রেশমাকে নতুন বই নিতে দিল না ঘাতক ট্রাক


নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে আনন্দ-উল্লাসে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল শিশু রেশমা আক্তার হিমুর (১০)। কিন্তু ঘাতক ট্রাক তাকে স্কুলেই পৌঁছতে দেয়নি।

সহপাঠীরা যখন নতুন বই হাতে স্কুল ক্যাম্পাসে আনন্দে মাতোয়ারা তখন হাসপাতালের লাশঘরে রেশমা।

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার কাঠগড় মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। রেশমার চাচা সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এবার সে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছিল। নতুন বই হাতে পাবে।

এ কারণে আনন্দের শেষ ছিল না। ট্রাকের চাকা তার ডান পায়ে উঠে পড়ে। হাসপাতালে নেয়ার সময় অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল আর বলছিল, ‘চাচা হাসপাতাল আর কতদূর, আমি তো আর সহ্য করতে পারছি না।’

হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ছোট্ট মেয়েটির এমন মৃত্যু কীভাবে সহ্য করবে তার বাবা-মা।

রেশমার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর তার স্কুল ক্যাম্পাসে পৌঁছার পর নতুন বইয়ের আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়। সহপাঠী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। হাসপাতালে তার মা-বাবা ও স্বজনের আহজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

এদিকে ঘাতক ট্রাকচালক ফেরদৌসকে আটক করেছে পুলিশ। তার ফাঁসির দাবিতে পতেঙ্গা এলাকায় মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। রেশমা চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার কাটগড় ধুমপাড়া এলাকার শাহনূরের মেয়ে। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্কুলছাত্রী রেশমার লাশ পড়েছিল চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের লাশঘরে।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেশমা নগরীর পতেঙ্গা মীলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নতুন বই আনতে নাইমা নামে আরেক সহপাঠীসহ স্কুলে যাচ্ছিল সে। রাস্তার ওপারেই তার স্কুল।

বাড়ি থেকে বের হয়ে কাঠগড় সি-বিচ রোড পার হওয়ার সময় একটি ট্রাক পতেঙ্গা মহিলা কলেজ মোড়ে রেশমার ছোট্ট পায়ের ওপর উঠে পড়ে। সহপাঠী নাইমাও ট্রাকের ধাক্কায় সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ট্রাকের চাকার নিচে রেশমাকে দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে নাইমা।

চালক ট্রাক থামিয়ে নেমে এসে রেশমাকে উদ্ধার করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠে। নাইমা এ খবর হিমুর পরিবারে জানালে চাচা সাইফুল, মনসুর ও ট্রাকচালক মিলে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান।

পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া দীপু যুগান্তরকে বলেন, হাসপাতাল থেকে ট্রাকচালক ফেরদৌসকে আটক করা হয়েছে। নিহতের পরিবার মামলা দিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওসি জানান, দিনমজুর বাবা শাহনূরের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রেশমা ছিল বড়।


শর্টলিংকঃ