রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক টেনিস কমপ্লেক্স এখনও রাজাকারের নামে


বিশেষ প্রতিবেদক:

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপক্ষো করে কুখ্যাত রাজাকার জাফর ইমামের নামে রাজশাহীতে এখনো বহাল রয়েছে আন্তর্জাতিক টেনিস কমপ্লেক্স। এনিয়ে ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের অন্যতম হোতা জাফর ইমামের নামে এ ধরনের স্থাপনা রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অবমাননার শামিল। তাই দ্রুত নাম পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও বিশিষ্ট লেখক শাহরিয়ার কবিরের এক রিটের প্রেক্ষিতে দেশের যে সব স্থাপনায় স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম আছে, তা মুছে ফেলতে ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনা সত্বেও টেনিস কমপ্লেক্সটির নাম পরিবর্তনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘদিন ধরে কমপ্লেক্সটির নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধারা। সবশেষ গত ১৪ মার্চ এ নিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মো. নূর-উর-রহমানের সঙ্গে দেখা করেন জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড।

তারা মৌখিকভাবে বিভাগীয় কমিশনারকে তাদের দাবির বিষয়টি অবগত করেন। আগামী ২৭ মার্চ টেনিস কমপ্লেক্সটির নাম পরিবর্তন করে বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে করার দাবিতে স্মারকলিপি দেবেন মুক্তিযোদ্ধারা।

রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, রাজশাহীর বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা ছিল তৎকালীন সন্ত্রাসী সংগঠন জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন (এনএসএফ) রাজশাহী শাখার প্রতিষ্ঠাতা জাফর ইমামের।

মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনের সময় হিটলিস্টের শীর্ষেই ছিল তার নাম। এ রকম চিহ্নিত রাজাকারের নামে টেনিস কমপ্লেক্স থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই রাজশাহী টেনিস কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠিত ছিল। ২০০৪ সালে মারা যান ক্রীড়া সংগঠক জাফর ইমাম। এরপর ২০০৫ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তার নামে টেনিস কমপ্লেক্সটির নামকরণ হয়।

এরপর তা বাতিল করে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বা বুদ্ধিজীবীর নামে এ কমপ্লেক্সটি নামকরণের দাবিতে কয়েক বারবার আন্দোলনে নামেন মুক্তিযোদ্ধারা। অজানা কারণে কখনোই সফল হতে পারেননি তারা।

রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মান্নান জানান, জাফর ইমাম বরাবরই খোলস বদল করে চলেছেন। ১৯৬৮ সালের দিকে তিনি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ক্রীড়া কর্মকর্তা পদে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার চাকরি চলে যায়।

পরে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। পরে ১৯৭৩ সালের দিকে আবারও তিনি চাকরি ফিরে পান। ওই সময় কতিপয় ছাত্রলীগ নেতা অজ্ঞাত কারণে তাকে শিক্ষাবোর্ডে গার্ড দিয়ে অফিস করতে নিয়ে আসতেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।

নগরীর রাজপাড়া থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার শুকুর আলী জানান, আইয়ুব-মোনায়েম খানের মুসলিম লীগের সন্ত্রাসী সংগঠন এনএসএফ-এর রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এই জাফর ইমাম। মুক্তিযুদ্ধের আগে তার হামলার শিকার হয়েছেন রাজশাহীর শীর্ষ ছাত্রনেতারা।

তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ৬৯’এর গণআন্দোলনে ছাত্র-জনতা জাফর ইমামের রাজশাহীর কাজীহাটার বাড়িতে হামলা চালায়। তখন তিনি পালিয়ে রক্ষা পান। পরে আশ্রয় নেন তার স্ত্রী ডা. জোবায়দার কাদিরগঞ্জের বাড়িতে। সেখানে প্রতি সন্ধ্যায় পাকিস্তানি সেনাদের আড্ডা হতো।

মুক্তিকামী বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রনেতাদের তালিকা হানাদারদের হাতে তুলে দিতেন এই জাফর। তার তালিকা দেখেই চলতো গণহত্যা। বাবলাবন গণহত্যাও তার পরিকল্পনাতেই হয়েছে বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মো. নূর-উর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন। তাঁরা লিখিতভাবে তাদের দাবির কথা জানাবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে নাম পরিবর্তনের পক্ষে। তবে সরকারি যেসকল নিয়ম রয়েছে, তা অনুসরণ করেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শর্টলিংকঃ