সিন্ডিকেট ভেঙ্গে প্রকৃত কৃষকদের ধান ক্রয় করলেন ইউএনও


নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর :

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় খাদ্য গোডাউনগুলো বরাবরই দখলে থাকে প্রভাবশালীদের কাছে। সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে খাদ্যশস্য ক্রয় করার জন্য ঘোষণা দিলেও রাজনৈতিক নেতাদের চাপে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের।

ফলে সরকারি উদ্যেশ্যও বাস্তবায়ন হয় না, শস্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত থাকে সাধারণ কৃষকরা। তবে এবার সেই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সরাসরি প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করলেন নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জেসমিন আকতার বানু।

এ কার্যক্রমে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম প্রকৃত কৃষক নিশ্চিত করে দেন এবং গোডাউনের খাদ্য কর্মকর্তারা ধান সংগ্রহ করেন।

এ সময় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শফিকুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত গোডাউন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। ধান ক্রয়ের প্রথম দিনে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে তিনটন ধান ক্রয় করা হয়।

এ সময় বুড়িবটতলা এলাকা থেকে আসা কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, চার বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৭৫মন। কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে দাম পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা মন। এতে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ইউএনও স্যার এর মাধ্যমে একটন ধান গোড়াউনে দিতে পেরেছি। এতে আমি মন প্রতি দাম পেয়েছি এক হাজার টাকার বেশি। আমার কিছুটা হলেও লোকসান কমিয়ে আসবে। তবে এইভাবে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হলে দাম এমনিতে বেড়ে যাবে।

কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর নাটোর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬১হাজার ৪৩৫হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। যা থেকে ৪লাখ ১৪হাজার ৬৮৬মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

তবে এত পরিমানে ধান উৎপাদন হলেও নাটোরের সাতটি উপজেলায় এবার মাত্র ২হাজার ১১৫মেট্রিকটন সংগ্রহ করবে খাদ্য বিভাগ। এর মধ্যে নাটোর সদরে মাত্র ৯৪মেট্রিকটন।

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মেহেদুল ইসলাম বলেন, কৃষি কার্ডের মাধ্যমে আমরা প্রকৃত কৃষক নির্বাচন করবো। এক্ষেত্রে আমার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের কাজে লাগাতে পারি। তারা প্রকৃত কৃষকদের নির্বাচন করে দিলে তার কাছ থেকেই ধান ক্রয় করা হবে।

কোন কৃষকের যদি ধানে আদ্রতা বেশি থাকে, সে পরে ধান শুকিয়ে সঠিক আদ্রতায় দিতে পারবে। প্রতিদিন একটি ইউনিয়ন করে আমরা ধান ক্রয় করবো। এতে করে কৃষক লাভবান হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আকতার বানু বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশক্রমে আমরা সরাসরি প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ শুরু করেছি। একজন কৃষক এক থেকে সবোর্চ্চ দেড়টন ধান দিতে পারবেন। এতে করে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং বাজারে ধান সংগ্রহের প্রভাব পড়লে অন্য কৃষকরাও ন্যায্য মূল্য পাবে।

ইউএনও জেসমিন আকতার বানু আরও বলেন, আমরা গোডাউনে কোন ধান ক্রয় করবো না। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ধান ক্রয় করবো। এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোন কৃষকের ধান রয়েছে, সেটা নিশ্চিত করবে।

এরপর ধানের আদ্রতা মেপে ক্রয় করার মতো হলে ওই কৃষকের ধান ইউনিয়ন ক্রয় সেন্টারেই দিতে পারবে। আগামীকাল বা পরশুদিন থেকে আমরা এই কার্যক্রম শুরু করবো।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শফিকুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে আগে ধান ক্রয় করতে হবে। সে জন্যই আজ থেকে আমরা ধান ক্রয় অভিযান শুরু করেছি।

প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে যাতে ধান ক্রয় করতে পারি সেজন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আশা করছি ধান ক্রয় অভিযানের সাথে সাথে বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবে।


শর্টলিংকঃ