স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও কমেনি নারী বৈষম্য


নিজস্ব প্রতিবেদক :

স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও নারীদের উপরে কমেনি বৈষম্য। নারীরা বিভিন্নক্ষেত্রে বৈষম্যের জাঁতাকলে প্রতিনিয়তই পৃষ্ট হচ্ছে। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই বৈষম্যের শিকার হন তারা। এর মধ্যে বেশিরভাগই বৈষম্যের শিকার হন কর্মক্ষেত্রে।

তবে অন্যান্য বৈষম্য না কমলেও মজুরি বৈষম্য থেকেও বের হওয়া যায়নি। স্বাধীনতার এতো বছরেও এই বৈষম্য থেকে বের হতে পারেনি আমাদের দেশ। মজুরি বৈষম্য নিয়েই আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

দেশ স্বাধীনের প্রায় ৪৮ বছর পরও পদে পদে বৈষম্যের শিকার নারীরা

যদিও সাংবিধানিকভাবে নারী-পুরুষের সমান সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। এ অধিকার নারীদের ক্ষেত্রে এখনও কার্যকরী হয়নি। নারীরা পুরুষের মত কর্মস্থলে ৮ ঘন্টা কাজ করছেন। কিন্তু মজুরির পাচ্ছেন পুরুষের তুলনায় অর্ধেক। তাহলে পুরুষের সমান কাজ করে, কেনো নারীরা কম মজুরি পাবে? এমন প্রশ্ন তুলছেন নারীরাই।

কথা হয় শ্রমজীবী এক দম্পতির সঙ্গে। এদের একজন তাহসিনা বেগম। তার স্বামীর নাম সেলিম হোসেন। তারা নগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা। দুইজনেই পবার নারকেলবাড়িয়া এলাকার আমান নামের একটি জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করেন। তারা সারাদিনের মধ্যে আট ঘন্টা শ্রম দেন। এ শ্রমে পারিশ্রমিক হিসেবে সেলিম ২৮০ টাকা পায়। আর তার স্ত্রী পায় তাহসিনা বেগম ১৮০ টাকা।

একই কাজ, তারপরও মজুরি কম এমন প্রশ্নের উত্তরে তাহসিনা বেগম বলেন, ‘আমরা প্রায় এক বছর ধরে এই মিলে কাজ করছি। এখানে মেয়েদের বেতন একটু কম ছেলেদের তুলনায়। তারা মেয়েদের কম বেতন দিয়ে কাজ করায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের হালকা কাজগুলো করিয়ে নেয়। ছেলেরা বস্তার কাজ করে। মেয়েরা বস্তা বাধার হালকা কাজগুলো করে। তাই মেয়েদের বেতন মজুরি কম। যেহেতু একই কাজ তাই সমান বেতন দেওয়া উচিত।

এদিকে, পদ্মা নদীতে মশুরের ডাল তোলার কাজ করছে ২০ থেকে ২৫ জন পুরুষ শ্রমিক। সঙ্গে চারজন নারীও রয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বাড়ি পবার দামকুড়ার মেদাবাড়ি এলাকায়। এর মধ্যে চারজন নারীই আদিবাসী।

পদ্মা চরে কাজ করতে আসা আশা সুশান্ত কুমার বলেন, তারা খুব সকালে ভটভটিতে করে এখানে কাজে আসেন। একইসঙ্গে নারীরাও আসে। তারা সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পুরুষদের সঙ্গে কাজ করে। ছেলেরা মজুরি পায় ৩৫০টাকা। আর নারী শ্রমিকরা পায় ৩০০ টাকা।

আদিবাসি নারী লাইলী (৩৫) বলেন, ‘বাবার সংসার থেকেই আমি কৃষিকাজ করি। বিয়ে হওয়া পরে স্বামী চলে গেছে ২২ বছর হলো। এখনও কৃষি কাজ করি।’

পুরুষদের চেয়ে মজুরি কম দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মালিকরা বলে মেয়েরা সব কাজ করতে পারে না। পুরুষরা শক্তিশালী কাজ করে, তাই তাদের বেশি মজুরি দেয়া হয়।

একই সঙ্গে কাজ করে পুরুষদের তুলনায় টাকা কম পাওয়া নিয়ে লাইলী বলেন, ‘অনেক খারাপ লাগে। ছেলেরা যে পরিমাণের কাজ করে। আমরাও সেই কাজ করি। কিন্তু ছেলেদের থেকে তাদের (নারী) মজুরি টাকা কম দেয় মালিকরা।’

স্বেচ্ছাসেবী বহুমুখী মহিলা সমাজ কল্যাণ সমিতি (এসবিএমএসএস) এর নির্বাহী পরিচালক নূর-এ-জান্নাত বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থাপনায় নারীরা এখনও বৈষম্যের শিকার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাপনায় নারীদের পদে পদে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছে নিজের দক্ষতায়। কিন্তু নারীদের সেইভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। যেখানে নারীরা কাজ করে জনপ্রতি ২০০ টাকা পায় সেখানে পুরুষরা পায় ২৫০ থেকে পৌনে ৩০০ টাকা। এ সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।


শর্টলিংকঃ