মাদকের গ্রাসে যুবসমাজ : পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন


আবু হাসাদ, পুঠিয়া:

রাজশাহীর পুঠিয়ায় যুব সমাজকে টার্গেট করে বেপরোয়া হয়ে উঠছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে মাদক ব্যবসায়িরা দেদারছে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে পুঠিয়া বাজার, বানেশ্বর ও বেলপুকুর এলাকায় একাধিক পাইকারী পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য কেনা-বেচা হচ্ছে। সর্বত্র মাদক ব্যবসায়িদের দৌরাত্ম্যে এলাকার অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।


মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (রাজশাহী ‘খ’ সার্কেল) ও থানা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৬টি ইউপি ও পৌরসভা এলাকায় কয়েকশ’ জন তালিকা ভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এর মধ্যে বানেশ্বর ও বেলপুকুর ইউপি এলাকাতে প্রায় দু’শতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এছাড়া ওই ব্যবসায়িদের ছত্রছায়ায় বর্তমানে প্রতিটি গ্রাম ও পাড়ায় একাধিক মাদক ব্যবসায়িদের আর্বিভাব ঘটেছে।

জানা গেছে, উপজেলার রাজপরগণা, বানেশ্বর বাজার ও বেলপুকুর এলাকায় চিহ্নিত এবং তালিকাভুক্ত শতাধিক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ি আস্তানা গড়ে তুলেছে। ওই আস্তানা গুলোর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদ রয়েছে। আর থানা পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনের কিছু অসাধু কর্তাদের সাথে বিশেষ সমঝোতা রয়েছে। ওই কর্মকর্তাদের সোর্স নামক অর্ধশতাধিক চিহ্নিত লোকজন মাদক ব্যবসায়িদের সরবরাহকারী হিসাবে কাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাদক ব্যবসায়িরা বলেন, ভারতের সীমান্ত এলাকা চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাদকদ্রব্য গুলো প্রথমে বানেশ্বর এলাকায় প্রবেশ করে। এরপর সেখান থেকে সরবরাহকারীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খুচরা ব্যবসায়িদের হাতে পৌছানো হয়। তবে সোর্সদের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য ও আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু লোকজনদের কমিশন দিতে হয়। এর মধ্যে বিশেষ দিন যেমন ঈদ, পূজা পার্বনে মালের চাহিদা যেমন বেড়ে যায় পাশাপাশি ওদের কমিশনও দ্বিগুন দিতে হয়।

আব্দুর রশিদ নামের একজন মাদক সেবীর অভিভাবক বলেন, জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন দ্বায়িত্ব নেয়ার শুরুতে মাদকমুক্ত এলাকা গড়ে তুলবেন বলে ঘোষনা দেন। এরপর রহস্যের জালে তারা আটকা পড়ে থাকেন। এলাকা মাদকমুক্ত দুরের কথা এখন যুব সমাজকে টার্গেট করে পাড়া-মহল্লায় মাদক ব্যবসায়িরা পাল্লা দিয়ে প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হীরা বাচ্চু বলেন, মাদকের থাবা এখন প্রতিটি পাড়া মহল্লায়। মাদকের কবল থেকে যুব সমাজকে ফেরাতে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে তাদের বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে মাঠে রাখার চেষ্টা করছি। আর অভিভাবকদের একটা কথাই বলবো মাদকের শুরু ধুমপান থেকে। তাই আপনারা ধুমপান করবেন না। আর আপনাদের সন্তানদের সময় দিন।

তবে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম বলেন, থানার কোনো কর্মকর্তা মাদকের সাথে জড়িত নেই। তাছাড়া আমাদের মাদক বিরোধী অভিযান সব সময় চলছে। মাঝে মধ্যে দু’একজন মাদক ব্যবসায়ি আটক হচ্ছে। আর এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে পরিদর্শক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (রাজশাহী-খ সার্কেল) কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।


শর্টলিংকঃ