নববর্ষ উদযাপন রেখে কনকনে শীতেও রাত জেগে বিক্ষোভ


ইউএনভি ডেস্ক:

বিশ্ব যখন নতুন বছরকে উদযাপনের আনন্দে মেতে ছিল, নয়াদিল্লিতে কয়েকশ বিক্ষোভকারী তখন দেশটির বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন।

নববর্ষ উদযাপন রেখে কনকনে শীতেও রাত জেগে বিক্ষোভ

বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা। গত ১১৮ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় শীতলতম ডিসেম্বরটি পার করেছে ভারত।কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে বিক্ষোভকারীরা তাদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েননি। প্রতিবাদের নেতৃত্বে অধিকাংশই নারী। বিক্ষোভস্থলে তারা নিজেদের সন্তানদের নিয়ে এসেছেন।

লোকজন তাঁবুর ভেতর ঘেঁষাঘেঁষি করে অবস্থান করছেন। পাশে কম্বলের স্তূপও দেখা গেছে। ৩৩ বছর বয়সী সায়মা বলেন, এ দেশে আমার সন্তানদের কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি না। একজন মা হিসেবে, তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় ঘরে ছেড়ে বাইরে এসেছি।

গ্লাসে করে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে তিনি আরও বলেন, আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এটা কেবল নিজেদের টিকে থাকার লড়াই না, সংবিধানকেও রক্ষা করতে হবে।

নথিপত্রের অভাবে দেশজুড়ে বহু লোক সংকটে পড়েছেন বলে নানান এই মুসলমান নারী। কনকনে ঠাণ্ডার ভেতরেও বাইরে বের হওয়া আগে বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো চেষ্টা করছেন তিনি।

জীবনে এই প্রথমবারের মতো কোনো বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন সায়মা। আরও অনেক নারী বাচ্চাদের ঘরে রেখে না আসতে পেরে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।

সাজিদা খান নামের ২৪ বছর বয়সী এক নারী বলেন, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন তিনি। জামিয়ায় ধর্মীয় ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য নেই। এই প্রথমবারের মতো এমন বৈষম্যমূলক কোনো ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। আমি জোরালোভাবে এই আইনের বিরোধী।নিজের এক বছর বয়সী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন সাজিদা খান।

বিক্ষোভকারীদের জন্য খাবার সংগ্রহে সহায়তা করছেন স্থানীয়রা। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিক্ষোভ স্থানে থাকেন আসমা খাতুন নামের এক নবতিপর বৃদ্ধা। তিনি বলেন, আমাদের ভাই ও সংবিধানের জন্য লড়াই করছি আমরা।

‘যারা আমাকে নথি দেখাতে বলেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের নাম বল? আমরা আমাদের সর্বশেষ সাত পূর্বপুরুষের নাম বলতে পারবো, যারা এখানে বসবাস করছেন।’

গত বছরের শেষ রাতে অনেক বিক্ষোভকারীকে জাতীয় পতাকা নাড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে। ঘড়ির কাঁটা যখন রাত ১২টায় গিয়ে আঘাত করে, তখন সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন এবং ইনকিলাব জিন্দাবাদ বলে স্লোগান দেন।


শর্টলিংকঃ