বিএসএফের দ্বৈতনীতি: গরু পাচারকারীরা এখন মাদক পাচারে জড়িত


ইউএনভি ডেস্ক: 

বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) দ্বৈতনীতি গ্রহণ করেছে। গরু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিএসএস কঠোর পন্থা নিলেও মাদক পাচারকারীদের তারা এক ধরনের সহযোগিতা করছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তে গবাদিপশু পাচার ঠেকাতে বিএসএফের কঠোরতায় এক বছরে গবাদিপশু আসা প্রায় বন্ধ রয়েছে। কিন্তু অস্ত্র ও মাদক পাচার রোধে বিএসএফের কোনো ভূমিকা নেই।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিএসএফের বিরুদ্ধে মাদক পাচারে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। ফলে আগে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গরু-মহিষ পাচার করত, এখন তারা মাদক পাচারে জড়িয়ে পড়েছে।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেছেন, সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলগুলোয় ফেনসিডিল, ইয়াবা ও অস্ত্র পাচারকালে বেশকিছু ট্রাক চালান আটক করেছে র‌্যাব-৪ এর একাধিক টিম। আটক ব্যক্তিদের অধিকাংশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা। অস্ত্র ও মাদকের চালানগুলোও এসব সীমান্ত এলাকা থেকে ঢাকা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের বিভিন্ন মাদক স্পটে নেয়া হয়।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট সীমান্তপথে বিপুল সংখ্যায় গরু-মহিষ এসেছে। তবে বছরখানেক বিএসএফ বাংলাদেশে গবাদিপশু পাচার বন্ধে গুলিচালনাসহ কঠোর পন্থা অবলম্বন করছে। এতে সীমান্তের দুই পারেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ফলে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। তাদের একটি অংশ এখন সীমান্তপথে মাদক পাচারে নেমে পড়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের তারাপুর সীমান্তের মামুন রশিদ জানান, ভারত থেকে একজোড়া গরু-মহিষ আনতে পারলে সময় ও স্থানভেদে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাওয়া যেত। আগে বিএসএফ ও বিজিবিকে ম্যানেজ করে আনা হতো গরু। সীমান্তের দুই পারে দামের বিশাল পার্থক্য থাকায় গরু ব্যবসায়ও লাভের অঙ্ক বড় ছিল। এখন গরু-মহিষ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় দুই পারের সীমান্তের শত শত মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা এসব লোককে সীমান্তে মাদক পাচারে জড়িয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের তেলকুপি সীমান্তের সফিকুল ইসলাম বলেন, গরু আনতে গিয়ে বিএসএফের গুলি খাওয়ার বড় ঝুঁকি থাকলেও মাদক পাচারে সেই ঝুঁকি কিছুটা কম। কাঁটাতারের বেড়ার ওপার থেকে মাদকের পুঁটলি বা বস্তা ছুড়ে দিলেই এপারে অপেক্ষমাণ পাইট (বহনকারী) কুড়িয়ে নিয়ে নির্বিঘ্নে নিরাপদে চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিএসএফ কাছে টহল দিলেও ওই প্রান্তে মাদক পাচারকারীদের বাধা দিচ্ছে না। সীমান্তে মাদক পাচারের কর্মটি গভীর রাতেও যেমন চলছে, দিনের বেলায়ও হচ্ছে। তবে মাঝেমধ্যে বিজিবির টহল দলের হাতে মাদকের চালান আটকের ঘটনা ঘটে। এভাবে সীমান্তে নির্বিঘ্নে মাদক পাচারে বিজিবির সোর্সরা লাইন ক্লিয়ার রাখার দায়িত্ব পালন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চারঘাট, বাঘা ও পবার অন্তত ১০টি পয়েন্ট দিয়ে ফেনসিডিল ও ইয়াবা পাচার চলছে বলে সীমান্তের সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে। গোদাগাড়ীর বগচর, কোদালকাটি, প্রেমতলী, চর আষাড়িয়াদহ সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়েও রাতের আঁধারে কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে বস্তা বস্তা ফেনসিডিল পাচারের পাশাপাশি হেরোইন পাচারও বেড়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়। আগে যারা গরুর ব্যবসা করত, এখন তারা মাদক পাচারে জড়িয়ে পড়েছে।

বিএসএফ এসব সীমান্তে গরু পাচার ঠেকাতে ঘনঘন অস্থায়ী চৌকি বসালেও মাদক পাচারে বাধা না দেয়ায় ভারতীয়রা সন্ধ্যা হলেই মাদকের চালান নিয়ে কাঁটাতারের ওপারে অপেক্ষায় থাকে। অন্ধকার হলেই বেড়ার ওপর দিয়ে মাদকের চালান এপারে ফেলে দিচ্ছে। মাদকের সঙ্গে অস্ত্রেরও চালান আসছে বলে স্থানীয় লোকজন নাম প্রকাশ না করে জানায়। এ বিষয়ে বক্তব্য পেতে বিজিবির রাজশাহী অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার ফোন দিলেও তারা ফোন ধরেননি। এসএমএস দিয়ে কথা বলার অনুরোধ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি হাফিজ আক্তার বলেন, সীমান্তপথে ভারত থেকে অধিকাংশ মাদক আসে। তবে মাদক পাচার রোধে পুলিশ জিরো টলারেন্সে থাকায় রাজশাহী অঞ্চলে মাদকের প্রকোপ কমেছে। আগামী দিনেও মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতিরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

সুত্র: যুগান্তর


শর্টলিংকঃ