রাবিতে রেজাল্টে চমক দেখাচ্ছে ছাত্রীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

আফসান ইলাহী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। তৃতীয় বর্ষে তার সিজিপিএ ৩.৮০। আইন বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছরে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ নম্বরধারী (ডিভিশন/সিজিপিএ) তিনিই। শুধু আফসান নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিভাগের বিভিন্ন বর্ষে প্রথম স্থান এখন ছাত্রীদের দখলে। ক্রমেই এই সংখ্যা বাড়ছে।

রাবির ১০ম সমাবর্তনে গ্রাজুয়েশন শেষ করা একদল ছাত্রীর উল্লাস

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ফলাফলে ছাত্রদের তুলনায় ঢের এগিয়ে এখন ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮টি বিভাগে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা ও নতুন বিভাগগুলোর সর্বশেষ পরীক্ষা মিলিয়ে ৩৪টি বিভাগে ছাত্রীরা প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।

এরমধ্যে ১৮টি বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান ছাত্রীদের দখলে। বাকি বিভাগগুলোতে ছাত্ররা প্রথম হলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান ছাত্রীদের দখলেই। শুধু স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় নয়, বিভাগের অন্য বর্ষের ফলাফলেও ছাত্রীরা শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।

এমনকি সব বিভাগের ফলাফলে শীর্ষ ১০ জনের অন্তত ৫ জনই ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক শাখার তথ্য মতে, চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৩৮ হাজার ২ শো ৩০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৫ হাজার ৫ শো ৭৯ জন ও ছাত্রী ১২ হাজার ৫ শো ৫১ জন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮টি বিভাগের ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৫৩টি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা ও নতুন ৫টি বিভাগের সর্বশেষ পরীক্ষার ফল মিলিয়ে ৩৪টি বিভাগে ছাত্রীরা প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ২৪টি বিভাগে ছাত্ররা প্রথম হলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান ছাত্রীদের দখলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি অনুষদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলা অনুষদের ১২টি বিভাগের ৮টিতে ছাত্রী ও ৪টিতে ছাত্র, আইন অনুষদের ২টি বিভাগের একটিতে ছাত্রী ও অন্যটিতে ছাত্র, বিজ্ঞান অনুষদের ৯টি বিভাগের ৫টিতে ছাত্রী ও ৪টিতে ছাত্র।

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ৫টি বিভাগের ৪টিতে ছাত্রী ও অন্যটিতে ছাত্র, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১০টি বিভাগের ৬টিতে ছাত্রী ও ৪টিতে ছাত্র, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ৭টি বিভাগের ৪টিতে ছাত্রী ও ৩টিতে ছাত্র।

কৃষি অনুষদের ৪টি বিভাগের ২টিতে ছাত্রী ও ২টিতে ছাত্র, প্রকৌশল অনুষদের ৬টি বিভাগের ২টিতে ছাত্রী ও ৪টিতে ছাত্র এবং চারুকলা অনুষদের ৩টি বিভাগের ২টিতে ছাত্রী ও অন্যটিতে ছাত্র প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।

সিনিয়র অধ্যাপকরা বলছেন, ছাত্রীরা তুলনামূলকভাবে ছাত্রদের চেয়ে পড়ালেখায় অধিক পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী। মেয়েরা স্বভাবসুলভ গোছালো এবং সৃজনশীল হয়। যে সময়টুকু ছাত্ররা অপ্রয়োজনীয় কাজে নষ্ট করে, ছাত্রীরা সে সময়টুকুতে পড়ালেখা করে।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশও নিশ্চিত করেছে। এসব কারণে তারা একাডেমিক ফলে এগিয়ে যাচ্ছেন। শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রে নয়, সহশিক্ষা কার্যক্রমেও ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। কর্মজীবনেও ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও এগিয়ে যাচ্ছেন।

ফিশারীজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফৌজিয়া এদিব ফ্লোরা বলেন, ছাত্রীদের ভালো ফলাফলের পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। তারা পড়ালেখায় ছাত্রদের তুলনায় বেশি মনোযোগী। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে নই, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায়ও ছাত্রীরা ভালো করছেন।

তিনি বলেন, বিভাগগুলোতে ভর্তি হওয়া ছাত্রীদের সংখ্যা অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রদের তুলনায় বেশি। ছাত্রীরা স্বভাবতই গোছালো। তারা একাডেমিক বই-নোটসহ অন্যান্য বিষয়ের যত্নশীল। তাছাড়া তাদের অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করার সুযোগ কম। ফলে স্বাভাবিকভাবে একাডেমিক ফলাফলেও ইতিবাচক পড়ছে।

জানতে চাইলে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ফলাফল বেশ ঈর্ষণীয়। কেবল পাঠ্যপুস্তকে নয়, তারা গবেষণাগারে কাজ করার ক্ষেত্রেও মনোযোগী। ভালো রেজাল্টের পেছনে রয়েছে তাদের শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতা।

উপ-উপাচার্য আরও বলেন, সামাজিক প্রেক্ষাপটে ছাত্রীদের একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। ফলে তারা অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট না করে পড়ালেখায় মনোযোগী হয়। তাছাড়া রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ও ছাত্রীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উৎসাহ দিচ্ছে। তাদের পড়ালেখায় আগ্রহী হওয়ার এটিও একটি কারণ।


শর্টলিংকঃ