চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন: সন্তানের জন্য যারা ৪ সেকেন্ড ঘুমায়


ইউএনভি ডেস্ক:

কোনো ব্যক্তিকে যদি মাত্র চার সেকেন্ড করে একাধিকবার ঘুমাতে বলা হয়, তবে সেটি তার কাছে নিঃসন্দেহে নির্যাতন বলে মনে হবে। কিন্তু চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন নামে এক প্রজাতির পেঙ্গুইনের জন্য বিষয়টি একেবারে স্বাভাবিক। এই প্রজাতির পেঙ্গুইনের জন্য মাত্র চার সেকেন্ডের স্বল্পায়ু ঘুমই যথেষ্ট। কারণ এই পেঙ্গুইনগুলো চার সেকেন্ড বা তার কাছাকাছি সময় নিয়ে দিনে ১০ হাজার বারের বেশি ঘুমায়।

সম্প্রতি ফ্রান্সের লিঁওতে অবস্থিত সেন্টার ফর নিউরোসায়েন্সের একদল গবেষক চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইনের ঘুমের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা অ্যান্টার্কটিকার কিং জর্জ আইল্যান্ডের পেঙ্গুইনগুলোর ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান, এগুলো দিনে ১০ হাজারবারের বেশি ঘুমায়। সব মিলিয়ে এই পেঙ্গুইনগুলো দিনের প্রায় ১১ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটায়। কিন্তু এরা কখনোই টানা ঘুমায় না। খবর ডয়েচে ভেলের  চিনস্ট্র্যাপ প্রজাতির পেঙ্গুইনদের ঘুমাবার আগেও নানা দিক মাথায় রাখতে হয়, কখনও কখনও ঘুমের জন্য পাওয়া যায় মাত্র কয়েক সেকেন্ড।

নভেম্বর মাসে অ্যান্টার্কটিকার তীরে ডিম পাড়ে এই প্রজাতির পেঙ্গুইনরা। এই ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোয় ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে। কিন্তু এই সময়টা তারা ডিম পাহারা দেয়। কারণ, আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে বাদামী স্কুয়া পাখি। তারা ডিম পেলেই খেয়ে নেয়।

পাখির হাত থেকে ডিম বাঁচাতে এই প্রজাতির পেঙ্গুইনদের ঘুমের সময়ও থাকে মাপা। একটানা ঘুমের বদলে একদিনে অল্প অল্প করে প্রায় কয়েক হাজার বার মাত্র চার সেকেন্ড করে ঘুমায় তারা। বিজ্ঞানীদের মতে, এই সময়ে তাদের শরীর মারাত্মক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যায়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় মাইক্রোস্লিপিং। দিনে কখনও ১০ থেকে ১৫ হাজার বার এরকম অল্প সময়ের জন্য ঘুমায় তারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার পোলার রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষক উয়োন ইয়ং লি বলেন, এই ধারা আমরা আগে দেখিনি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অ্যান্টার্কটিকার কিং জর্জ দ্বীপের ১৪টি পেঙ্গুইনের ওপর গবেষণা চালায় তারা। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, তা খতিয়ে দেখা হয়। বিজ্ঞানী লির মতে, এরকম ঘুমের প্রবণতা অন্যান্য প্রাণীদের ঘুমের মধ্যে দেখা গেলেও এ বিষয়ে গবেষণা হয়নি। কিন্তু গবেষকদের মতে, পেঙ্গুইনদের শরীরে এমন ঘুমের বিরূপ প্রভাব দেখা যায়নি।

এই প্রজাতির পেঙ্গুইন তার নাম পেয়েছে থুতনির কাছে থাকা কালো দাগের কারণে। উচ্চতায় একটি প্রাপ্তবয়স্ক পেঙ্গুইন ৭০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার হয়, ওজন থাকে তিন থেকে ছয় কেজির মধ্যে। এদের বাস মূলত আন্টার্কটিকার আশেপাশেই।

ডিম পাড়ার যত কাহিনী

ডিম পাহারা দেওয়ার কাজ মূলত বাবা ও মা পেঙ্গুইন মিলেই করে। একজন ডিম পাহারা যখন দেয়, তখন আরেকজন যায় খাবারের খোঁজে। যে বিজ্ঞানীরা এই পেঙ্গুইনদের নিয়ে কাজ করছেন, তারা জানান যে- ডিম পাড়ার সময়ে যেহেতু ডিমের আশেপাশে সব সময় উপস্থিত থাকতে হয় পেঙ্গুইনদের, ফলে সেই জায়গায় জমা হয় তাদের সব ধরনের বর্জ্য। এতটাই সেই বর্জ্যের দুর্গন্ধ যে, বিজ্ঞানীদের জন্য নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

 


শর্টলিংকঃ