। পাথরের আঘাতে অনেক যাত্রী আহত, এমনকি নিহত হচ্ছেন। এতে জানালার কাঁচ ভেঙে ট্রেনের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মানুষের জীবন হচ্ছে বিপন্ন।

ট্রেনে নিক্ষিপ্ত পাথরে চোখে গুরুতর জখম হন জহিরুল হক চৌধুরী   -ফাইল ছবি

সম্প্রতি জাতীয় সংসদের স্পিকার উত্তরাঞ্চল ভ্রমণের সময় দুষ্কৃতিকারীর ছোঁড়া পাথরে ট্রেনের কাঁচ ভেঙে যায়। তবে তিনি অক্ষত রয়েছেন। কিন্তু এ ঘটনায় কোচের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসবঘটনার পরও চলছে পাথর নিক্ষেপ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় দুই হাজারের বেশি জানালা-দরজা ভেঙেছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শহিদুল ইসলাম ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, ‘এভাবে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় আমরা বিব্রত ও উদ্বিগ্ন। ট্রেন চলতি অবস্থায়  পাথর ছুঁড়লে এর গতিবেগ বহুগুণের বেড়ে যায়। ফলে পাথরটি আঘাত হানে প্রচণ্ডভাবে। এ ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও বেশি’।

পাথর নিক্ষেপে আহত ট্রেনের গার্ড আবুল বাশার ঢালি -ফাইল ছবি

তিনি আরো জানান, এই অপতৎপরতা থামাতে ঈশ্বরদী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেললাইনের আশেপাশের এলাকাগুলোতে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমন কি মসজিদে মসজিদে বলা হচ্ছে। যাতে এই ঘৃণ্যকাজ বন্ধ হয়।

খন্দকার শহিদুল ইসলাম আরো জানিয়েছেন, রাজশাহী-ঢাকা রুটে যে সব আন্তঃনগর ট্রেন চলে, সেগুলোর কোচ (বগি) বিদেশ থেকে আনা। কোচগুলোর জানালায় অনেক দামী কাঁচ লাগানো আছে। কিন্তু পাথরের আঘাতে সেগুলো ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশে ওইমানের উন্নত কাঁচ পাওয়া যায় না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচ রিপ্লেস (পুনঃস্থাপন) করা সম্ভব হয় না। এটি মারাত্মক ক্ষতি।

উল্লেখ্য, রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের অপরাধে যাবজ্জীবন জেলসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে।কিন্তু এ পর্যন্ত পাথর ছোঁড়ার কোনো ঘটনায় বিচারের নজির নেই। এর অন্যতম কারণ, বেশির ভাগক্ষেত্রেই অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

আরও পড়ুন- ‘পদ্মা এক্সপ্রেসে’ পাথর নিক্ষেপকারী গ্রেফতার

 


শর্টলিংকঃ