তার যে ‘একটা’ স্বপ্ন আছে!


সুব্রত গাইন, রাবি:
চোখ জুড়ে স্বপ্ন নিয়ে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে। ভর্তিও হয়েছে মনের মতো বিষয়ে। টিউশনি করে চলছিল কোনো রকম পড়াশোনা। কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তার ওপর নেই নিজের স্বাধীনতা। চারদিকে আবার বেকারত্বের হাতছানি। ক্যাম্পাসে আবার খাবারের পরিবেশ ও দাম নিয়ে ভাবিয়ে তোলে তাকে। একজনের কাছ থেকে বিশেষভাবে তৈরিকৃত ভ্যান ভাড়া করে কোনো রকম শুরু করলেন ব্যবসা।

দিন শেষে ভ্যান ভাড়া দিয়ে কিছু টাকা জমাও হলো। এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা আর নিজের জমানো টাকা দিয়ে শুরু করলেন খাবারের ব্যবসা। এখন তিনি প্রতি মাসে প্রায় ২৫/৩০ হাজার টাকা আয়ও করছেন। এমনকি তিনি তার দোকানে দুই জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

বলছিলাম একটি একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কথা। নাম মনু মোহন বাপ্পা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার, গোমস্তাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় জন্ম তার। একেবারে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠা আসা। বাবা একজন কৃষক। মা গৃহিনী। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছোট। এলাকার লেবুডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং অগ্রনী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে ভর্তি হন। এখন পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে চলছে তার স্বপ্নের ‘ফুডকোর্ট দোকান।

বাপ্পা ২০১৭ সাল থেকে ‘ফুডকোর্ট’ দোকনটি শুরু করেন। তার ফুডকোর্টে সাশ্রয় মূল্যে বার্গার, সেন্ডুইচ, চিকেন ফ্রাই, নুডুলস পাওয়া যায়। যা সাধারণত ২০ থেকে ৩৫ টাকার ভিতরেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিনতে পারে। বাপ্পার দোকানটি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনেচ্ছ হলের পাশে। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনার কমতি নেই।

এছাড়াও বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে খাবার সাপ্লাই দেওয়ার অর্ডারও আসে তার কাছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষার্থীদের কাছে একটা পরিচিত নাম ‘ফুডকোর্ট’। বাপ্পার শুধু খাবারের দোকানই নয় এর সঙ্গে তিনি সাত রং নামে অনলাইনে পোষাক অর্ডারের ব্যবসা করেন। তার অনুপ্রেরণায় এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ব্যবসা শুরু করেছেন। এমনকি তারাও প্রত্যাশা অনুযায়ী উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে তার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বন্ধবান্ধব। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তার বন্ধু গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোল্লাহ মোহম্মদ সাঈদ বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি অলস সময় না কাটিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে তার এই প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ও অনুপ্রাণিত করছে। তেমনি বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে আরও অনেক উদ্যোক্তা আসবে এরকম প্রত্যাশা করি।’

এমন উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে মনু মোহন বাপ্পা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দোকানের খাবারের পরিবেশ ও অতিরিক্ত দাম আমাকে ভাবিয়ে তুলে। তাই শিক্ষার্থীদের স্বল্প দামে ভালো খাবার পরিবেশন করাতেই আমার এই উদ্যোগ। প্রথমে ব্যবসাকে দাড় করাতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনেকে আমার এই কাজকে ভাল চোখেও দেখেনি আবার অনেকে উৎসাহ দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সবাই চাকুরির দিকে ছুটছে। সবাই যদি এমন চাকুরির পিছনে ছুটে তাহলে ব্যবসা-বানিজ্য করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে কারা? আগামী মাসে আমার আরেকটা ফুডকোর্ট চালু হবে। এতে বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন। আমার কাছে কিছু টাকা জমানো আছে বাকি টাকা যদি সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়া যায় তাহলে ব্যবসাটা আরও ভাল হতো। কেননা আমার ইচ্ছা পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা করা। যাতে এর মাধ্যমে অন্যদের কিছু কর্মসংস্থান হয়।’

ক্ষুদ্র ব্যবসায় বৃহৎ চিন্তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাপ্পা। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্লাস শেষে অবসর সময়ে আছেন ব্যবসা নিয়ে। কেননা তার যে একটা স্বপ্ন আছে। সেটাকে বাস্তবরূপ দিতে চাইলে যে আরও স্বপ্ন দেখতে হবে আরও পরিশ্রম করতে হবে।


শর্টলিংকঃ