দেশের যেসব এলাকায় পালিত হচ্ছে ‍আগাম ঈদ


ইউএনভি ডেস্ক:

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল থেকে আজ রবিবার (২৪ মে) দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদ উদযাপন হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত, জামাত শেষে কোলাকুলি ও হাত মেলাতে মানা থাকলেও তা মানা হয়েনি ঠিকমতো।

বরিশাল

বরিশালের ৬টি উপজেলার কিছু গ্রামে রবিবার আগাম ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে। এসব গ্রামে বসবাসরত চট্টগ্রামের চন্দনাইশ শাহ সুফি দরবার শরিফ, সাতকানিয়া মির্জাখালী দরবার শরিফ এবং আহমাদিয়া জামাত অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছেন।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের প্রায় ২ হাজার অনুসারীসহ জেলার হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, বাকেরগঞ্জের সুন্দরকাঠি, মহানগরীসহ সদর উপজেলার প্রায় ৫ হাজার অনুসারী প্রতি বছরের মতো এবারও একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেছে।

বরিশাল নগরীর ২৩নং ওয়ার্ডের তাজকাঠি, জিয়া সড়ক, টিয়াখালী, সিকদার বাড়িসহ সদর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকায় ‍সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নগরীর ২৩নং ওয়ার্ডের তাজকাঠি এলাকার হাজিবাড়ি জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাওলানা দেলোয়ার হোসেন নামাজে ইমামতি করেন।

শরীয়তপুর

শরীয়তপুরের সুরেশ্বর দরবার শরিফে আজ রবিবার (২৪ মে) পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছরই সুরেশ্বর দরবার শরিফের অনুসারীরা ঈদ উদযাপন করে থাকেন।

মধ্যপ্রাচ্যে শনিবার (২৩ মে) চাঁদ দেখা যাওয়ায় রবিবার ওইসব দেশে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। তাদের সঙ্গে মিল রেখে সুরেশ্বর দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা হজরত জান শরীফ শাহ সুরেশ্বরীর অনুসারীরাও ঈদ পালন করছেন। সকাল ৯টায় ও সকাল ১০টায় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জেলা ও জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থানে থাকা সুরেশ্বর দরবার শরিফের অনুসারীরা প্রতিবছর এই জামাতে অংশ নিলেও এ বছর উপস্থিতি অনেক কম ছিল।অনেক অনুসারীই এবার দরবার শরিফে না এসে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে ঈদ উদযাপন করছেন।

সুরেশ্বর দরবার শরিফের গদিনশীন পীর সৈয়দ কামাল নূরী জানান, বিশ্বের যেখানেই চাঁদ দেখা যাক না কেন, সেই হিসাব করেই আমরা ঈদ উদযাপন করে থাকি। প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে। তবে প্রতিবছর দরবার শরিফে অনেক বড় করে ঈদের নামাজের আয়োজন করলেও এ বছর করোনা সংকটের কারণে সংক্ষিপ্তভাবে করা হয়েছে।

দিনাজপুর

দিনাজপুরের সদর, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, বিরামপুর ও কাহারোল উপজেলার কিছু এলাকায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে প্রায় ২ হাজার পরিবার। এসব পরিবারের মুসল্লিরা বিভিন্ন স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

রবিবার সকাল ৮টায় দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টিতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে (পার্টি সেন্টার) অনুষ্ঠিত ঈদের জামায়াতে প্রায় দুইশ মুসল্লি অংশ নেন। এছাড়াও জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতাড়া ও রাবার ড্যাম এলাকা, কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ ও গড়েয়া বাজার, বিরামপুর এবং পার্বতীপুর উপজেলায় ঈদের জামাত হয়।

হিলি

দিনাজপুরের বিরামপুরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দু’টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ ঈদ করেছেন। সকালে ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি করতে নিষেধ ও সামাজিক দূরত্ব মানার নির্দেশনা থাকলেও কোনোটিই পালন করা হয়নি।

রবিবার সকাল ৮টায় বিরামপুর উপজেলার জোতবানি ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি-মির্জাপুর গ্রামের জামে মসজিদে এবং ৭টা ৪৫ মিনিটে বিনাইল ইউনিয়নের আয়ড়া বাজার জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দু’টি জামাতে ১৫টি গ্রামের প্রায় ১০০ মানুষ নামাজ আদায় করেন। ঈদের জামাতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও উপস্থিত ছিলেন। দূরদূরান্তের গ্রামগুলো থেকে কেউ ভ্যানে আবার কেউ সাইকেলে, কেউবা মোটরসাইকেলে এসে জামাতে অংশ নেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

মাওলানা দেলোয়ার হোসেন কাজি  বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য মাত্র তিন ঘণ্টা। এই তিন ঘণ্টার ব্যবধানে দিনের পরিবর্তন হয় না, তাই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে এই ঈদের নামাজ আদায় করা। হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করে ১২ রবিউল আওয়াল সোমবার কিন্তু যদি দিন ধরা হয় তাহলে আমাদের দেশে সেই দিন হয় মঙ্গলবার। আবার রমজানে ২৭ তারিখে আমরা লাইলাতুল কদর রাতে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহকে খুঁজি। কিন্তু দিন হিসেবে আমরা একদিন পর সেই রাতকে খুঁজতেছি। এমন বিভিন্ন চিন্তা ও হাদিসি ব্যাখ্যার কারণেই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছি।’

তিনি আরও বলেন, আমরা ১৯৯৭ সাল থেকে এভাবে নামাজ আদায়ের পরিকল্পনা থাকলেও ২০১৩ সাল থেকে আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এই গ্রামে ঈদের নামাজ আদায় করছি। তবে গতবারের চেয়ে এবার মুসল্লির সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিরামপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির  বলেন, ‘আগাম ঈদের জামাতে যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা না ঘটে সেজন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। মসজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবেই ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সামাজিক দূরত্ব মানা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুসল্লির সংখ্যা কম ছিল। একটিতে ২০ জনের মতো অপরটিতে ৩০ জনের মতো মুসল্লি ছিল। দুটি ইউনিয়নে ছোট দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

লালমনিরহাট

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করলেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার।  রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়া জামে মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টির কারণে জামাতে মুসল্লির সংখ্যা ছিল না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার, সুন্দ্রহবী, কাকিনা, চাপারহাট, চন্দ্রপুর, আমিনগঞ্জ ও মুন্সীপাড়া গ্রামের প্রায় শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন। প্রতিবছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে রোজা ও ঈদ করেন এসব গ্রামের মুসল্লিরা। এদিকে করোনার কারণে ঈদের জামাত মুন্সিপাড়ায় ঈদগাহ মাঠে না হলেও সরকারি নির্দেশনা মেনে মসজিদে জামাত করেছেন তারা।

কালীগঞ্জ উপজেলার হাড়িশহরের মুন্সিপাড়ার ঈদগাহ মাঠের সভাপতি মাওলানা মাছুম বিল্লাহ্ বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে গত কয়েক বছর ধরে এই এলাকার মানুষ ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবে-কদর, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন। সেই হিসাবে ঈদ পালন করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর ইসলাম জানান, উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ একদিন আগে থেকে ধর্মীয় উৎসব পালন থাকেন। তারা আজ ঈদ উদযাপন করছেন।

ঝিনাইদহ

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডের ১০ গ্রামের অর্ধশত পরিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে। রবিবার সকাল ৭টায় এসব পরিবারের সদস্যরা পৌরসভাধীন চটকাবাড়ীয়া দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বৈঠাপাড়া, কুলবাড়িয়া, রামনগর, দখলপুর, পায়রাডাঙ্গাসহ ১০ গ্রামের অর্ধশত মুসল্লি মাওলানা রেজাউল ইসলামের ইমামতিতে এ ঈদ জামাতে অংশ নেন।

বজলুর রহমান নামে একজন বলেন, ১৫ বছর ধরে তারা সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন। করোনার প্রভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা স্থানে নামাজ আদায় করতে না পারায় এবার অনেক মুসল্লি ঈদের নামাজে শরিক হতে পারেননি।


শর্টলিংকঃ