পুঠিয়ার ঝলমলিয়া হাটে বহাল থাকলো ‘ঢলন’ প্রথা


পুঠিয়া প্রতিনিধি:

রাজশাহীর পুঠিয়ায় ঝলমলিয়া হাটের ব্যবসায়িরা মালামাল ক্রয়ে বন্ধ রাখার কারণে বহাল থাকলো সেই ‘ঢলন প্রথা’। বিক্রেতাদের অভিযোগ, তাদের প্রতিমণে দুই থেকে তিন কেজি ঢলন দিতে হয়। এছাড়া ওজনকারী ও হাট ঝাড়ুদারদের তোলা এবং ক্যাশিয়ারদের শতকরা কমিশনসহ নানা অনিয়মে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পণ্য বিক্রেতারা।


জানা গেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়িদের কারসাজিতে স্থানীয় কৃষকরা হাট বাজারে মালামাল বিক্রি করতে এসে প্রতিনিয়ত প্রতারনার শিকার হচ্ছেন। ব্যবসায়িদের এই চাল থেকে তাদের মুক্তির দাবী ছিল দীর্ঘদিনের। কৃষকদের এই দাবী বাস্তবায়ন করতে মহতী উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট চক্রের ষড়যন্ত্রের কারণে তার সুফল পেলো না বিক্রেতারা।

জিউপাড়া এলাকার মকসেদ আলী নামের একজন খেজুর গুড় বিক্রেতা বলেন, হাটের ব্যবসায়িরা চারদিক থেকে আমাদের লুটে খাচ্ছে। তারা প্রতিমণে এক কেজি ঢলনের কথা বলে দেড় থেকে দু’কেজি হারে নিচ্ছে।

এরপর একটি প্লাষ্টিকের ক্যারেট যার ওজন প্রায় এক কেজি অথচ আমাদের হিসাবের খাতায় লিখেন দু’কেজি। এরমধ্যে ওজনকারী পছন্দের পণ্যটি তুলে নিয়ে নেয় আগেই যার কোনো হিসাব নেই। এরপর হিসাব রক্ষক টাকা দেয়ার সময় শতকরা এক টাকা হারে বাটা নামের কমিশন কেটে নেয়। এতে করে একজন বিক্রেতা প্রতি মণে ৩ থেকে ৪ কেজি পণ্য ভূর্তুকি দিচ্ছেন।

মোহাম্মদ আলী নামের গুড় ব্যবসায়িরা বলেন, বিক্রেতারা গত হাটে প্রতিমণে ঢলন না দেয়ায় আমরা কেউ গুড় ক্রয় করিনি। পরে দুপরে ইউএনও স্যারের সাথে বৈঠক করে আবারো আগের মত ঢলন রেখে কেনা-বেচা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ঝলমলিয়া হাট ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম সরকার বলেন, ৪০ কেজিতে মণ নির্ধারণের জন্য সম্প্রতি এক আলোচনা সভা করা হয়।

এতে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন ছাড়াও স্থানীয় কৃষক এবং ব্যবসায়িরা উপস্থিত ছিলেন। সকলের মতামতে ঢলন প্রথা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। কিন্তু গতকাল ঝলমলিয়া হাটে খেজুর গুড় ব্যবসায়িরা ঢলন ছাড়া গুড় ক্রয় করেনি। যার কারণে গুড় বিক্রেতারা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েও এর সুফল পায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গুড় ক্রেতা বিক্রেতা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলোচনায় মণে এক কেজি ঢলন দেয়া নেয়ার মাধ্যমে কেনাবেচা করতে সিদ্ধান্ত হয়। তবে ওই আলোচনা সভায় যেহেতু বাজার ব্যবসায়ি সমিতিকে জানানো হয়নি তাই এর বেশী কিছু আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ডিজিটাল পাল্লায় ৪০ কেজিতে মণ। এখানে ঢলনের কোনো অপসন নেই। তবে ঝলমলিয়া হাটে ক্রেতা বিক্রেতারা উভয় সমঝোতার মাধ্যমে কেনাবেচা করবেন আলোচনা সভায় সেটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ অক্টোবর উপজেলার বানেশ্বর বাজারে ৪০ কেজিতে মণ নির্ধারণের দাবীতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন কৃষকরা। ওই ঘটনার পরের দিন বানেশ্বর ব্যবসায়ি সমিতির অফিসে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় সর্বসম্মতিতে ঢলন প্রথা বিলুপ্ত করে ৪০ কেজিতে এক মণ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সিদ্ধান্তের তিনদিন না হতেই গত ২৯ অক্টোবর ঝলমলিয়া হাটে ঢলন না দেয়ায় মালামাল কেনা বন্ধ রাখেন ব্যবসায়িরা। এতে করে বিক্রেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে খেজুর গুড়ের ডালি রেখে আবারো এক ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান।


শর্টলিংকঃ