লক্ষ্য সোয়া কোটি কর্মসংস্থান


ইউএনভি ডেস্ক:

করোনা মহামারীর মধ্যেও সোয়া কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ (দেশীয়) ৮৪ লাখ ২০ হাজার এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান ৩৫ লাখ। আগামী ৫ বছরে বিভিন্ন খাতে এসব কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

তবে গত ৫ বছরের তুলনায় এ সংখ্যা ১০ লাখ কম। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ায় এ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্জিত হবে ধরেই কর্মসংস্থানের এ প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। ৭ ডিসেম্বর ‘এমপ্লয়মেন্ট প্রজেকশন ফর এইট ফাইভ ইয়ার প্ল্যান পিরিয়ড’ শীর্ষক প্রাথমিক ধারণাপত্রটি তৈরি শেষ হয়েছে। সেটি যুগান্তরের হাতে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র) সচিব ড. শামসুল আলম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। তারপরই খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের স্থিতিস্থাপকতা কমার কারণেই লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ কমেছে। তবে স্থিতিস্থাপকতা কেন কমেছে সেটি বিবিএসই বলতে পারবে।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে ড. শামসুল আলম বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে করোনা মহামারী খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না। কেননা আশা করা হচ্ছে আগামী এক বছরের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তারপর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যতই বাড়বে ততই কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

জিইডির প্রক্ষেপণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী ৫ বছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ১ কোটি ১৯ লাখ। একই সময়ে লেবার ফোর্স তৈরি হবে ৭৮ লাখ ১ হাজার। ফলে বাড়তি কর্মসংস্থান হবে ৪১ লাখ ২০ হাজার। অর্থবছর ভিত্তিক দেখা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ২২ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে দেশীয় ১৫ লাখ ৮০ হাজার এবং বৈদেশিক ৭ লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরে কর্মসংস্থান হবে ২৩ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে দেশীয় ১৬ লাখ ২০ হাজার এবং বৈদেশিক ৭ লাখ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ লাখ ৮০ হাজার, এর মধ্যে দেশীয় ১৬ লাখ ৮০ হাজার এবং বৈদেশিক ৭ লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট কর্মসংস্থান ১৬ লাখ। এর মধ্যে দেশীয় ১৪ লাখ ২০ হাজার এবং বৈদেশিক ৭ লাখ। পরিকল্পনার শেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কর্মসংস্থান হবে ২৫ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে দেশীয় ১৮ লাখ ১০ হাজার এবং বৈদেশিক ৭ লাখ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মানে আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষাও বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। নতুন কর্মসংস্থানের যে লক্ষ্য ধরা হচ্ছে তা বাস্তবভিত্তিক নয়। কেননা করোনা ছাড়াও দেখা গেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের মিল নেই। অর্থাৎ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের সম্পর্ক কমে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আগামী ৫ বছরে এত কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

জিইডি সূত্র জানায়, গত ৫ বছরে (২০১৬-২০) সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মোট কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ। এর মধ্যে দেশীয় ১ কোটি ৯ লাখ এবং বৈদেশিক ২০ লাখ। পরিকল্পনা শেষে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ৯৫ লাখ। এর মধ্যে দেশীয় ৬০ লাখ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে ৩৫ লাখ। গত ৫ বছরে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ২৫ লাখ ৮০ হাজার। শিল্প খাতে ১১ লাখ ৫০ হাজার এবং সেবা খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২১ লাখ ৪০ হাজার।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য : অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত বছরে এ লক্ষ্য ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু করোনার ধাক্কায় গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শেষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য : অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পায় দেশের মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হবে।

বিনিয়োগের লক্ষ্য : পরিকল্পনায় বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থবছর ভিত্তিক লক্ষ্য হচ্ছে- চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে জিডিপির ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ বিনিয়োগ।


শর্টলিংকঃ