রাণীনগরে জিম্মি থেকে পালিয়ে গিয়ে ভাতিজা বউয়ের ধর্ষণ মামলা


রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি :

নওগাঁর রাণীনগরে চাচা শ্বশুর কর্তৃক দুই সন্তানের জননী ভাতিজা বউকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে ঘটনাটি গ্রাম্য মাতবররা বিচার করে দেওয়ার নাম করে নানান তালবাহানা করতে থাকে। অবশেষে ঘটনার চারদিন পর মাতব্বরদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গিয়ে গোপনে আদালতে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভাগী পরিবার।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার একডালা ইউনিয়নের উজালপুর গ্রামে। নাম প্রকাশ অনিছুক ভিকটিমের দিনমজুর স্বামী জানান, গত ৫ এপ্রিল (বুধবার) তিনি দুই সন্তান কে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের মসজিদে তারাবির নামায পড়তে যায়। এমতাবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেলে একই গ্রামের আবুল মোল্লার ছেলে দুই সন্তানের জনক জামাল উদ্দিন মোল্লা (ভুক্তভাগীর সম্পর্কে চাচা শ্বশুড়) মাটির বাড়ির উপরের জানালা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে জারপূর্বক তার স্ত্রীকে ধর্ষন করে। এরপর বিষয়টি গত ৬ এপ্রিল জানাজানি হলে গ্রামের মাতব্বর আনিছুর রহমান, নজরুল ইসলাম ও আব্দুল মালেক বিষয়টি মিটমাট করূ দেয়ার আশ্বাস দেয় ভুক্তভাগী পরিবারকে।

এরপর গত ৮এপ্রিল (শনিবার) রাতে পলাতক জামাল উদ্দিনকে হাজির করে মাতবররা একটি শালিস বসলে দুইজন মাতব্বর পূর্ব থেকে জামালের সঙ্গে আঁতাত করে বিষয়টি সমাধান না করেই উঠে চলে যায়। পরে ভুক্তভাগী পরিবার মাতব্বরদের নিকট গেলে বলে জামাল পলাতক রয়েছে। একটু দেরি করো জামালকে খুঁজে বের করে বিষয়টি গ্রামেই সমাধান করার চেস্টা করছি। ঘটনার পর থেকে নিরীহ ভুক্তভাগী পরিবারের সদস্যরা থানায় গিয়ে অভিযাগ দিতে চাইলে বার বার ওই মাতব্বররা তাদেরকে গ্রামে বসে একটি মিটমাট করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আর থানায় তাদেরকে যেতে দেয়নি। অবশেষে নায্য বিচার পাওয়ার আশাায় ভুক্তভাগী পরিবার মাতব্বরদের ভয়ে গোপনে আদালতে গিয়ে গত ১০এপ্রিল (সোমবার) একটি মামলা দায়ের করেছে।

ভিকটিম জানায়, স্বামী দুই সন্তানের সাথে নিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে তিনিও নামায পড়ে শুয়ে পড়েন। এসময় চাচা শ্বশুর জামাল দ্বোতলার জানালা দিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করে। তার সর্বনাশ না করার জন্য অনেক আকুতি মিনতি ও কানা-কাটি করলেও ভয়ভীতি দখিয়ে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে চাচা শ্বশুর জামাল। গ্রামের মাতব্বররা বিচার করে দিবে বলে থানায় যেতে দেয়নি এবং কারো কাছে ঘটনার কথা বলতেও দেয়নি। মাতব্বরদের বিচার করে দেয়ার নামে তালবাহানা ও তাদের চালাকি বুঝতে পেরে পালিয়ে গিয়ে আদালতে মামলা করেছি। তিনি তার সর্বনাশকারী চাচা শ্বশুর জামালের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান।

মাতব্বর আনিছুর রহমান বলেন, ভুক্তভাগীর পরিবার খুব গরীব। তাই আমরা চেস্টা করছি গ্রামেই বসে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করে দিতে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে আসামী জামাল উদ্দিন পলাতক থাকায় শালিসের মাধ্যমে তা সমাধান করা যায়নি।

স্থানীয় মেম্বার লুৎফর রহমান স্বপন বলন, ওই গ্রামের মাতব্বররা খুবই খারাপ। কোন কিছু ঘটলে তারা সেটা গ্রামেই সমাধান করে। তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না বলে জানায়। । এই ঘটনার পর ওই মাতব্বররা ভুক্তভাগী পরিবারকে তার কাছেও আসতে দেয়নি। কাউকে বলতেও দেয়নি। মাতব্বরদের কথা তাদের গ্রামের সমস্যা তারা গ্রামে বসেই সমাধান করবে। তাই ওই ভুক্তভাগী পরিবারকে সঠিক পরামর্শ দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, এত বড় একটি ঘটনার কথা মেম্বার, চেয়ারম্যানসহ এলাকার কেউ তাকে জানায়নি। সাংবাদিকদের মাধ্যম খবর পেয়ে গত ১০এপ্রিল (সোমবার) রাতে ওই ভুক্তভাগী পরিবারের কাছে পুলিশ পাঠালে তারা জানায় ওইদিনই তারা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার তদন্ত যদি থানার উপর নাস্ত করা হয় তাহল সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে ওই ভুক্তভাগী পরিবারকে নায্য বিচার দিতে এবং এর সঙ্গে জড়িতদর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।


শর্টলিংকঃ