আমানুল হক আমান, বাঘা:
ভ্যান চালিয়ে ও রড় মিস্ত্রির কাজ করে অভাবের সংসার চালানো রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আলিফ হোসেন এসএসসি পাশ করেছে। সোমবার (০৬ মে) প্রকাশিত ফলে সে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে জিপিএ-৪.১১ অর্জন করেছে। আলিফ নাটোরের বাগাতিপাড়া তকিনগর আইডিয়াল হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে ফুড ফসেসিং এ্যান্ড প্রিজার্ভেশন বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
আলিফ হোসেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নুরনগর খয়েরমিল গ্রামের আখ ক্রয় কেন্দ্রের পেছনে বাবা, মা ও ছোট বোন নিয়ে বসবাস করে। তার বাবা আমিরুল ইসলাম অসুস্থতার কারণে কাজ-কর্ম করতে পারেন না। ফলে বাধ্য হয়ে ভ্যান চালাতে হয় আলিফকে।
তবে রাস্তায় কেউ এখন ভ্যানে ঠিকমতো চড়ে না বলে আয় কমে গেছে। ফলে ১০ দিন আগে চট্রগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবাহীর ক্যান্টনমেন্টে রডের কাজে গেছে আলিফ। সেখানে প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরীতে কাজ করছে।
অনুভূতি জানতে চাইলে আলিফ উচ্চস্বরে হেসে বলে, ‘ঠিকমতো ক্লাস তো করতে পারিনি। পড়ালেখার কোনো পরিবেশও নেই বাড়িতে। সারাদিন কাজ করে রাতে পড়া, খুব কষ্ট। তবে আল্লাহ’র রহমতে যে রেজাল্ট হয়েছে, তাতে খুশি। তবে আগামীতে আরও ভালো করতে চাই।’
আলিফ হোসেন বলেন, ‘পড়ালেখা করতে খুব ইচ্ছে করে। কষ্টে হলেও যেভাবেই হোক পড়ালেখা শেষ করতে চাই। বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই।
পরক্ষণে কণ্ঠস্বর নিচু হয়ে আসে আলিফের। বলেন, ‘অভাবের মধ্যে কীভাবে সামনে পড়বো, তা বুঝে উঠতে পারছি না। এসএসসি পাশ করে এখন আরও বেশি চিন্তায় পড়ে গেছি। ভবিষ্যতে কী করবো বুঝতে পারছি না!’
কিছুটা উদাস ভঙ্গিতে সে বলতে থাকে- বাবার কোন জমিজমা নেই। আড়াই কাঠা জমির উপর বাড়ি। এক ঘরে আমি ও অন্য ঘরে বাব-মা ও ছোট বোন থাকে।
‘বাবার শরীরটা ভালো না। আমি যা রোজগার করি তা দিয়ে সংসার চলে। পাশাপাশি লেখাপড়া করছি’ বলেন আলিফ।
সে আরও জানায়, উপজেলার আড়ানী স্টেশন বাজরের কয়েকটি কাপ নিয়ে তার মা চা বিক্রি করে। সেখানকার কিছু আয়ও সংসারে যোগ হয়।
তবে দোকানে জিনিসপত্র আর মূলধন না থাকলে ভালো বেচাবিক্রি হয় না। কেউ যদি আর্থিকভাবে একটু সহযোগিতা করতো, তবে ভ্যান চালানো ও রডের কাজ বাদ দিয়ে মায়ের চায়ের দোকানটি বড় করবে সে।
জানতে চাইলে আলিফের স্কুলের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন বলেন, আলিফ খুব বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে। আমি শুনেছি- সে লেখাপড়ার পাশাপাশি ভ্যান চালায়। মাঝে-মধ্যে শ্রমিকের কাজও করে। ছাত্র হিসেবে সে ভালো। সমাজের বিত্তবান মানুষ যদি তাকে একটু সহযোগিতা করে, তবে আগামীতে আলিফ আরও ভালো করবে।
আড়ানী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক রাজ বলেন, আমরা আলিফের পরিবারকে পৌরসভা থেকে সহযোগিতা করার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।