‘সুবিধাবাদী’দের প্রবেশ সহযোগী সংগঠনে


ইউএনভি ডেস্ক:

ক্ষমতার সুবিধা নিতে বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে প্রবেশের লাইন ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। আর তাদের সুযোগ করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা।

তাদের অভিযোগ, সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্য দিয়েই সুবিধাবাদীরা বেশি অনুপ্রবেশ করছে। এতে বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী বা স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্যরাও চোখের পলকে আওয়ামী পরিবারের সদস্য হয়ে যাচ্ছেন। বাগিয়ে নিচ্ছেন পদ-পদবিও।

এ বিষয়ে রোববার বিকালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান  বলেন, আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। আওয়ামী লীগে বা সহযোগী সংগঠনে জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যদের নেয়া হবে না। হয় তো দু-একটা জায়গায় এমনটা হয়ে থাকতে পারে।তবে এ বিষয়ে প্রতিবেদন এলে ব্যবস্থাও নিচ্ছি। সহযোগী সংগঠনগুলো তো আওয়ামী লীগের বাইরে আলাদা কোনো নিয়মে চলতে পারে না। সুতরাং তাদের (সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের) আওয়ামী লীগের নিয়ম মানতে হবে।

জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ১০ বছরের বেশি সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অনেক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তবে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কত সংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকর্মী ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন তার কোনো সঠিক হিসাব নেই।

তবে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্য দিয়ে তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে। মূল দল আওয়ামী লীগে কিছুটা কড়াকড়ি থাকায় মূলত সহযোগী সংগঠনগুলোকে তারা প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, নির্দেশনা থাকলেও বিষয়গুলো (আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ) থেমে নেই। বিশেষ করে সহযোগী সংগঠনগুলো আরও বেশি সুযোগ করে দিচ্ছে সুবিধাবাদীদের। সহযোগী সংগঠনের নেতারা নিজেদের সুবিধার জন্যই মূলত অন্য দল থেকে আসা লোকজনকে জায়গা করে দিচ্ছেন। আবার ভালোভাবে দেখছেনও না তারা কোথা থেকে আসছে বা কেন আসছে। পৃথক সংগঠন হওয়ায় জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদেরও এ বিষয়ে কিছু করার থাকে না। আবার কেন্দ্র থেকে এগুলো সব সময় জানাও সম্ভব হয় না।

জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশ নিয়ে গত মাসে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ বর্ধিত সভায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সুবিধাবাদীদের কারণে দলে কী কী সমস্য হচ্ছে তা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় তুলে ধরে দ্রুত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

সভায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের এখানে যুব মহিলা লীগ ও কৃষক লীগ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। যারা কোনো দিনও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। বরং যারা আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতাবিরোধী তাদের পরিবারের সদস্যদের (সহযোগী সংগঠনে) স্থান দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রকে অবহিতও করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

একই বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক বলেন, সহযোগী সংগঠগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আরেকটি সংগঠনের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করা হয়েছে। অন্য সংগঠনগুলোর কমিটি কেন্দ্র থেকে ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এ সংগঠনগুলো নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে আমাদের পড়তে হয়। কমিটি নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্র। আরেকটি সবচেয়ে খারাপ বিষয় হল- আওয়ামী লীগে ঢোকার কোনো যোগ্যতা ও নিয়ম নেই। বিভিন্ন সময় কেন্দ্র থেকে কমিটিগুলো করে দেয়া হয়। ফলে তারা কাজ করে নিজেদের মতো। তবে কেন্দ্রীয়ভাবেও সহযোগী সংগঠনে বিএনপি-জামায়াত বা যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রবেশ ঘটছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর রোববারের বৈঠকেও এ বিষয়ে সমালোচনা হয়েছে। বৈঠকে কৃষক লীগের বিরুদ্ধে পদবাণিজ্য, প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের কমিটিতে জায়গা দেয়াসহ নানা অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সভায় উপস্থিত দলের একাধিক সূত্র বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে।বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান প্রথমে এ বিষয়ে কৃষক লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।

সভায় কৃষক লীগের কাজ এবং দেশের বাইরেও তাদের কমিটির বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কৃষি কাজে সম্পৃক্ত নন এমন বহু ব্যক্তিকে কৃষক লীগে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অথচ কৃষকের দুর্দিনে কৃষকের পাশে তাদের কখনও দেখা যায়নি। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি সবেচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় সদস্য মির্জা আজমসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কৃষক লীগের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সমর্থন করেন এবং তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন। এ সময় সবাইকে থামিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজের বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে সহযোগী ও অঙ্গ-সংগঠনের সম্মেলন শেষ করার বিষয়েও সভায় আলোচনা করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

মে মাসে ঘোষিত ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ‘বিতর্কিত’দের স্থান দেয়া নিয়ে ছাত্রলীগেরই একাংশের নেতারা অভিযোগ তোলেন। ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া ৯৯ জনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত এবং যুদ্ধাপরাধী বা স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। পদপ্রাপ্ত ১৭ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ পাওয়ার কথাও স্বীকার করেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এর মধ্যে অন্তত দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল- মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী আদর্শ ধারণ এবং তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার অভিযোগ। কৃতজ্ঞতা- যুগান্তর


শর্টলিংকঃ