পোর্টেবল করোনা ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ


ইউএনভি ডেস্ক:

দেশে প্রথম একটি ‘পোর্টেবল’ (স্থানান্তরযোগ্য) করোনা ল্যাব স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বেলুনের মতো বাতাসে ফুলিয়ে স্থাপনযোগ্য হওয়ায় ল্যাবের মূল কাঠামোটি এক স্থান থেকে আরেক স্থানেও নেয়া যাবে।


সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ল্যাবটি জৈব নিরাপত্তা সংবলিত (বায়ো সেফটি-৩) মানের। বেসরকারি খাতের তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওকে মোবাইল লিমিটেড এ ধরনের ল্যাব স্থাপনে এগিয়ে এসেছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, এতে দৈনিক ৩ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২ মাসের মধ্যেই ল্যাবটিতে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হতে পারে। ল্যাব স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামকে নির্বাচন করা হয়েছে। তবে সরকার চাইলে যে কোনো সুবিধাজনক জায়গায় স্থাপন করা যেতে পারে। নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রথমদিকে বিমানবন্দরসহ রাজধানী ও আশপাশে ৫০টি স্থানে বুথ বসানো হবে। ২৪ ঘণ্টা যে কেউ যে কোনো সময় বুথে গিয়ে নমুনা দিতে পারবেন।

ওকে মোবাইল লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট কাজী জসিমুল ইসলাম  এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উচ্চ প্রযুক্তির ল্যাবটি স্থাপিত হলে এখান থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিতে পারবেন। একটি অভিন্ন সফটওয়্যারে দূতাবাস ও ইমিগ্রেশন যুক্ত থাকবে। টেস্ট রিপোর্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাই যে কোনো সময় দেখতে পারবেন। ফলে জাল রিপোর্টের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। সেই সঙ্গে দ্রুততম সময়ে বিপুলসংখ্যক রিপোর্টও দেয়া সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে আকাশ ভ্রমণ ব্যবস্থা পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে। এখন বিমানযাত্রার ২৪ ঘণ্টা আগের টেস্ট রিপোর্ট ছাড়া বিমানে ওঠা যাবে না। সে ক্ষেত্রে দেশে এ ধরনের উচ্চ প্রযুক্তির ল্যাব যত বাড়বে ততই মানুষ উপকৃত হবে। অন্যথায় ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন অনেকেই। কারণ দেশে এখন যে সব ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে তাতে রিপোর্ট পেতে সময় লাগছে ন্যূনতম ৩ থেকে ৮ দিন।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যে আলোচনা চলছে তাতে পরীক্ষার ফি তুলনামূলক কম হতে পারে। উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক প্রস্তাব ৩ হাজার টাকা অথবা আরও কম। নমুনার একটি অংশ বিনামূল্যে পরীক্ষারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

তারা চীন এবং কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত উন্নতমানের আরটিপিসিআর কিট দিয়ে টেস্টিংয়ের কথা বলছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ইতোমধ্যে তাদের যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমোদনও দিয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের চূড়ান্ত অনুমোদন না মেলায় ল্যাব স্থাপন সংক্রান্ত কার্যক্রম থমকে আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারী মোকাবেলায় টেস্টের কোনো বিকল্প নেই। এ কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উন্নত প্রযুক্তির করোনা ল্যাব স্থাপিত হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতে এ ধরনের পোর্টেবল করোনা ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে পরীক্ষার সক্ষমতা বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া চীন, জাপান ও হংকংসহ ইউরোপের দেশগুলোতে শত শত পোর্টেবল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে যে সব আরটিপিসিআর টেস্ট কিট ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোতে ফলাফলের সঠিকতা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে আরও উন্নত আরটিপিসিআর কিট তৈরি হচ্ছে। যেগুলোতে ফলাফলের সঠিকতা প্রায় শতভাগ। প্রস্তাবিত ল্যাবটিতে সর্বোচ্চ মানের টেস্টিং কিট ব্যবহারের চিন্তা করছেন উদ্যোক্তারা। কোরিয়ান কোম্পানি এলজি এবং চীনের বিজিআই থেকে আনা কিটের নমুনা ইতোমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে। এ দুটি টেস্ট কিট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য এবং ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) কর্তৃক অনুমোদিত।

বর্তমানে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে পোর্টেবল ল্যাবের চাহিদা আকাশচুম্বী। আন্তর্জাতিক বাজারে মাঝারি আকারের একেকটি পোর্টেবল ল্যাবের দাম পড়ছে সর্বনিম্ন ২০ কোটি টাকা। তবে আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশের মতো স্বল্পআয়ের দেশগুলোকে হ্রাসকৃত মূল্যে ল্যাব সরবরাহ করছে আন্তর্জাতিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।


শর্টলিংকঃ