সংসদে অনির্ধারিত আলোচনা: বিশ্বকাপজয়ী যুবাদের প্লট-সম্মানী দেয়ার দাবি


বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে বিশ্বদরবারে লাল-সবুজের সম্মান বইয়ে এনে দেয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। আর বিজয়ী বীরদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবর্ধনা জানানোর পাশাপাশি প্লটসহ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সংসদে অনির্ধারিত আলোচনা: বিশ্বকাপজয়ী যুবাদের প্লট-সম্মানী দেয়ার দাবি

সোমবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় এই দাবি উঠে আসে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলার সুযোগ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। পরে গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আলোচনায় অংশ নেন।

মুজিবুল হক বলেন, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সারা দেশের মানুষ আনন্দিত। যুব বিশ্বকাপে আমাদের ছেলেগুলো পরিশ্রম করে যে দৃষ্টান্ত রেখেছে তাতে দুনিয়ার মানুষ আমাদের চিনতে পারছে।

বাঙালি জাতি বাংলাদেশের মানুষ সবাই এই ছেলেদের প্রকাশ্যে ঢাকা আসার পর গণসংবর্ধনা দেয়ার পক্ষে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাদের যথোপযুক্ত সম্মানী দিয়ে তাদের যেন সম্মানিত করা হয়।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, যুব বিশ্বকাপে আকবর বাহিনীর বিজয়ের মাধ্যমে ৪৯ বছরের আগের সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে। স্বাধীনতাযুদ্ধে যেভাবে পরিচিত ছিলাম সেইভাবে পরিচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাঙালিরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, বাঙালিরা এগিয়ে যাবে, বাঙালিরা কখনও মাথা নত করবে না।

আমরা প্রমাণ করেছি- এই উপমহাদেশে বাংলাদেশ হচ্ছে অগ্রগামী দেশ। আমরা যেমনভাবে এবার বিশ্বকাপ জয় করেছি, তেমনি ১৯৯৭ সালে আইসিসিতে জয়লাভ করেছিলাম। তাই আকবর বাহিনীকে সংবর্ধনা জানানো হোক।

তিনি আরও বলেন, আকবর বাহিনী, অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা যেভাবে সম্মান বয়ে এনেছে, তাই তাদের শিক্ষাজীবনের যাবতীয় খরচ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নির্বাহ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। তাছাড়া তাদের সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্লটসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এদিকে অনির্ধারিত আলোচনা শেষ হলেও রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ অধিকাংশ সদস্য যুব ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানান।

যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর পক্ষে ওয়াজকারী আজাহারী কীভাবে দেশ ছাড়ল : শরিয়ত বাউলকে আইসিটি আইনে গ্রেফতার করে জেলখানায় রাখা হয়েছে, অথচ সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর পক্ষে ওয়াজকারী মিজানুর রহমান আজাহারী কীভাবে দেশ ছাড়ল, তা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের দেশে শরিয়ত ও মারফতের দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। এখন সৌদি-পাকিস্তানি ও জামায়াতিদের ওহাবিবাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে এ ধরনের দ্বন্দ্বের সম্পর্কে যখন রাষ্ট্রীয় আইন ব্যবহার করা হয়, তখন তা উদ্বেগের বিষয়।

রাষ্ট্র কি অতীতের মতো আবার মৌলবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে? না হলে আজাহারী দেশ ছেড়ে যেতে পারে না। খতমে নবুয়ত নতুন করে হুংকার ছাড়তে পারে না। হেফাজত সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দিতে পারে না। এরাই ক’দিন পর পাকিস্তানি কায়দায় ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করতে বলবে, যেমন এই সংসদেই যুদ্ধাপরাধী নিজামী সেই প্রস্তাব তুলেছিল।

মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন- কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিলে আইন তার ব্যবস্থা নেবে। আমি এ সংসদে স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ইউটিউবে প্রচারিত ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি ও বিভাজনের কিছু বক্তব্যের পেন-ড্রাইভ দিয়েছিলাম। সেসবের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানা নেই।

তথাকথিত আলেমদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে : ইসলামের নামে অপপ্রচারকারীদের সম্পর্কে ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরও সচেতন থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেছেন, যারা এগুলো করছে তাদের তালিকা করে রাষ্ট্রীয় আইনানুগ ব্যবস্থা হওয়া বাঞ্ছনীয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান।

পাঁচ বছরের মধ্যে সব এমআরপিকে ই-পাসপোর্টে রূপান্তর করা হবে : সংসদে বেগম শামসুন নাহারের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান বলেন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এবং ই-পাসপোর্ট আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভ্রমণদলিল। বাংলাদেশ বিশ্বে ১১৯তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন করেছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব এমআরপিকে ই-পাসপোর্টে রূপান্তর করা হবে।

মন্ত্রী জানান, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এবং ই-পাসপোর্ট যুগপৎভাবে চলমান থাকবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঢাকার তিনটি অফিস; ঢাকার বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, উত্তরার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এবং যাত্রাবাড়ীর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে ১৮ মাসের মধ্যে সব বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস এবং আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসসমূহে ই-পাসপোর্ট চালু করা হবে।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে : রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এর রায় বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দ্রুতই মিয়ানমার তাদের ফেরত নেবে বলে আশা করছি।

মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, যে কোনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াই জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি। রাখাইন রাজ্যে যথাযথ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলকে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারকে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ শিগগির রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে এবং দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।


শর্টলিংকঃ