কফিন নৃত্যের অজানা কাহিনী


বিপাশা আনজুম ঊষা:

সোসাল মিডিয়ায় মিমবাজদের কল্যাণে কফিন নিয়ে নৃত্য এখন আর কারই অপরিচিত নয়। কিছু একটা ভুল হয়েছে অথবা দায়িত্বশীল কোন ব্যাক্তি অপেশাদার কথা বলেছে; আর যাবে কোথায় মিমবাজরা সেই ভিডিও কেটে জুড়ে দিয়েছে এই মিউজিক। আর সেগুলো ভাইরাল সব সোসাল মিডিয়ায়। শুধু কি সোসাল মিডিয়ায় ? না এগুলো শিরোনাম হয়েছে বিশ্বজুড়ে নানান গণমাধ্যমে।

আমরা সবাই কফিন ড্যান্সের ভিডিওটি দেখে অভ্যস্ত। কিন্ত আসল মিউজিক আর কফিন নিয়ে নাচের মূল ব্যাপারটা হয়ত অনেকেই জানি না।আজ আমরা এই মিউজিক আর কফিন নিয়ে নাচের আসল বিষয়গুলি আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

প্রথমে আসি দুনিয়াজুড়ে ভাইরাল হওয়া সেই মিউজিকে। এটি আসলে ২৯ বছর বয়সী ইয়াতিলিয়ান ডিজে স্টিফানো ফোগাট্টি ‘র রিমিক্স মিউজিক। তাকে অনেকে ডিজে ফোলি, ড্যান্স রকার আর স্টিফেন এফ নামেও চেনেন। তার অনেকগুলি মিউজিক এলবাম কিন্তু ভাইরাল হয়েছে বেশ আগেই। তবে সবচাইতে বেশি ভাইরাল এই অ্যাস্ট্রোনোমিয়া। অনেকেই হয়ত তার অন্য কোন মিউজিক খুব একটা শোনেন নি। আপনারা চাইলে সাউন্ড ক্লাউডে শুনে নিতে পারেন সেই রিমিক্সগুলো।


শেষ যাত্রা হোক মনে রাখার মতো- এই নীতিতেই বিশ্বাস করেন ঘানার বাসিন্দারা। তাঁদের বিশ্বাস জীবনের শেষ দিনটি দুঃখের হলেও তা মৃত ব্যক্তির জন্য স্মরণীয় করে রাখা প্রয়োজন। মৃত্যুর পরে তাই সবাই মিলে তাঁকে ঘিরে আনন্দ করেন। আর এই বিশ্বাস আজকের নয়। বহুযুগ ধরে ঘানার বহু স্থানের প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ এটি। প্রিয়জনের শেষ যাত্রায় আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার। সেখানে অংশ নেন পরিবার, পরিজন ও গ্রামবাসীরাও।

আর সে অনুষ্ঠানে কফিন বয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে থাকেন একদল পেশাদার কফিন নাচিয়ে। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এই নাচিয়ে কফিন বাহকরা স্যুট-বুট, আর সানগ্লাস পরে এসে পারফর্ম করেন । এসব অনুষ্ঠানে সাধারণত দুঃখের কিছু সুর বাজানো হত আর কফিন বাহকেরা পরত কালো রঙয়ের পোশাক। তবে এ রীতিতে সম্পূর্ণ পরিবর্তন আনলেন বেঞ্জামিন এইডও নামের এক যুবক। তার মতে পৃথিবীতে সব কিছু এখন কাস্টমাইজ করা হচ্ছে। আর মানুষের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানেও এটার সুযোগ থাকা উচিত।

এইডও হুট করেই একদিন জানিয়ে দিলেন, তার দল মৃত ব্যাক্তি অথবা তার স্বজনদের পছন্দের গান বাজিয়ে কফিন নৃত্য করবে। হইচই পড়ে গেল দেশব্যাপী। শুধুকি তাই ? বিবিসি, আল জাজিরা সহ বিশ্বের বাঘা সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হলেন এইডও।  শুধু শিরোনাম নয়, রাতারাতি বেড়ে গেল তার হাউজের কাজ। সারা ঘানা থেকে আসতে শুরু করল কাজের অর্ডার। এমনকি মৃত্যুর আগেই বুকিং দেওয়া শুরু করেলেন অনেকে।

কেউ কেউ আবার এক কাঠি সরেস। শুধু পছনের গান নয়। কী পোশাক পরতে হবে তার শেষকৃত্যের কফিন নৃত্যে, সেটারও অগাম ফরমায়েশ দিয়ে বুকিং করে রেখেছেন এইডও’ র কাছে। তবে এইডও কম যান নি । তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পোশাক যত দামি ফিটাও সেরকম বাড়বে।

দীর্ঘদিনের এই প্রথা ভেঙ্গে এই বিপুল জনপ্রিয়তাকে ভাল চোখে দেখেনি অনন্য প্রতিষ্ঠানগুলি। তারা ক্ষোভের সাথে বলেছে – আমরা এই জিনিস কখনও দেখিনি, এটাকে আমাদের প্রথা বলে চালানোর কোন সুযোগ নেই। তবে এইডও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কে কি বলছে সেটা ব্যাপার না। মানুষের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে যত বাঁধাই আসুক না কেন তিনি তার কাজ করে যাবেন।  এইডও’র এই উদ্যোগ কার কেমন লাগল সেটা নিয়ে তিনি মোটেই ভাবেন না। তার কল্যানে কিছু মানুষের শেষ ইচ্ছা পুরন হচ্ছে এটাই বড় বিষয়।

ভিডিও দেখুন এখানে 

 


শর্টলিংকঃ