কৃষকের সংকট উত্তরণে বিএনপির ৯ দফা


ইউএনভি ডেস্ক :

ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ কৃষকের সংকট উত্তরণে ৯ দফা দাবি পেশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার (২৫ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকার ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কৃষককে কমপক্ষে ৩ মাসের জন্য সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে প্রদান করা। যেমন— কোনো ক্ষুদ্র চাষি ৫০ মণ ধান উৎপাদন করলে তাকে ৫০ মণ ধানের বিপরীতে ৫৬,০০০/-টাকা ধার দেওয়া।

৩ মাস পর কৃষক তার ধান বিক্রি করে ধার পরিশোধ করবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদারকির মাধ্যমে সঠিকভাবে ক্ষুদ্র চাষিকে চিহ্নিত করে এই কাজ করতে পারে সরকার। এতে কৃষকরা বর্তমান অবস্থা হতে পরিত্রাণ পাবে।

সরকারি পর্যায়ের ধান চাল গুদামজাত করার ক্ষমতা প্রায় ২১.৮ লাখ মেট্রিক টন। এই ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে বেশি পরিমাণে ধান ক্রয় করতে হবে। কৃষকদের সহায়তা দিতে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বেসরকারি গুদাম ভাড়া করে সেখানে ধান চাল সংগ্রহ করা যেতে পারে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতা বাড়িয়ে অধিক পরিমাণ চাল বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেন কৃষকের বাড়তি উৎপাদনের সদ্ব্যবহার করা যায়।

কৃষকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হবে। যা দিয়ে সরকার অতিরিক্ত প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ বা ক্রয় করতে পারবে। কৃষকদের হয়রানি কমিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কিনতে হবে।

প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র কৃষকরা উৎপাদন মৌসুমে অর্থের প্রয়োজনে তার ধান সস্তায় বিক্রি করে এবং কিছু দিন পর আবার নিজে বেশি দামে ক্রয় করে বাজার থেকে চাল কিনে খায়। সে কারণে প্রান্তিক চাষি ও ক্ষেত মজুরদের জন্য বিশেষ সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ধান চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অসৎ কর্মকর্তাদের জড়িত করা যাবে না এবং অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সরকারের দলীয়করণের কারণে খাদ্য বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি চাল কিনতে ৩ থেকে ৫ টাকা করে ঘুষ নিচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের পকেট ভারি করার জন্য তাদের ধান কেনার অনুমতি দিয়ে সরকার কৃষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে- এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশে ধান উৎপাদন সম্পর্কে সরকার মিথ্যাচার করছে। সরকার বলছে দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন, অথচ প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করছে। সরকার জনগণের সাথে মিথ্যাচার করে আসল সত্যকে আড়াল করছে- এগুলো বন্ধ করতে হবে।

মৌসুমের আগেই ধানের সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করতে হবে এবং সংগ্রহ মূল্য অবশ্যই উৎপাদন খরচের চেয়ে যৌক্তিক পরিমাণে বেশি ধরতে হবে।

সরকারের ভুল নীতির কারণে কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শ্রমিকের কষ্ট লাঘব ও কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীন কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে।

দেশের হাওর ও দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় ৫০-৭০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিয়ে প্রকৃত কৃষকদেরকে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য ছিল এ প্রকল্পটির।

‘কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সরকারের দলীয়করণ ও দুর্নীতির কারণে এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে সরকারের দলীয় লোকজন। কিন্তু প্রকৃত কৃষক এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে’- অভিযোগ বিএনপি মহাসচিবের।

তিনি বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও অদূরদর্শীতার কারণে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষি আজ ধ্বংসের মুখে। ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষক। এর সুদূরপ্রসারী পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।

জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি কৃষি খাতকে একটি আধুনিক ও টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচনে মাধ্যমে জনগণের সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহবায়ক শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালামসহ অন্যরা।


শর্টলিংকঃ