বিটিসিএল ফাইভজি রেডিনেস প্রকল্প


ইউএনভি ডেস্ক: 

বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের উন্নয়ন প্রকল্পটি জটিলতা কাটিয়ে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। আদালতের রায়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘৫জি’র উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার কেবল ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের জিডি-১ প্যাকেজের ফিন্যান্সিয়াল অফার উন্মোচন করা হয় ৮ নভেম্বর।

ফিন্যান্সিয়াল অফার পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনটি রেসপনসিভ কোম্পানির মধ্যে হুয়াওয়ে প্রায় ৩২৬ কোটি টাকার দরপত্র দাখিল করে কার্যাদেশ পেতে যাচ্ছে। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী অন্য দুটি কোম্পানি হচ্ছে জেডটিই ও নকিয়া; যাদের দাখিল করা দরপত্র ছিল যথাক্রমে ৪১৫ কোটি ও ৫৭৯ কোটি টাকা। হুয়াওয়ে থেকে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী জেডটিইর প্রস্তাবিত মূল্যের ব্যবধান প্রায় ৯০ কোটি টাকা। হুয়াওয়ের প্রস্তাবিত মূল্য প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয়ের ৪৬৩ কোটি টাকার তুলনায় ১৩৭ কোটি (৩০ শতাংশ) টাকা কম।

বিটিসিএল ফাইভজি রেডিনেস প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে দেখা যায়, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার সিদ্ধান্ত ৪.৪ অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) সম্পাদন করা হয়। সরকারের ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচের রিপোর্ট ২০২১ সালের এপ্রিলে জমা দেওয়া হয়। যার ভিত্তিতে ‘৫জি’র উপযোগীকরণে বিটিসিএল কর্তৃক অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের ডিপিপি সেই বুয়েটের সমীক্ষার আলোকেই প্রণয়ন করা হয়।

সংস্থাপ্রধান হিসেবে বিটিসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সাবেক সচিব মো. খলিলুর রহমান কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয়। পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের অনুমোদনে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ডিপিপি উপস্থাপিত হয়। সভায় মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের মহাসড়কে উঠবে। সার্বিক বিবেচনায় তিনি প্রকল্পটি অনুমোদনের অনুরোধ জানান। এর পর সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।

প্যাকেজের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ এপ্রিল কারিগরি বিনির্দেশ (টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন) প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। যেহেতু টেন্ডারটি ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি-সংক্রান্ত, তাই বিটিসিএলের ট্রান্সমিশন বিষয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। গঠিত কমিটি পাঁচ মাসব্যাপী মাঠ পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে।

ট্রান্সমিশন খাতে কাজ করেছে এমন সম্ভাব্য দরদাতা ও অংশীজনের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে বিটিসিএল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ২ জুন মতবিনিময় সভা হয়। অংশীজনের মতামত ও পরামর্শে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ডিপিপির আলোকে দরপত্রের কারিগরি বিনির্দেশ তৈরি করা হয়। কারিগরি বিনির্দেশটি সংস্থাপ্রধান হিসেবে সাবেক বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন ৮ সেপ্টেম্বর অনুমোদন করেন। কারিগরি বিনির্দেশের আলোকে ১৩ সেপ্টেম্বর দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় (অফিসিয়াল কস্ট অব এস্টিমেট) অনুমোদন করা হয়। দরপত্র বিনির্দেশ প্রণয়ন কমিটি কর্তৃক প্রণীত বিনির্দেশটি হেড অব প্রকিউরমেন্ট এনটিটি (HOPE), অর্থাৎ বিটিসিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদনের পর প্যাকেজের ক্রয়কাজের বিপরীতে ১৪ সেপ্টেম্বর (Supply, Installation, Testing and Commissioning of ASON Based DWDM Transmission System on Turn-Key Basis) শিরোনামে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।

দরপত্রটিতে সিপিটিইউর স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট (PG-5A) ব্যবহার করা হয়েছে। এটি এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে (ওয়ান স্টেজ টু এনভেলপ) পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তিটি ১৫ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তা ছাড়া বিটিসিএল ওয়েবসাইট এবং সিপিটিইউ ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২৮ সেপ্টেম্বর সঞ্জীব কুমার ঘটক ডিএমডির (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সভাপতিত্বে ওই দরপত্রের ‘প্রি-বিড মিটিং’ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মেসার্স নকিয়া, জেডটিই, ফাইবার অ্যাট হোম, তেজাস, জিনিউ ছাড়াও অন্যান্য সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠানের ভেন্ডর উপস্থিত ছিলেন। সভায় কোনো ভেন্ডর বিনির্দেশের বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করেননি। পরে ৩০ অক্টোবর আগ্রহী দরপত্রদাতাদের সঙ্গে সাবেক সচিব খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিটিসিএল বোর্ড অব ডিরেক্টরস সভায়ও কোনো ভেন্ডর বিনির্দেশের বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করেননি।

পিপিআর ২০০৮-এর বিধি (৭)-এর আওতায় গঠিত তিন সদস্যের দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির মাধ্যমে ২০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্রটি উন্মুক্ত করা হয়। দরপত্র পদ্ধতি এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতি হওয়ায় দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি কর্তৃক শুধু কারিগরি প্রস্তাব উন্মুক্ত করা হয়।

পিপিআর ২০০৮-এর বিধি ৮-এর আওতায় ২০২২ সালের ২৯ জুন বিটিসিএল পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে এ প্রকল্পের প্যাকেজ জিডি ১-এর জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বহিঃসদস্য হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিনিধি, বুয়েটের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি বেশ কয়েকটি সভায় মিলিত হয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ এবং টেন্ডার ডকুমেন্টে বর্ণিত (ITT Clause 47.1) অনুযায়ী কারিগরি মূল্যায়ন সমাপ্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে। মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনটি কোম্পানিকেই যোগ্য (রেসপনসিভ) হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সমস্যার সূত্রপাত
মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ করে গত ৬ এপ্রিল HOPE-এর কাছে কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন দাখিল করা হয়; যা অনুমোদন দিয়ে আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্তকরণের অনুমতির জন্য সুপারিশ করা হয়। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি থেকে কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর তৎকালীন HOPE এবং অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরী গত ৩০ এপ্রিল সেই কমিটির কাছে দুটি দরদাতার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠান।

পিপিআর ২০০৮-এর তপশিল ৩-এর বিধি ৮(১৪) অনুযায়ী HOPE-এর ক্ষেত্রে অনুমোদনের সময় দুই সপ্তাহ নির্ধারিত থাকলেও ২৪ দিন পর অনুমোদন না করে কমিটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কমিটি থেকে ব্যাখ্যা পাওয়ার পর বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গত ১৮ মে ব্যাখ্যার বিপরীতে প্রাপ্ত উত্তর সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদন করা গেল না এবং ক্রয়কারী কর্তৃক বিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেন।

সিদ্ধান্ত প্রদানে HOPE-এর ৪২ দিনের বেশি সময় পার হয়ে যায়। তা ছাড়া কী কারণে কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি অনুমোদন করা হয়নি, তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। ফলে HOPE কর্তৃক মন্তব্যে পরবর্তী করণীয় বিষয় সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় গত ২৫ মে ক্রয়কারী বা প্রকল্প কার্যালয় কর্তৃক আলোচ্য বিষয়ে পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত প্রদানে বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর নথি প্রেরণ করা হয়। পরে ‘ক্রয়কারী কার্যালয় প্রধান’ আসাদুজ্জামান চৌধুরী এখতিয়ার এবং বিধিবহির্ভূতভাবে প্রকল্পের দরপত্র পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের নির্দেশনা দেন। আলোচ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডিপিপি অনুযায়ী প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৬৩ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ অনুযায়ী HOPE-এর ক্ষেত্রে অনুমোদনের সীমা ১৫ কোটি টাকা।

সুতরাং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬-এর ধারা (৮) এবং পিপিআর ২০০৮-এর বিধি (১১) অনুযায়ী অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ (এ ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ) দরপত্র বা প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুমোদন ছাড়া বা কারণ ব্যাখ্যা না করে দরপত্র বাতিল করে পুনর্মূল্যায়ন বা পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের নির্দেশ দিতে পারে না। সব দরপ্রস্তাব বাতিলের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি, যা পিপিআর ২০০৮-এর বিধি (১১)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আবার তিন দরদাতার মধ্যে দুটির সার্টিফিকেটের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও তিনটি দরপ্রস্তাব বাতিল করাও পিপিআর পরিপন্থি। অন্যদিকে প্রতিবেদন দাখিলের পর উপরোল্লিখিত সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ৫৫ দিন সময় লেগেছে; যা পিপিআর ২০০৮-এর তপশিল ৩-এর বিধি ৮(১৪)-এর পরিপন্থি।

গত ২৪ জুলাই ২১৩তম বোর্ড সভায় এ-সংক্রান্ত কার্যপত্রের আলোচনা করে HOPE কর্তৃক অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিধি ও প্রক্রিয়াগত সুস্পষ্ট বিচ্যুতি ঘটেছে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় পিপিএ ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮-এর সংশ্লিষ্ট বিধির আলোকে ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে বিদ্যমান সব বিধিবিধান স্পষ্টভাবে পরিপালন করে দরপত্র প্রক্রিয়ায় দ্রুত নিষ্পত্তি করবে মর্মে পর্ষদ থেকে HOPE-কে পরামর্শ দেওয়া হলেও গোপনীয়তা ভঙ্গ ও মূল্যায়নে প্রভাব খাটানোর অজুহাত দেখিয়ে সব দরদাতার দরপ্রস্তাব বাতিল করা হয়। HOPE কর্তৃক এ ধরনের আদেশের বিপক্ষে হুয়াওয়ে পিপিআর ২০০৮-এর সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী অভিযোগ দাখিলের পর গত ৯ অক্টোবর সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) রিভিউ প্যানেল ২-এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সিপিটিইউর রিভিউ প্যানেল-০২ সব পক্ষের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য নেওয়ার পর ১৭ অক্টোবর কার্যাদেশ প্রদান করে।

দরপত্রের বাণিজ্যিক প্রস্তাব উন্মুক্তকরণের নোটিশ জারি ও জটিলতা
রিভিউ প্যানেল এবং বোর্ডের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে জিডি-১ প্যাকেজের জন্য ১৮ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট দরদাতাদের বাণিজ্যিক দরপত্র ২৬ অক্টোবর উন্মুক্তকরণের জন্য নোটিশ জারি করা হয়। রিভিউ প্যানেল-২ কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ অক্টোবর অ্যাডভোকেট সেলিম আশ্রাফ চৌধুরীর জনস্বার্থে করা রিট পিটিশনের মাধ্যমে গত ১৭ অক্টোবর সিপিটিইউর আদেশে ১৫ দিনের স্থগিতাদেশসহ রুল জারি করা হয়। HOPE তার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিটিসিএলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় সংক্ষুব্ধ হিসেবে রিট পিটিশন করে।

উল্লিখিত রিটের স্টে অর্ডারের ওপর পরে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আট সপ্তাহের স্টে অর্ডার দিলে আদালতের আদেশে গত ৮ নভেম্বর বাণিজ্যিক প্রস্তাব খোলা হয়।

প্রকল্প পরিচালক মঞ্জির আহমেদ বলেন, প্রকল্পের দলিল (ডিপিপি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইথের চাহিদা হবে ২৯ হাজার ৮০০ জিবিপিএস, যা বুয়েটের ফিজিবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়। বর্ণিত দরপত্রে ১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের সংস্থান রাখা হয়েছে, যা বুয়েটের ফিজিবিলিটি স্টাডি কর্তৃক উল্লিখিত ক্যাপাসিটির চার গুণ ক্ষমতাসম্পন্ন।
বিটিআরসির প্রক্ষেপণে ২০৩০ সাল নাগাদ সারাদেশের ব্যান্ডউইথের সম্ভাব্য চাহিদা হবে ৩৭ হাজার ৫০০ জিবিপিএস, যার ৩০ শতাংশ হিসেবে ১১ হাজার ২৫০ জিবিপিএস বিটিসিএল বহন করবে। সে তুলনায় আলোচ্য টেন্ডারে ১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ জিবিপিএস ক্যাপাসিটির সংস্থান রাখা হয়েছে, যা বিটিআরসি এর প্রক্ষেপণের প্রায় ১২ গুণ।

সুতরাং এই ক্যাপাসিটির ব্যান্ডউইথ দিয়ে ২০৩০ সালের চাহিদা মিটিয়ে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার পথে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। প্রকল্পটি প্রণয়নে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আলোচ্য টেন্ডারটি কারিগরি বিনির্দেশ প্রণয়নের সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ মাস পার হয়েছে। ফলে বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়। বিধিবহির্ভূতভাবে দরপত্র বাতিল করে নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ চাহিদা নির্ণয় করে নতুন করে কারিগরি বিনির্দেশ তৈরিসহ টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ন্যূনতম আরও দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে। ফলে একদিকে সরকারি অর্থের অপচয় হবে, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এবং স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের উদ্দেশ্য অর্জন বিলম্বিত হবে।

আলোচ্য টেন্ডারটি কারিগরি বিনির্দেশ প্রণয়ন হতে শুরু করে অদ্যাবধি প্রায় ১৯ মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। ফলে বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়। বিধিবর্হিভূতভাবে দরপত্র বাতিল করে নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ চাহিদা নির্ণয় করে নতুন করে কারিগরি বিনির্দেশ প্রস্তুতসহ টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ন্যূনতম আরও দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে। ফলে একদিকে সরকারি অর্থের অপচয় হবে, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের উদ্দেশ্য অর্জন বিলম্বিত হতো। প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন বিটিসিএলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরী। দরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ৭ নভেম্বর এই নির্দেশনা দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান।

আসাদুজ্জামান চৌধুরী ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বে বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বিটিসিএলের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ফিন্যান্স) আনোয়ার হোসেনকে অতিরিক্ত দায়িত্বে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।


শর্টলিংকঃ