নাটোর জেলা পরিষদের সদস্যর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর :

নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নারীদের ভাগ্যের উন্নয়ন করবেন, সেইসাথে করবেন এলাকার উন্নয়ন। মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়ে ঝগঝগে-চকচকে বানিয়ে দিবেন।  কিন্তু এলাকার উন্নয়ন করতে গিয়ে নিজের উন্নয়ন করে ফেলেছেন নাটোর জেলা পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য ফরিদা পারভিন।

তার ছেলে ইফতেকার রহমান সৌরভ পরিচালিত তা থৈ নৃত্যকলা শিল্প একাডেমি ও স্বামীর নিয়ন্ত্রণে থাকা মিলন সংঘকে দুই মেয়াদে বরাদ্দ দিয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। যার পুরোটাই গেছে পরিবারের উন্নয়নে। এছাড়া মসজিদ ও গোরস্থানকে উন্নয়ন করার নামে জেলা পরিষদের  বরাদ্দের অর্ধেক টাকা আত্মসাৎ করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। ইতিমধ্যে লিখিত অভিযোগ গেছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ফরিদা পারভীন বিভিন্ন সময়ে জেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের নামে সরকারি টাকা বরাদ্দ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে আত্মসাৎ করেছেন। বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে তা থৈ নৃত্যকলা একাডেমীর নামে যথাক্রমে এক লক্ষ ও দুই লক্ষ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে লোকমানপুর মিলন সংঘের নামে দুই লাখ টাকা, মালিগাছা উত্তরপাড়া গোরস্থানের নামে দুই লাখ টাকা, মাড়িয়া সরকারপাড়া জামে মসজিদের নামে এক লাখ এবং গোরস্থানের নামে এক লাখ টাকা।

মাড়িয়া সরকারপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি এস.এম হুমায়ুন কবির জানান, আমাদের মসজিদে জেলা পরিষদ থেকে এক লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও আমরা পেয়েছি ৫৫ হাজার টাকা। এছাড়া গোরস্থানে বরাদ্দকৃত এক লাখের মধ্যে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি। বাঁকি টাকা আত্মসাৎ করেছে ফরিদা পারভীন।

বাগাতিপাড়ার পাকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম জানান, মিলন সংঘ বহু পুরনো সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এই সংঘের কোন কমিটি আছে কিনা আমি জানিনা। সম্প্রতি আমরা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারলাম ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটা কমিটি দেখানো হয়েছে। যে কমিটি কাউকে না জানিয়ে ফরিদা পারভীন ও তার স্বামী করেছে। পরবর্তীতে মিলন সংঘে দুই লাখ টাকা অনুদান নেয় ফরিদা পারভীন। কিন্তু টাকা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তার কোন হদিস নাই।

মিলন সংঘের সভাপতি এসএম বদিউজ্জমান জানান, কখন, কোন টাকা সরকার থেকে বরাদ্দ দিয়েছে তা আমি জানিনা। কখন নতুন করে কমিটি করেছে তাও আমাকে জানানো হয়নি।

দুই অর্থ বছরে তা থৈ নৃত্যকলা শিল্প একাডেমির নামে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া বিষয়ে ফরিদা পারভীনের ছেলে ইফতেকার রহমান সৌরভ বলেন, তা থৈ নৃত্যকলা শিল্প একাডেমি নাটোরের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। তাই বার বার বরাদ্দ পাই। আমার মা জেলা পরিষদের সদস্য বলে বরাদ্দ পেয়েছি এই ধারণা অমূলক। বরাদ্দকৃত টাকা যথাযথখাতে ব্যয় করা হয়েছে। এখানে কোন আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি।

সব অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে অভিযুক্ত ফরিদা পারভীন জানান, তা থৈ নৃত্যকলা শিল্প একাডেমী ও মিলন সংঘে যে সকল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা আমার স্বামী ও সন্তান বলে দেয়া হয়নি। এখানে সকল কাজ সুষ্ঠু মতো হয়েছে। এছাড়াও মসজিদ ও গোরস্থানের টাকা আত্মসাতের যে বিষয়টা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়।

লোকজনের সামনে অভিযোগ অস্বীকার করলেও সুযোগ বুঝে টাকা দিয়ে সাংবাদিক ম্যানেজের চেষ্টা করেন ফরিদা পারভীনের স্বামী ইউনুস আলী।

বিস্তর অভিযোগ লিখিতভাবে সরকারি বিভিন্ন দফতরে জানিয়েছেন মিজানুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎসহ ফরিদা পারভীন তিনটি স্থানে তাঁরা সরকারি জমি দখল করে রেখেছেন। এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি। আমরা এইসকল অনিয়মের প্রতিকার চাই।

অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল জানান, জেলা পরিষদের সদস্য ফরিদা পারভীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ময়ে অভিযোগ লিখিত আকারে পেয়েছি। অভিযোগের তদন্ত এখনো করা হয়নি। তদন্তপূর্বক সত্যতা যাচাই করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাটোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান খাঁন বলেন, সামনের মাসিক মিটিংয়ে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। তারপর একটা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ফরিদা পারভীনের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।


শর্টলিংকঃ