বিষ প্রয়োগের ২৯ বছর পর নারীর মৃত্যু, রহস্য জানা গেল না


ইউএনভি ডেস্ক:

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ঝু লিং। রসায়নে পড়া এই শিক্ষার্থীর বয়স যখন ২০, তখন তাঁর শরীরে ভয়ংকর রাসায়নিক থ্যালিয়াম বিষ প্রয়োগ করা হয়।১৯৯৪ সালের এ ঘটনায় মামলা হয়। সেই মামলা এখনো অমীমাংসিত। কে, কীভাবে বিষ প্রয়োগ করল—এসব প্রশ্নের উত্তর জানার আগেই ৫০ বছর বয়সে গত শুক্রবার এই নারীর মৃত্যু হয়েছে।

শরীরে থ্যালিয়াম বিষ থাকার কারণে ঝু লিংয়ের বাম দিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রায় অন্ধ হয়ে যান তিনি। এ কারণে দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে মা–বাবা ২৪ ঘণ্টাই তাঁর বিশেষ যত্ন নিতেন।বিষ প্রয়োগের এই ঘটনায় মামলা হলেও কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে ঝু লিংয়ের সহপাঠী ও তৎকালীন রুমমেট সান ওয়েইর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হলেও তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়নি।

১৯৯৭ সালে সানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কিন্তু যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ না থাকায় তাঁকে শুধু সন্দেহভাজন হিসেবে দেখিয়ে তদন্ত শেষ করা হয়। এর পর থেকে সান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। পরে তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করেছেন।১৯৯৪ সালের শেষের দিকে বিষ প্রয়োগের পর ঝু লিংয়ের পেটে ব্যথা ও চুল পড়া শুরু হয়। এর কয়েক মাস পরেই তিনি কোমায় চলে যান। পরে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁর শরীরে থ্যালিয়াম বিষক্রিয়ার অস্তিত্ব পান। এই বিষ একটি নরম ধাতু, যা পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং গন্ধ ও স্বাদহীন।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, থ্যালিয়াম রাসায়নিক রাখার জায়গাটিতে যাওয়ার অনুমতি ছিল সানের। তবে তিনি বলেছেন, তিনি ওই অনুমতি পাওয়া একমাত্র শিক্ষার্থী নন। এই অনুমতি আরও শিক্ষার্থীর ছিল।ঝু লিংয়ের পরিবার ও বন্ধু-স্বজনেরা বলেছেন, ঝু লিংয়ের সৌন্দর্য, সংগীত প্রতিভা ও শিক্ষাগত কৃতিত্বের জন্য ঈর্ষান্বিত ছিলেন সান। তবে ঝু লিংয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সান।

পরে সান যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাঁকে সেই দেশ থেকে বের করে দেওয়া দাবি জানানো হয়েছিল। ওই পিটিশনে সানের পরিবারের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলে বর্ণনা করা হয়। আরও অভিযোগ করা হয়, তাঁর বিষাক্ত রাসায়নিকের কাছে যাওয়ার অনুমতি ছিল এবং তাঁর উদ্দেশ্য খারাপ ছিল।

হোয়াইট হাউস ওই পিটিশনের লিখিত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, তারা এই আহ্বানের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নয়। তবে ঝু লিংককে বিষ প্রয়োগের ঘটনা দুঃখজনক। প্রতিক্রিয়ায় আরও বলা হয়েছে, ‘ঝু লিংয়ের মতো কষ্ট কারও পাওয়া উচিত নয়। আমরা তাঁর স্বজনদের হৃদয়বিদারক অবস্থা বুঝতে পারছি।’২০১৩ সালে বেইজিং পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরো এই মামলার তদন্তের পক্ষে সাফাই করেছে। সংস্থাটি বলেছে, অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। তথ্যপ্রমাণ অপর্যাপ্ত থাকায় মামলাটি আবার চালুর সুযোগ কম।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, সানের দাদা সান ইউইকি একজন জ্যেষ্ঠ চীনা কর্মকর্তা। সে কারণেই সান বেঁচে গেছেন। এ ছাড়া বেইজিংয়ের সাবেক ভাইস মেয়র সানের আত্মীয়।তবে সান বলেছেন, পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তাঁর দাদা সান ইউইকির মৃত্যু হয়েছে।পুলিশ বলেছে, ‘ তদন্ত দল আইন অনুযায়ী কাজ করেছে। তদন্তে কখনই আপস করা হয়নি বা কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করা হয়নি।’


শর্টলিংকঃ