রাকসু সচলের সম্ভাবনায় চাঙা হচ্ছে ছাত্ররাজনীতি


সুব্রত গাইন, রাবি :

রাকসু নির্বাচনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা বেড়েছে। যেসব সংগঠনের কমিটি ছিল না, তারা কমিটি গঠন করছে। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পথে হাঁটছে। নিয়ম করে বসছে দলীয় টেন্টে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের খোঁজে দলের নীতিনির্ধারকরা নেতাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। সব মিলিয়ে মতিহারের সবুজ চত্ত্বরে ক্রমে চাঙা হয়ে উঠছে ছাত্ররাজনীতি।

খন্ডচিত্রে রাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম  (উপরে সর্ববামে রাকসু ভবন)

দীর্ঘ ২৯ বছর বন্ধ থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) সচলের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত ‘রাকসু সংলাপ কমিটি’। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা চলতি বছরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্খিত রাকসু নির্বাচন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাকসু নির্বাচন বন্ধ হওয়ার পর দীর্ঘ এ সময়ে মাঝে-মধ্যেই সচলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে গত দুই বছর এই আন্দোলন অন্য যেকেনো সময়ের চেয়ে বেশি জোরালো হয়ে ওঠে।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে রিট এবং দ্রুত নির্বাচন দিতে আদালতের নির্দেশে নড়েচড়ে বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন।

একপর্যায়ে গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাবি উপাচার্য ঘোষণা দেন ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন দেওয়া হবে। এ ঘোষণা পর থেকে রাবির শিক্ষার্থীরাও প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানাতে শুরু করে।

দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করেই ২১ জানুয়ারি নবীনদের স্বাগত জানিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা ওই সময় জানায়, ‘ডাকসু নির্বাচন হলে অবশ্যই তারপরে রাকসু নির্বাচন দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ ফলে রাকসু সচলের আশার সঞ্চার হয়।

এরপর আগামী ১১ মার্চ দিন ঠিক করে ডাকসু ভোটের তফসিল ঘোষণা করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। ফলে রাকসু ভোটের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়ায় রাবিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। যেসকল সংগঠনের কমিটি ছিল না, তারা কমিটি গঠন করেছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পথে হাঁটছে তারা। নিয়মিত দলীয় টেন্টে বসছে। সম্ভাব্য প্রার্থীর খোঁজে দলের নীতিনির্ধারকরা দলীয় নেতাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে।

ফলে সব মিলিয়ে মতিহারের সবুজ চত্ত্বরে এখন ছাত্র রাজনীতির ফিরতি সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, রাকসু সচলের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে, আদর্শিক ও ক্রিয়াশীল ছাত্র রাজনীতির হারানো ঐতিহ্য।

দলীয় টেন্টে ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা

রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, রাকসু আমাদের প্রাণের দাবি। আমি সভাপতি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যে ২২ দফা দাবি সম্বলিত স্বারকলিপি দিয়েছিলাম, তার প্রথম দফা ছিল রাকসু নির্বাচন।

রাকসুতে নির্বাচিত হয়ে যেই আসুক না কেন, ছাত্রদের আবাসন সমস্যা, বর্ধিত ভর্তি ফিসহ ছাত্রদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে কথা বলা যাবে। যা এখন করা সম্ভব হচ্ছে না।

গোলাম কিবরিয়া আরও বলেন, ছাত্রলীগ বিগত এক যুগ রাবির শিক্ষার্থীদের সকল দাবি-দাওয়া ও অধিকার আদায়ে কাজ করছে। যাদের দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে কোনো অস্তিত্ব ছিল না, তারা হঠাৎ করে তৎপরতা দেখাচ্ছে।

‘তাতে ছাত্রলীগের কোনো আপত্তি নেই। তারা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করুক, এটা আমরাও চাই। তবে স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে যুক্ত এমন কোনো সংগঠনকে ক্যাম্পাসে অপতৎপরতা চালাতে দেবো না আমরা’ বলেন ছাত্রনেতা কিবরিয়া

রাকসু সংলাপ কমিটির সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে রাবি ছাত্রদল

রাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য সবসময় কাজ করবে এবং নিজেকে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে ভাবেন, এমন কাউকে আমরা রাকসুর নেতৃত্বে দেখতে চাই।

ছাত্রদলের এই নেতা আরও বলেন, রাকসু সচল হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে আবাসন সমস্যা, খাবারের মান, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা, ভর্তি ফি সমস্যা সমাধান করা যাবে, যা একজন শুধুমাত্র নামে পলিটিক্যাল ব্যাক্তি দ্বারা সম্ভব নয়।

রাকসু সংলাপ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে ছাত্রফেডারেশনের নেতাকর্মীরা

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি- চলতি বছরের মধ্যেই রাকসু নির্বাচনের আয়োজন করবে প্রশাসন। তবে এখনও শঙ্কা কাটেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করা হচ্ছে।

তবে ভোটার তালিকা প্রকাশ, গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করা, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দ্রুত তুলে দিতে হবে। ক্রমে দৃশ্যমান অগ্রগতি শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির করতে হবে প্রশাসনকেই।’

রাকসু বিষয়ে সচেতন করতে শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিলি করছেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়কসহ সদস্যরা

তিনি বলেন, এক বছর আগেও শিক্ষার্থী এবং অধিকাংশ সংগঠনের মধ্যে রাকসু বিষয়ে খুব বেশি তৎপরতা ছিল না। তখন থেকে আমরা রাকসু আন্দোলন মঞ্চের ব্যানারে মাঠে নেমেছিলাম। ক্রমে সেটা জোরালো হয়েছে। ডাকসু ভোটের তোড়জোড়ে রাকসু ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এখন অনেক সংগঠন কমিটি করছে, তৎপরতা দেখাচ্ছে। এটা একদিক থেকে ইতিবাচক। তবে নির্বাচনের জন্য তাদেরকে আরও সক্রিয় হতে হবে। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আরও সরব হতে হবে।

ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক সময়ে সক্রিয় প্রজন্মলীগ। ১৭ ফেব্রুয়ারি সংগঠনটি বেশ বড় পরিসরে হল সম্মেলনের আয়োজন করে

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাকসু সংলাপ কমিটির এক সদস্য জানান, তাদের পরিকল্পনা চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাকসু নির্বাচন দেওয়া। তবে ডাকসু নির্বাচনের দিকে নজর রাখছেন তারা। তারা (ঢাবি কর্তৃপক্ষ) কী মডেলে নির্বাচন করতে চাইছে, তা দেখার পর তারা পদ্ধতি অবলম্বন করবো।

‘উপাচার্যের নির্দেশ অনুযায়ী সংলাপ কমিটি ছাত্র সংগঠনের গ্রহণযোগ্য প্রস্তাবনা শুনে চূড়ান্ত নীতিমালা তৈরি করবে। তার আলোকে নির্বাচন সম্পন্নের পরিকল্পনা প্রশাসনের’ বলেন সংলাপ কমিটির ওই সদস্য।

 


শর্টলিংকঃ